১২ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৩৯

গাজায় ঘরে ঘরে লাশ

খাবার-পানি-জ্বালানি নেই, অন্ধকারে উপত্যকা

ইসরাইলি হামলায় নিহত ১০৫৫ আহত ৫১৮৪, বিধ্বস্ত ২৩ হাজার ভবন

খাবার নেই, পানি নেই, জ্বালানি নেই। এখানে-ওখানে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। হাসপাতাল-বাসাবাড়িতে লাশের সারি। বাতাসে বারুদের তীব্র গন্ধ। বড় বড় ভবন, সড়ক সবই খাঁখাঁ করছে। যেন সুনসান এক ভূতুড়ে নগরী। ফিলিস্তিনের গাজার অবস্থা এখন এমনই। পাঁচ দিনের ইসরাইলি হামলায় ২২ হাজার ৬০০ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ১০ হাসপাতাল ও ৪৮ স্কুল। ইতোমধ্যে ১০৫৫ জন নিহত ও ৫১৮৪ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আড়াইশর বেশি শিশু।

গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাতভর শত শত স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা করছে ইসরাইল। আহত লোকজন হাসপাতালে ছুটলেও সেখানেও ত্রাহী অবস্থা। নেই ওষুধসহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম। অবরুদ্ধ গাজায় খাবার, ওষুধসহ অতিজরুরি জিনিসও সরবরাহ করতে দিচ্ছে না ইসরাইলি সেনারা। জ্বালানির অভাবে বুধবার বিকাল থেকে একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে এ উপত্যকা। সীমান্তে শত শত ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরাইল। শিগগিরই তারা গাজায় স্থল অভিযান চালাতে পারে। খবর আলজাজিরা, স্কাই নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির।

গাজা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ইসরাইলি হামলায় ভয়ে গাজা ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। ইতোমধ্যে ২ লাখ ৬৪ হাজার লোক বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। গাজায় মাত্র ১০-১২ দিনের খাদ্য-পানি আছে। ডিজেল প্রায় শূন্য। হাসপাতালগুলোর জন্য বরাদ্দ জ্বালানি তেলও শেষ হওয়ার পথে।

ফিলিস্তিনের বিদ্যুৎ বিভাগের চেয়ারম্যান থাফের মেলহেম জানিয়েছেন, গাজায় মাত্র একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বাকি বিদ্যুৎ আসত ইসরাইল থেকে। কিন্তু রোববার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় সেখানে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করবে এবং পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাবারসহ সব প্রয়োজনীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। জ্বালানির অভাবে বাধ্য হয়ে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে অন্ধকারে নিপতিত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এ ভূখণ্ড। প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেদহাত আব্বাস বলেন, আমাদের কাছে হাজার হাজার আহত বাসিন্দা আসছেন। এতে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর সীমাহীন চাপ পড়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। তিনি বলেন, ওষুধের ঘাটতির কারণ হলো-আমাদের এক মাসে যা লাগে, এখন একদিনেই তা লাগছে। পরিস্থিতি খুব খারাপ।

নাদিয়া নামে গাজার এক মা বলেন, আমার পাঁচ বছরের ও তিন মাসের দুটি সন্তান রয়েছে। প্রতিনিয়ত মাথার ওপর মৃত্যু ঘুরছে। কোথায় যাব, কোথায় পালাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

এদিকে গাজার কাছে প্রায় ৩ লাখ ইসরাইলি সেনা জড়ো হয়েছে। সীমান্তে শত শত ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োহাভ গালান্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় শিগগিরই স্থল অভিযান চালাবে তারা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থানের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন।

ইসরাইল যাচ্ছেন মার্কিন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, তিনি ইসরাইল যাচ্ছেন। আজ তার দেশটিতে পৌঁছার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিও মিলার জানিয়েছেন, ইসরাইলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ইসরাইলিদের প্রতি সংহতি জানাবেন তিনি। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিও একইদিন ইসরাইলের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, ব্লিঙ্কেন ও ক্লেভারলি সেখানে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসবেন।
ইসরাইলে জরুরি ঐক্য সরকার গঠনের ঘোষণা : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জয় পেতে জরুরি ঐক্যের সরকার গঠনে একমত হয়েছে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বিরোধী নেতা বেন গাজি। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, জাতীয় ঐক্যের সরকার হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ব্যতীত অন্য কোনো নীতি নির্ধারণ করবে না।

একদিন তোমাকেও গুলি করে মারবে-নেতানিয়াহুর উদ্দেশে টুইটে তুরস্কের মন্ত্রী : তুরস্কের উপ-শিক্ষামন্ত্রী নাজিফ ইলমাজ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলেছেন, একদিন হামাস তাকে হত্যা করবে। তিনি এক টুইটে (এক্স) লেখেন, ‘একদিন তারা আপনাকেও গুলি করবে।’ নেতানিয়াহুর পোস্ট করা গাজায় ইসরাইলি এয়ারফোর্সের হামলার একটি ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/727828