৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৪৪

রাজধানীর বাসা-বাড়িতে তীব্র গ্যাস সংকট

রাজধানীর বাসা বাড়িতে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। দিন দিন আরও বেশি প্রকট হচ্ছে গ্যাসের সংকট। কিছুদিন আগেও দিনের বেলায় গ্যাস পাওয়া না গেলে রাতে পাওয়া যেত কিন্তু এখন গভীর রাতেও গ্যাস থাকছে না বাসা-বাড়িতে। ফলে রাজধানীর অধিকাংশ বাসিন্দাকেই তিন বেলা খাবারের জন্য হোটেলের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে (লিকুইড পেট্রোলিয়াম) এলপি গ্যাস ব্যবহার করছে। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষদের ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
এদিকে রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় রাজধানীর বাসাবাড়িতে এই সংকট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু কিছু এলাকার বিতরণ লাইনগুলো অনেক সরু হওয়ার কারণেও এই সমস্যা হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতিই সমস্যার মূল কারণ। রাজধনীতে গ্রাহকের চাহিদা দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে আমরা পাচ্ছি ১৭০০ ঘনফুট গ্যাস। প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংকট রয়েছে। ফলে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিতরণ লাইনগুলো অনেক সরু। ফলে লাইনের শেষ প্রান্তে থাকা গ্রাহকরা গ্যাস পেতে সমস্যা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গ্রিন রোড, পশ্চিম ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, যাত্রাবাড়ি, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, বাড্ডা, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, লালবাগ, সোবহানবাগ, ইন্দিরা রোড, তাঁতি বাজার, শাঁখারি বাজার, কামরাঙ্গীর চর, উত্তরা, দক্ষিণ খান, বনশ্রী ও রামপুরা এলাকায় গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার লোকজন রান্নার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছেন বা হোটেল থেকে তৈরি খাবার কিনে খাচ্ছেন।

উত্তরখানের আটিপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গ্যাস নিয়ে বলার কিছু নেই। গ্যাস সকাল ৬টায় যায়, রাত ১২টায় আসে। এই এলাকায় গ্যাসের অবস্থা শোচনীয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে একটি সিলিন্ডার কিনেছ। এতে বাড়তি খরচ হচ্ছে, পরিবারের মাসিক বাজেট কাট-ছাঁট করতে হচ্ছে। অভিযোগ করেন নিয়মিত গ্যাস না পেয়েও গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে।
গ্রিন রোডের আল আমিন রোডের বাসিন্দা আরিফুল হক মুন্সী জানান, তিনি ৫তলা একটি বাড়ির তিন তলায় ভাড়া থাকেন। গত বুধবার রাত থেকে গ্যাস একেবারেই নেই। ৬ সদস্যের পরিবারের তিন বেলার খাবারই পার্শ¦বর্তী হোটেল থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। আরিফুল বলেন, আমি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। নির্দিষ্ট আয় দিয়েই পরিবার নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এখন তিনবেলা বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়ার কারণে আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে প্রচণ্ড বিপদে পড়তে হবে।

পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন জানান, তাদের এলাকায় ব্যাপক গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সকালবেলায় গ্যাস চলে যায়। গভীর রাতে গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ কম থাকে।
উত্তর শ্যামলী ও পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় সকাল ৭টার আগেই গ্যাসে চলে যায়। আবার রাত ১১টার পরে আসে। এর ফলে তাদের রান্নায় ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিমাসে গ্যাসের বিলও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। তিতাসের পাইপলাইন গ্যাস সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর বহু এলাকায় এখন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন গৃহিণীরা। কারণ তিতাসের গ্যাস সারাদিনই থাকে না। অনেকেই বলছেন, তারা বড় বিপাকে আছেন। কারণ তিতাসের লাইনের গ্যাস না পেলেও প্রতি মাসে তাদের বিল গুণ হচ্ছে।
তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিমসেই গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও ঢাকার আশপাশের এলাকায় কিছু কিছু জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকার কারণে রাজধানীর ভেতর গ্যাস সংকট প্রকট হচ্ছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়।

 

http://www.dailysangram.com/post/344556