১ মে ২০২৪, বুধবার, ১১:২৪

হিটস্ট্রোকে ঝরছে প্রাণ

টানা দাবদাহের মধ্যে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। মঙ্গলবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও এদিন রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গতকাল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে ঢাকার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরমজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়েছে।

সরকারি হিসাবে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ জন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীও বাড়ছে।

৫২ বছরের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে: দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার বিকালে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ৫২ বছরের মধ্যে এটিই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে পরিস্থিতি এই অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে এই রেকর্ডও অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল এই জেলায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং চুয়াডাঙ্গার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, জেলার ইতিহাসে এত তাপমাত্রা কখনো রেকর্ড করা হয়নি। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে গতকাল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে রাজশাহীতেও। দিনের এই তাপমাত্রা ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম।

এর আগে ১৯৯৫ সালের পহেলা মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। আর ১৯৭২ সালের ১৮ই মে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন: এদিকে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা। তাপপ্রবাহের ভেতরেই তাদের বের হতে হচ্ছে। রাজধানীর আগারগাঁও রাস্তার পাশে শরবত পান করছিলেন রিকশাচালক শাহজাহান। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট হচ্ছে। কী আর করার। আমরা গরিব মানুষ। পেটের দায়ে বের হচ্ছি। ঘরে খাবার থাকলে, এই গরমে বাইরে বের হতাম না। শেওড়াপাড়ায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ নাইম। পরিবার নিয়ে বিএনপি বস্তিতে থাকেন তিনি। বলেন, এত গরম এর আগে কখনো অনুভব করিনি। দেখতেই তো পারছেন ঘেমে জামা আর শরীর একাকার। গরমে মানুষ কাপড় কিনছে কম।

অন্যদিকে তাপপ্রবাহে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা জানান, তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশুরা এখন জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ নিয়ে বেশি আসছে। পাশাপাশি পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এই চিত্র শুধু রাজধানীর নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, চলমান তাপপ্রবাহে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা জ্বর, ডায়রিয়া ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঢাকার বাইরের প্রায় সব হাসপাতালেই শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন। বহির্বিভাগেও সেবা নিতে আসা রোগীর চাপ বেশি।

মৃত্যু ৯০ ছাড়িয়েছে: চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরমজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ১১ দিনে মানবজমিন সংবাদদাতা ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এ সময়ে গরমে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার সর্বোচ্চ ১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২৩ শে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩ জন এবং ২৪শে এপ্রিল ৯ জন, ২৫শে এপ্রিল ৫ জন, ২৬শে এপ্রিল ৭ জন ও ২৭শে এপ্রিল ৯ জন এবং ২৮শে এপ্রিল ৪ জনের মৃত্যু হয়। গরমজনিত কারণে গতকালও ৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরে হিটস্ট্রোকে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন-উপজেলার বড় হরিশপুরে আব্দুল মান্নান ও নলডাঙ্গা উপজেলায় খাজুরা ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের খায়রুল ইসলাম। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-ওমর আলী (৬৫) ও আব্দুল বাতেন মাঝি (৬০)। তাদের বাড়ি জেলার সদর উপজেলায়। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওমর আলীকে সকাল পৌনে ১১টার দিকে এবং আব্দুল বাতেন মাঝিকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। ওমর আলী চরকিশোরগঞ্জের বাবু রাঢ়ী হাজারীর ছেলে এবং আব্দুল বাতেন মাঝি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মানিকপুরের ওলিউল্লাহ মাস্টারের ছেলে। এদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ধানের জমিতে কাজ করতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান জানান, মঙ্গলবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার তাড়াবাড়িয়া গ্রামে তিন কৃষক ধানের জমি নিড়ানির কাজ করতে যায়। এ সময় তাপদাহ ও গরমে তিন কৃষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে জিল্লুর রহমান (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তিনি। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় হিটস্ট্রোকে জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২) নামের এক গরু ব্যবসায়ী মারা গেছেন। তিনি ব্রহ্মপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। দুপুরে মালিপাড়া থেকে গরু নসিমনে উঠানোর সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর হোসেন। তাকে প্রথমে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় তীব্র তাপপ্রবাহের হিটস্ট্র্রোকে আরও দু’জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছ।

