১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৫৮

শিক্ষক নিয়োগে বয়সের ছাড় না পেলে বাদ পড়বেন বহু প্রার্থী

নিয়মের গ্যাঁড়াকলে নতুন শঙ্কায় উত্তীর্ণরা

 

এখন থেকে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন না প্রার্থীরা। যদিও করোনা মহামারীর কারণে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সরকার ঘোষিত ৩৯ মাস বয়স ছাড়ের মেয়াদ শেষ। তাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগে আর বয়সের ছাড় পাবেন না নিবন্ধিত প্রার্থীরা। এসব প্রার্থী এখন পর্যন্ত চলা চারটি শিক্ষক নিয়োগ চক্রের তিনটিতে বয়সের ছাড় পেয়েছিলেন। তবে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে সে সুযোগ আর মিলছে না তাদের।

অবশ্য এ বিষয়েয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। কাজেই ৩৫ বছর অতিক্রম হলে নিয়োগ সুপারিশের এখতিয়ার এনটিআরসিএ’র নেই। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে প্রার্থীদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। এরপর মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ দিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ’র সচিব মো: ওবায়দুর রহমান জানান, আগামী শিক্ষক নিয়োগ চক্রে (পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি) শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা আর বয়সে ছাড় পাবেন না। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে সরকার যে বয়সে ছাড় দিয়েছিল তার মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষে হয়ে গেছে। তাই শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফলপ্রত্যাশী প্রার্থীরা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়স ছাড় দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এ নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে ভাইভা গ্রহণ পর্যন্ত প্রায় চার বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে। করোনা মহামারীসহ নানা বাস্তবতায় বয়সের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও দাবি তাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যদি মনে করে বয়সে আরো ছাড় দেয়া প্রয়োজন, আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি আদেশ জারি করে সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ভাবা হবে। এর আগে করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সে তিন দফায় মোট ৩৯ মাস ছাড় দেয় সরকার। বিসিএস ছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব চাকরির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ছিল। প্রথম দফায় বয়সসীমায় ২১ মাস ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সবশেষ ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।

অপর দিকে নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও এর অধীন অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর এবং সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত বা জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব দফতর বা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সর্বোচ্চ বয়সসীমার মধ্যে থাকলে ওই প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে যখন শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাই করা হয় তখন কোনো বয়সসীমা ছিল না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ২০১৮ সালের ১২ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ২০১৮ সালের শেষে জারি করা দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে বয়স ৩৫ অতিক্রম করা প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি। পরে ২০২১ সালে জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১২ জুনের আগে যেসব প্রার্থী সনদ অর্জন করেছিলেন তাদের জন্য বয়সসীমা শিথিল ঘোষণা করা হয়। রিভিউ আবেদনে সে সুযোগও বন্ধ হয়। পরে করোনা মহামারীতে প্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সরকার বয়সে ছাড় দেয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের শেষে জারি করা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে যেসব প্রার্থীর বয়স ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সদস্য এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বয়সে ছাড় দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও হতে পারে। বয়সে ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্বান্তের ওপর।

সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্ত হওয়া সংক্রান্ত একটি নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালায় বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হলে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই। তবে ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রে শর্তটি শিথিলযোগ্য। কাজেই এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে যেহেতু ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, সেহেতু মন্ত্রণালয় চাইলে বয়সে ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৭তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২২ সালের ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এক লাখ ৫১ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। চলতি বছরের ৫ ও ৬ মে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে অংশ নেন মোট এক লাখ চার হাজারের বেশি প্রার্থী। গত ৩০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৬ হাজার ২৪২ জন প্রার্থী। আগামী বৃহস্পতিবার এই নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/799754