২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৮

ব্যাংকখাতে নৈরাজ্য

 

দেশের ব্যাংকখাতের দুর্নীতির খবর প্রায় সবার জানা। তবে সম্প্রতি যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি জানিয়েছে, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ব্যাংকখাত থেকে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এসব লুটপাটে শুধু দুর্নীতিবাজদের একটি অংশই নয়, ব্যাংকের কিছু পরিচালক তথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সংশ্লিষ্ট। কিছু পরিচালকের অনৈতিক হস্তক্ষেপে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে খেলাফি ঋণ। কমছে আয়। অন্যদিকে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকখাত।

খেলাফি ঋণ দেশের ব্যাংকখাত তথা অর্থনীতির মারাত্মক এক ব্যাধি। বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও এর নিরাময়ে সাফল্য অর্জিত না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী খেলাফি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। বাংলাদেশের খেলাফি ঋণ ঝুঁকি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ঋণখেলাফি হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত, এর সমাধানে কী করণীয়, তাও বহুল আলোচিত। ২০২৩ সালের সমঝোতা স্মারকের আওতায় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল, সেগুলো অর্জন তো দূরের কথা, ধারেকাছেও যেতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। উল্টো তাদের খেলাফি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। শীর্ষ খেলাফি ও অন্য খেলাফিদের কাছ থেকে নগদ আদায়ও সন্তোষজনক নয়। আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে খেলাফি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকখাতের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে বিশ্বব্যাংক আগেই এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল।

আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতার সুযোগ নেই। এমনিতেই বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ায় এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল করতে দায়ীদের চিহ্নিত করাসহ খেলাফি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে আইন আরও কঠোর করা হোক। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি। অন্যথায় আলোচ্য দুর্নীতি ও অনিয়ম দেশের অর্থনীতিকে আরও পঙ্গু করে ছাড়বে।

https://www.dailysangram.info/post/544440