২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:২৬

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন প্রকাশ দেশে এইডসে মৃত্যুর রেকর্ড

গত এক বছরে এইডসে আক্রান্ত হয়ে আড়াইশ’র বেশি মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে নতুন করে এইডস শনাক্ত হয়েছে ১২৭৬ জনের, এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৪৭। আর এই সময়ে এইডসে আক্রান্তদের মধ্যে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; আগের বছর ২৩২ জন মারা যান। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এক বছরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর এই সংখ্যাকে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ৩৪ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৪ জন। আর সাড়ে তিন দশকে মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, “বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানে এ বছরের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত এক বছরে আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশী ১১১৮ জন, বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা। এক বছরে আক্রান্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকার। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে।

শনাক্তদের মধ্যে ৮৫০ জন পুরুষ; ২৭৮ জন নারী। আর ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এবং আবদুন নূর তুষার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে এই চিকিৎসক রোগটি যাতে সংক্রমিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন “তাদেরকে (আক্রান্তদের) দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেখা যাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি যিনি একটি কোলনস্কপি, এন্ডোস্কপি বা যে কোনো  একটা পরীক্ষা করাতে এসে আক্রান্ত হয়ে গেলেন।

  রোগটি বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, “সারাবিশ্বে এখন মানুষ অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়। মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য দুটি কারণ তুলে ধরেন চিকিৎসক আহমেদুল কবীর।

তিনি বলেন, আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভালো হওয়ায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরেকটা হতে পারে বাংলাদেশে যারা এইডস আক্রান্ত তাদের বয়স হয়েছে, তাদের অনেকের ন্যাচারাল ডেথ হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরুষ যৌনকর্মীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। যারা ইনজেকশন ব্যবহার করে শিরায় মাদক নেন, সেইসব মাদকসেবীরাও এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

https://www.dailysangram.info/post/544490