২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ৯:৫২

ওরা কেন ভয়ংকর খুনি

চাকরির আশায় কাদেরের ফাঁদে পড়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয় তিন যুবক * চাল আত্মসাতের মামলায় লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন সাবেক এ এমপি * রিমান্ডে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি

চাকরি নিতে এসে খুনের আসামি হয়ে গেল তিন যুবক। নাম রাশেদুল ইসলাম মেহেদী, শাহীন মিয়া ও আনোয়ারুল ইসলাম রানা। চাকরি পাওয়ার আশায় গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খান তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে কাদের খানের পরিকল্পনা ও পরামর্শ অনুযায়ী একই আসনের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার মিশন বাস্তবায়নে সরাসরি অংশ নেয় তারা। ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দি থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও কয়েকজনকে খুঁজছেন।

এদিকে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেও শুক্রবার অনেকটা স্বাভাবিক ছিলেন সাবেক এমপি আবদুল কাদের খান। পুলিশও এখনও পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি। প্রাথমিকভাবে তাকে হত্যা পরিকল্পনাসংক্রান্ত কিছু ভয়েস কল শোনানো হয়েছে। তিনি স্বীকারও করেছেন এগুলো তার কথোপকথের রেকর্ড। তারপরও তিনি নাকি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেবেন না। শিগগির তাকে খুনিদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কাদের খানকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষেত্রে কাদের খান এককভাবে লিটনকে দায়ী করেন। কেননা তার দাবি, ২০১২ সালে টিআর বিশেষ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পেছনে লিটনের হাত ছিল। আর এ কারণেই তিনি দ্বিতীয়বার মনোনয়ন পাননি।

এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদকালে কাদের খান পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি লিটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাননি। কাদের খানের দাবি, ওই নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু লিটন দলের প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনের ফল নিজের দিকে নিয়ে যান। এসব কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। একপর্যায়ে হতাশা থেকে বের হতে এমপি লিটনকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। এ মিশন সফল হওয়ার পর তিনি তার পথের দ্বিতীয় কাঁটা একই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া শামীম পাটোয়ারীকেও হত্যার ফাঁদ আঁটেন। কিন্তু সেটি সফল হওয়ার আগেই খুনিচক্র ধরা পড়ে যায়। প্রচণ্ড ক্ষোভ হতাশা থেকে তিনি নাকি এ ধরনের জঘন্য পথ বেছে নিয়েছিলেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাইবান্ধা এ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, সাবেক এমপি আবদুল কাদের খান রিমান্ডে যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তবে তাকে কিছুটা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এমপি লিটনকে হত্যার আগে তিন যুবককে সাবেক এমপি কাদের খান বলেছিলেন, লিটন মারা গেলে আবার তিনি এমপি হতে পারবেন। এমপি হলে তাদের পেট্রুলপাম্প করে দেবেন। এলাকার ঠিকাদারি ব্যবসা, টেন্ডারসহ সব ধরনের কাজ তাদের দেয়া হবে। এমন জোরালো আশ্বাস আর প্রলোভনে পড়ে তারা লিটনকে হত্যা করতে রাজি হয়।

প্রসঙ্গত, এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া উল্লিখিত তিন যুবক ছাড়াও কাদের খানের গাড়িচালক হান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই চারজন এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এদিকে মোবাইলফোনের ১০ হাজার কল ও ম্যাসেজ পর্যালোচনা করে সাংবাদিক পরিচয়ধারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার রায়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হয় পুলিশ সদর দফতরের এলইসি শাখা। এছাড়া এ সূত্র ধরে মনিরুল ইসলাম রতন নামের একজনকে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ জানতে পারে কিলিং মিশনের আগে এমপি লিটনের বাড়ি রেকি করে এবং বাড়ি ফাঁকা আছে বলে কাদের খানকে ক্লিয়ারেন্স দেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের আসল ক্লু হাতের নাগালে পেতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বেশি বেগ পেতে হয়নি। প্রথমে কাদের খানের সব ক’টি ফোনে আড়ি পাতে পুলিশ সদর দফতরের একটি টিম। কয়েক দিনের মধ্যে কাদের খানের ভয়েস কলে হত্যা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধরা পড়ে। এরপর ওই সূত্র ধরে আরও কয়েকটি মোবাইল ফোনে আড়ি পাতে পুলিশ। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেন খোদ পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। এরপর একে একে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে চন্দন কুমার রায়কে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

