১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৭:৩৯

সংশোধিত এডিপি

বরাদ্দ বাড়ছে রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে

৯ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯৭০৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব

বরাদ্দ বাড়ছে দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বরাদ্দ দেওয়া আছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সংশোধিত এডিপিতে ৭০৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এনইসি (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) বৈঠকে সংশোধিত এডিপি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পরিকল্পনা কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথমদিকে এএমএস সফটওয়্যারে এ প্রকল্পের জন্য চাওয়া হয় ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭০৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং রাশিয়ার ঋণ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়। এ হিসাবে বর্তমান এডিপি বরাদ্দ থেকে কম চাওয়া হয় ২৯৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু পরে হিসাব কষে দেখা যায়, প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাড়তি টাকার প্রয়োজন। ফলে আগের প্রস্তাব সংশোধন করে সংশোধিত এডিপিতে ৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৯ হাজার টাকা চাওয়া হয়।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কোভিড মহামারিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ দেরি হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্প উৎপাদনে আসতে পারে। তবে বর্তমান ঋণ পরিশোধের জটিলতা এখনো পুরোপুরি কাটেনি বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে কিস্তির টাকা জমা রাখা হচ্ছে।

বাড়তি বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি এখনো আমার কাছে পর্যন্ত আসেনি। তবে সংশোধিত এডিপি তৈরির ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না। তারা যদি খরচ করতে পারে তাহলে তাদের চাহিদামতো আমাদের বরাদ্দ দিতে কোনো সমস্যা নেই। প্রয়োজন অনুসারে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তেমন কোনো অর্থের সংকট নেই। আমরা ছোট-বড় সব প্রকল্পেই অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছি।

সূত্র জানায়, একই চিঠিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে হাতে নেওয়া আরও দুটি প্রকল্পের বরাদ্দ চেয়েছে। এগুলো হলো, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে সংশোধিত এডিপিতে মোট চাওয়া হয়েছে ১৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে এর আগে প্রকল্পটির জন্য চাওয়া হয়েছিল ১৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রাথমিক চাহিদার তুলনায় সংশোধিত চাহিদা কমেছে ৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়া বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অফসাইট পানি সরবরাহের সুবিধাদি স্থাপন’ প্রকল্পের জন্য। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে কোনো বরাদ্দ ছিল না। সংশোধিত এডিপিতে চাওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বিষয়ে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকীর সঙ্গে। মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি তো বেশ আগেই শিল্প শক্তি বিভাগ থেকে এসেছি। তাই আপডেট তথ্য জানা নেই। তবে সম্ভবত ডলারের ওই সমস্যাটি এখনো মেটেনি। বিষয়টি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তাই আমি বলতে পারছি না।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. আব্দুল মোমিন বলেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে আমাদের কাছে বরাদ্দের চাহিদা আসে। আমরা সেটি ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দিই। সাধারণত ঠিকাদারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই বাস্তবায়নকারী সংস্থা আমাদের কাছে চাহিদা পাঠায়। এডিপি থেকে আরএডিপিতে বরাদ্দ কমা বা বাড়াটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/774114