১৩ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:০৬

সঞ্চয়পত্র বিক্রির রেকর্ড ॥ ৮ মাসে মোট বিক্রি ৩৩ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকগুলোতে টাকা আমানত রেখে লাভ পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ফলে বিকল্প খাতে বিনিয়োগের হার বাড়ছে। সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দেয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে গত আট মাসে এই বিক্রিতে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, আট মাসে টাকার অংকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি ৩শ’ ৮২ কোটি টাকা।

সূত্রমতে বিগত আট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রার ২৫৪ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। টাকার অংকে যা ৩৩ হাজার ৩৮২ কোটি। আট মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এ তথ জানা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে সুদ হার কমিয়ে দেয়া ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুকেছে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে চায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্র্থবছরে আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫৪ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদের হার যেখানে ৫ থেকে ধরণ ভেতে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সেখানে ৮ থেকে ধরন ভেদে ১২ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে সঞ্চয়কারীরা সঞ্চয়পত্রমুখী হয়েছে।
সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী সরকার চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নীট ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। আট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু আট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল পরিশোধ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরিশোধকৃত মূল ও সুদ পরিশোধ করার পর নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২৮২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির এ হার পুরো বছরের জন্য নির্ধারতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এবং আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ২২টি ব্যাংকের আমানতের সুদ ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। সূত্র বলছে, অতি মুনাফার প্রবণতা ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যাংকগুলো আমানতের অনুপাতে ঋণের সুদহার কমাচ্ছে না। এ বিষয়টিকে ব্যাংকের দ্বৈত আচরণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। তাদের এ দ্বৈত আচরণে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয় গ্রাহকই ঠকছেন। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রেখে কোনো লাভ হচ্ছে না।

এদিকে ধারাবাহিক আমানতের সুদ কমায় ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারা বেশি লাভের আশায় বিকল্প উৎসে টাকা খাটাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে ঝুঁকছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার অতি মুনাফার লোভে কো-অপারেটিভ সোসাইটির মতো হায়-হায় প্রতিষ্ঠানে টাকা খাটাচ্ছেন। অনেকেই সঞ্চয়ের বদলে অপচয়মূলক কাজে অর্থ ব্যয় করছেন। এতে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে।

এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংককেও। আর্থিক খাতের এই অভিভাবক মনে করছে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই আমানতের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধে সব ব্যাংককে সক্রিয় থাকার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

http://www.dailysangram.com/post/279660