জানা গেছে, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কাদের খানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পুলিশের কাছে এক রকম অবিশ্বাস্য বিষয় ছিল। ঘটনার পর থেকে কেউ কোনোভাবেই তাকে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ করেননি। একজন সাবেক এমপি হয়ে অপর এক এমপিকে এভাবে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারেন তা ছিল চিন্তারও বাইরে। এ কারণে ভয়েস কলসহ যাবতীয় তথ্য-প্রমাণের বিষয়টি প্রথমে সরকারের উচ্চপর্যায়কে অবহিত করা হয়। এর আগে কাদের খানের বাসা ঘিরে ফেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপর উচ্চপর্যায়ের সম্মতি পাওয়ার পর সাবেক এমপি কাদের খানকে মঙ্গলবার বগুড়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে শুক্রবার রাতে রিমান্ডে থাকা এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খানের সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সব কিছু ধীরস্থিরভাবে শুনছেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছেন। কোনো কোনো বিষয়ে শুধু হ্যাঁ কিংবা নাসূচক উত্তর দিচ্ছেন। বিস্তারিত বলছেন না। তবে ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড অপরাধবোধ কাজ করায় ধীরে ধীরে তিনি কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। খাওয়া ও ঘুম এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া মেহেদী এর আগে ঢাকায় সিএনজি চালাত আর শাহীন ও রানা চাকরি করত গার্মেন্টে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কাদের খান মহাজোট থেকে এমপি হওয়ার পর তারা আরও ভালো থাকার আশায় চাকরির জন্য এলাকায় ফিরে আসে। এমপির কাছে ধরনা দেয়। বারবার আসার কারণে তিনজনকে কাদের খান নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার পরিকল্পনা আঁটেন। প্রথমদিকে ব্যক্তিগত কিছু সাধারণ কাজ করানোর পর একপর্যায়ে ছোটখাটো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেন। এরপর কাদের খান তাদের বলেন, ভেবেছিলাম তোদের কোথাও একটা ভালো চাকরি দিয়ে দেব। কিন্তু তোরা চাকরি করে জীবনে কত টাকা কামাতে পারবি। তার চেয়ে বরং আমার সঙ্গে থেকে যা। আমি খরচ চালিয়ে নেব। এতে তোরা আরও ভালো থাকবি। আর এমপি হলে তো কথাই নেই। যা চাইবি সব পাবি। ঠিকাদারি ব্যবসা, তেলের পাম্প- সব করে দেব, কোটি কোটি টাকার মালিক হবি। আর সেটা হতে গেলে আরও কিছু কাজ তোদের করতে হবে। বলা হয়, এমপি লিটনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এমন কথা শুনে তারা রীতিমতো ভড়কে যায়। কিন্তু শেষমেশ তারা কাদের খানের খপ্পর থেকে বের হতে পারেনি। হত্যা মিশন সফল করতে কাদের খান নিজেই সুন্দরগঞ্জের বাড়িতে তাদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। অবশ্য সুচতুর কাদের খান এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে নিজের মোবাইল ফোনে কথা বলতেন না। ব্যবহার করতেন গাড়িচালক হান্নানের মোবাইল ফোন।

এদিকে লিটনের বাড়ি ফাঁকা হওয়ার তথ্য সরবরাহকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার রায়ও লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ কারণে তিনিও কাদের খানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে লিটন হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হন। এছাড়া শুধু ফোন কল লিস্টই নয়, লিটন হত্যার আগের দিন কাদের খানের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মেহেদী, রানা ও শাহীন ছিনতাই করে। ওই সময় ছয় রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন রাস্তায় পড়ে যায়। এমপি লিটনের শরীর থেকে পাওয়া গুলির সঙ্গে ওই গুলির মিল পায় পুলিশ। পরে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তিন ছিনতাইকারীর বিষয়ে তথ্য পায়। লিটন হত্যার পর থেকে তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। পুলিশ তাদের নতুন নম্বর সংগ্রহ করে। তাদের সঙ্গে কাদের খানের গাড়িচালক হান্নানের মোবাইল ফোন থেকে নিয়মিত কথা হতো।

পুলিশ বলছে, সুন্দরগঞ্জের উপনির্বাচনের ঘোষণার পর ওই এলাকায় লাইসেন্স করা পিস্তল ও গুলি জমা দেয়ার নির্দেশনা আসে। কাদের খান তার পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। তবে নিজের নামে ৫০ রাউন্ড গুলি ইস্যু করেছিলেন। ৪০ রাউন্ড গুলির হিসাব তিনি দেননি। ছিনতাইয়ের সময় উদ্ধার হওয়া ম্যাগাজিনের গুলি, থানায় জমা দেয়া গুলি এবং এমপি লিটনের দেহে পাওয়া গুলির মধ্যে মিল খুঁজে পায় পুলিশ। এতে পুলিশ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় এমপি লিটনকে কাদের খানের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়েই গুলি করা হয়েছে।

