১ জুন ২০২৪, শনিবার

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় যে, “বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিকতাবাদী শিক্ষা নীতি চালু করে দেশের জনগণের ঈমান-আক্বিদা ধ্বংস করার জন্য বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ষড়যন্ত্র করে আসছে। এ দেশের জনগণ কখনো বিজাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে না।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করছে যে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারও দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ইসলামী শিক্ষা ও জনগণের ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করার যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে আসছে তা অবশ্যই ব্যর্থ হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড কোনো জাতিকে একটি উন্নত সভ্য জাতিতে পরিণত করতে হলে সর্বাগ্রে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিক ও আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশে সৎ, যোগ্য, অভিজ্ঞ মানুষ গড়ে উঠবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ-আত্মসাৎ, হত্যা, ধর্ষণ চলছে এবং হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্যের ছোবলে যুবক-যুবতীরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার মূল কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তিলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী নৈতিকতাহীন শিক্ষা নীতি। মানুষ গড়ার কারিগর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রীদের ধর্ষণ করছে এবং ইয়াবা, মদ, গাঞ্জা, হেরোইন খাচ্ছে, দুর্নীতি করছে।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের নতুন প্রজন্মকে নৈতিক, আদর্শিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে সৎ, যোগ্য, নীতি ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তাহলেই একজন ছাত্র বা ছাত্রী কর্মজীবনে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

একজন আদর্শবান মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতি-নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশ এবং জাতির খেদমত করে ইহকাল ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, বর্তমান সরকার শুধু আধুনিক শিক্ষাকেই ধ্বংস করছে না, মাদ্রাসা শিক্ষাকেও ধ্বংস করছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো শুধু মাদ্রাসা নামের ঘর থাকবে, সেখানে ইসলামী শিক্ষা বলে কিছু থাকবে না। সে জন্যই মাদ্রাসাগুলোতে বিধর্মী ও বিজাতীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতেও নাচ, গান, অভিনয়, ঢোল, তবলা ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রাণির ছবি আঁকা ও মূর্তি বানানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দিয়ে বাউল গান, মাজার পূজা ইত্যাদি শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন, ছাত্র-ছাত্রীদের পরস্পরকে চুমা দেয়ার সংস্কৃতি, সালামের পরিবর্তে গুড মর্নিং ও গুড ইভিনিং বলা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। রাধা-কৃষ্ণ, চণ্ডিদাসের প্রেমকাহিনী ও শ্রী চৈতন্যের দর্শন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের হালাল-হারামের বিধান ভুলিয়ে দিয়ে পৌত্তলিকতা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার প্রমোট করে তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়াদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে সমকামিতা চালু করা হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের এসব পৌত্তলিকতা মিশ্রিত বিজাতীয় শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”