তাপপ্রবাহ চলবে আরও কয়েকদিন: চলতি মৌসুমে টানা এক মাসেরও বেশিদিন ধরে চলা তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, এরকম তাপমাত্রার অবস্থা আরও কয়েকদিন চলবে। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির আশেপাশে বা এর বেশিও হতে পারে। মে মাসের ২ থেকে ৭ তারিখের ভেতরে তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে আসবে বৃষ্টির ফলে। এ সময়ে পুরো বাংলাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ২রা মে’র আগে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। এদিকে আবহাওয়া অফিস আগামী তিন দিনের আবহাওয়া পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আজ বুধবার সিলেটে এবং চট্টগ্রামে বৃষ্টির বিস্তৃতি বাড়তে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই দুই বিভাগের সঙ্গে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগেরও দু-এক জায়গায় বৃষ্টির কথা বলেছে আবহাওয়া অফিস। তবে আগামী ৪ঠা থেকে ৫ই মে দেশের বড় অংশ জুড়ে বৃষ্টি হতে পারে।

হিটস্ট্রোকে ঝরছে প্রাণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য
দেশে সর্বত্র চলছে অসহ্য গরম। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে হিটস্ট্রোকে সারা দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গতকালও দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা হিট এলার্টও রয়েছে।

বর্তমানে তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোকে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে- করণীয় কী? হাসপাতালগুলোই বা কতোটুকু প্রস্তুত। জানতে চাইলে দেশের জনস্বাস্থ্যবিদ, খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালগুলোকে যথেষ্ট প্রস্তুত মনে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা ভাব। হিটস্ট্রোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৃত্যুর যে হিসাব দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি হবে। বিভিন্ন মিডিয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। হিটস্ট্রোকে রক্ষা পেতে মানুষকে ঠা-ার স্থানে থাকতে হবে। শিশুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এধরনের গরমে ডায়রিয়াও বেড়ে যায়। ছাতা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। কৃষকদেরকে আগের মতো মাথায় মাথাল ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া বেশি বেশি গাছ লাগানোরও কথা বলেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে সারা দেশে হিটস্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সারা দেশে হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া এ ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুরুষ, ২ জন নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২২শে এপ্রিল থেকে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে হিটস্ট্রোক রোগীর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, হিটস্ট্রোকে নতুন করে মারা যাওয়া তিন জনের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুর জেলায়। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মারা গেছেন। প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত তথ্যে সর্বশেষ সোমবার হিটস্ট্রোকে তিনজন মারা যান। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, উষ্ণতাজনিত অসুস্থতার চিকিৎসায় একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। ২২শে এপ্রিল এই নির্দেশিকা ব্যবহারে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এই গাইডলাইন ‘অন ম্যানেজমেন্ট অব হিট রিলেটেড ইলনেস’-এর ভিত্তিতে সারা দেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে অনলাইনে।

হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ নির্দেশনা দিয়েছিল ২৩শে এপ্রিল। অসহ্য গরম আরও কয়েকদিন থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনজীবনে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এই তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়-দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বিদ্যমান আছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। ২. প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন। ৩. গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন। ৪. গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বৃহস্পতিবারও স্কুল-কলেজ বন্ধ
শুক্রবারও চালু রাখার চিন্তা
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদ্রাসার ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গত সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ আদেশ দেন। এই আদেশের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আপিল করবে বলে জানানো হলেও গতকাল তা করা হয়নি। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা বহালই আছে। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকছে স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা।
ওদিকে দাবদাহের কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তার অনুলিপি মন্ত্রণালয় পায়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ ছাড়া ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

গতকাল সচিবালয়ে তিনি বলেন, আদালতের আদেশ তারা মানতে বাধ্য, কিন্তু সেজন্য আদেশ সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কিনা তা খোলাসা করেননি শিক্ষামন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তের ওপরে আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা এ মুহূর্তে মন্তব্য করার অবস্থানে নেই। কারণ আমরা আদেশ দেখিনি, তাই মন্তব্য করবো না। নীরবতাটা এক্ষেত্রে সম্মানের লক্ষণ, সম্মতি নয়।

আদালতের নির্দেশনায় কি আছে তা না দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্দেশনা আসলে আমরা মেনে চলবো।

https://mzamin.com/news.php?news=107917