বাসা রেকি : পুলিশ জানায়, এমপি লিটন হত্যার দিন ঘটনাস্থল রেকি করে কাদের খানকে সর্বশেষ আপডেট জানান চন্দন কুমার রায়। তার ফোন কলের রেকর্ডের সূত্র ধরেই লিটন হত্যার সঙ্গে কাদের খানের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। চন্দন রায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদফতর সম্পাদক ছিলেন। এই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে এমপি লিটনের পরিবারের সখ্যতা ছিল। এমনকি তিনি লিটনের বড় বোন আফরোজা বারীর একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। পরে সেখান থেকে তিনি কয়েক মাস আগে চাকরিচ্যুত হন। এ কারণে তিনি লিটনের পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার প্রভাব কমে আসে। এমনকি দলীয় পদ পাওয়া নিয়ে দেখা দেয় সংশয়। যে কারণে তিনি অনেকটা প্রকাশ্যেই লিটনের বিরোধী হয়ে ওঠেন। এমনকি বিভিন্ন সরকারি দফতরে লিটনের বিরুদ্ধে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ দেন। এতে লিটনও তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। পুলিশ জানায়, লিটনের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ তৈরি হওয়ার কারণে কাদের খান খুব সহজেই চন্দনকে কাছে টেনে নেন এবং লিটন হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হন।

এমপি লিটনের বোন ও হত্যা মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল যুগান্তরকে বলেন, ‘কাদের খান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এটা আমরা ভাবিনি। তবে পুলিশ এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে। এখন পর্যন্ত মামলার তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট। তবে কাদের ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে আরও কোনো পরিকল্পনাকারী রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, ‘আবদুল কাদের এ ধরনের ঘটাতে পারেন এটা কখনোই ভাবতে পারিনি। তবে পুলিশ তথ্য-প্রমাণসহ বলছে, এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত। এতে আমাদের কিছু বলার নেই।’

আবদুল কাদের জাতীয় পার্টি থেকে আগে এমপি হলেও এখন তার সঙ্গে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিনি দলের কোনো পর্যায়ে নেই। তিনি জানান, তার সঙ্গে দলের এখন কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি তিনি কোনো পদেও নেই।

দুদকের সেই মামলা : ২০১২ সালের জুলাই মাসে বিশেষ টিআর প্রকল্পের চাল আত্মসাতের অভিযোগে আবদুল কাদের খানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের রংপুর অঞ্চলের তৎকালীন উপপরিচালক জহিরুল আলম সুন্দরগঞ্জ থানায় এসব মামলা করেন। তখন তিনি সুন্দরগঞ্জ আসনের এমপি ছিলেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিশেষ টিআর প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ২৮৫ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে এ চারটি মামলা হয়। এর মধ্যে শুধু কাদের খানের বিরুদ্ধেই ২০টি প্রকল্পের বিপরীতে ২৭০ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া কিশামত হলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, জরমনদী নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন ও বামনডাঙ্গা রামদেব খবির উদ্দিন মহাবিদ্যালয় ভবন মেরামত সংক্রান্ত তিনটি প্রকল্পে পাঁচ টন করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। এসব মামলার জন্য তিনি এমপি লিটনকে দায়ী করেন।

সন্ধান মেলেনি আরও একটি অস্ত্রের : অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান করতে ব্যাপক তল্লাশি ও কাদের খানকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তার লাইসেন্স করা একটি পিস্তল এবং ১০ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার গভীর রাতে তার গ্রামের বাড়ির উঠানের মাটি খুঁড়ে লাইসেন্সবিহীন ৬ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আরও একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই তিনটি পিস্তল হত্যার মিশনে ব্যবহার করা হয়েছিল।

ফাঁসির দাবিতে মিছিল সমাবেশ : লিটন হত্যার মূল হোতা জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল কাদের খানের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সুন্দরগঞ্জ। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে শুক্রবার বিকালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পৌর এলাকায় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির উপজেলা সহসভাপতি মাওলানা আবুল হোসেন, আনছার সরদার, জহুরুল হক বাপ্পা, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মণ্ডল, পৌর সভাপতি আবদুল রশিদ ডাবলু, যুব সংহতির ছানোয়ার হোসেন বাবু, কল্লোল আহম্মেদ, ছাত্রসমাজের শাহ সুলতান সুমন, মেহেদী হাসান, সাংস্কৃতিক পার্টির একরামুল হক লাল মিয়া, আবদুল মান্নান আকন্দ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, খুনের পরিকল্পনাকারী এতটাই জঘন্য যে, তিনি একজন এমপিকে হত্যার পর উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি শামীম হায়দার পাটোয়ারীকেও হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাই এ রকম খুনির বিচার যত দ্রুত হবে তত দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে।

অপরদিকে একই দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল ও সমাবেশ শেষে কাদের খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এমপি লিটনের বাড়িসংলগ্ন বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে বামনডাঙ্গা বন্দরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে রেলস্টেশন চত্বরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সমেস উদ্দীন বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সহসভাপতি আবদুল খালেদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাবেদ, দিলীপ ভট্টাচার্য, রবিউল ইসলাম বাদশা, জাকির হোসেন, আবদুল্লাহ আল মেহেদী রাসেল, নাদিম হোসেন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/02/25/103947