৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:৫৪

আল্লামা সাঈদীর রিভিউ আবেদনের শুনানি ১৪ মে

জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর, খ্যাতিমান মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) এবং সাজা বাড়াতে সরকারের করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৪ মে দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার।
আল্লামা সাঈদীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। সরকার পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত সোমবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আল্লামা সাঈদীর খালাস চেয়ে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) এবং সাজা বাড়াতে সরকারের করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আসে। কার্যতালিকার ক্রমিক নম্বরে আবেদনটি ১৪৭ নম্বরে ছিল। কিন্তু আপিল বিভাগের কার্যতালিকার এক থেকে ৭৩ নম্বর মামলার শুনানি হলে ওইদিন রিভিউর শুনানি হয়নি। তবে সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, আগামী ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) হতে পারে। গত বুধবার বিষয়টি আবার কার্যতালিকায় (ক্রমিক নম্বর -১৩৮) আসে। তখন আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সময় চাওয়া হলে আপিল বিভাগ আগামী ১৪ মে শুনানির দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ১৭ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী খালাস চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছিলেন। রিভিউ আবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার, ১৬ টি গ্রাউন্ডে খালাসের আরজি রয়েছে। তখন আল্লামা সাঈদীর প্রধান কৌসুলি খন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সরকার পক্ষের রিভিউ আবেদন করার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। অযথা চাপ সৃষ্টির জন্যই সরকারপক্ষ এ রিভিউ আবেদন করেছে। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে রিভিউ আবেদন দায়ের করেছে তারা। রায় পর্যলোচনা হলে আশা করি রিভিউ আবেদনে আমরা জয়লাভ করবো এবং আমার বিশ্বাস তিনি (আল্লামা সাঈদী) মুক্তি পাবেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন বলেন, সাঈদী সাহেবকে বিশাবালী হত্যা মামলায় মৃত্যুদ- দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় সুখরঞ্জন বালী প্রসিকিউশনের সাক্ষী হয়েও সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসলে ট্রাইব্যুনালের গেটে ডিফেন্স আইনজীবীদের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরে রহস্যজনকভাবে তাকে পাওয়া যায় ভারতের একটি কারাগারে। তিনি কিভাবে ভারত গেলেন এটাই রহস্য।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যদি কোনো অভিযোগে অপরাধ প্রমাণিত হয়, সেই অপরাধের সাজা কী দেবেন সেটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। এ বিষয়ে রিভিউ করার কোনো আইনগত বৈধতা সরকার পক্ষের নেই। সরকার সাজানো ঘটনা দিয়ে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমার বিশ্বাস রিভিউতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন এবং মুক্তি পাবেন।
তার আগে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুদ- রিভিউ আবেদন করে সরকার। সরকারপক্ষে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রিভিউটি দাখিল করেন। এতে ৩০ পৃষ্ঠার ৫টি গ্রাউন্ডে সর্বোচ্চ শাস্তি চায় সরকার পক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকালে আল্লামা সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। পুর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে আল্লামা সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদন্ডের পক্ষে রায় দেন। তবে তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় আসে।
আপিলের পুর্নাঙ্গ রায়ে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পুর্নাঙ্গ রায়ে বলেন, প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতে বলেছেন অভিযুক্ত (আল্লামা সাঈদী) রাজাকার, তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সুনির্দিষ্ট করে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগে। কিন্তু ডিফেন্স পক্ষের আপিল এবং সাক্ষীরা ক্যাটাগরীভাবে দেখিয়েছে তিনি (আল্লামা সাঈদী) অপরাধ সংঘটনের স্থানে ওই সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি রওশন আলীর (ডিডব্লিউ-৬) দোহা খোলায় ছিলেন। তিনি রাজাকার ছিলেন না এবং অপরাধ সংঘটিত করেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। প্রসিকিউশনের মামলা এবং ডিফেন্সের আপিল থেকে দেখা যায় অভিযুক্ত রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন প্রসিকিউশন তা চুড়ান্ত প্রমাণের (ক্রুশিয়াল ফ্যাক্ট) মাধ্যমে সন্দেহাতীত ভাবে দেখাতে ব্যর্থ। উপরন্তু ডিফেন্সপক্ষে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং প্রামাণ্যচিত্র পরিষ্কার সংশয় সৃষ্টি করে প্রসিকিউশনের করা তিনি ১৯৭১ সালে রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এ বিষয়ে। ফলে অভিযুক্তকে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া হলো। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত যে প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অীভযোগ সন্দোহীততভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি (আল্লামা সাঈদী) সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। একইসঙ্গে অভিযুক্তের অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাকে খালাস দেয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা সাঈদীকে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদ- দেয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে একই বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন আল্লামা সাঈদী।

http://www.dailysangram.com/post/278906-