৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৩৯

ডিএমপির কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি উল্টো বেড়েছে ভোগান্তি

রাস্তায় গাড়ি কমেছে, কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরেনি। উল্টো কোথাও কোথাও বেড়েছে জনদুর্ভোগ। বিশেষ করে বিকল্প ব্যবস্থা না করে লেগুনা তুলে দেয়ায় কোনো কোনো এলাকার মানুষ রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন। কয়েকগুণ রিকশা ভাড়া দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ দিকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও ফুটপাথ ও ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলতে পথচারীদের অনীহা আগের মতোই রয়ে গেছে। রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং আছে। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের এখনো রাস্তায় দেখা মিলছে। মোবাইল ফোন কানে ধরে গাড়ি চালানোর দৃশ্যও চোখে পড়ছে। যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার দৃশ্য তো অহরহ নজরে পড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। সাধারণ মানুষ পরিবহন মালিক-শ্রমিক কেউই পাত্তা দিচ্ছে না এ সব নির্দেশনার। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেন। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কাজ করা সত্ত্বেও গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। রাস্তার ওপর যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে। লেন মানছে না গাড়িগুলো। কোথাও যাত্রী ওঠাতে গিয়ে গাড়িগুলো এলোমেলো করে রাখা হচ্ছে; যাতে পেছনের গাড়ি সামনে যেতে না পারে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় হর্ণ বাজানো নিষেধ; সেসব এলাকাতেও উচ্চস্বরে হর্ণ বাজাচ্ছেন গাড়িচালকেরা। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই ঘটছে এসব ঘটনা। যেসব এলাকায় পার্কিং নিষিদ্ধ সেসব এলাকায়ও পার্কিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তা পার্কিং করার দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে দেখা যায় রাস্তার ওপর পার্কিং আগের মতোই রয়েছে। কোনো কোনো ভবনের সামনে অর্ধেকের বেশি রাস্তা দখল করে তিন সারিতে গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়েছে। ওই সব ভবনের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় তাদের কর্মকর্তা ও অফিসিয়াল সব গাড়ি রাস্তার ওপরেই রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে দুই-চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

রাজধানীতে রাস্তার ওপর বাজার বসছে এখনো। বাজারের কারণে কোনো কোনো এলাকায় দীর্ঘ যানজট থাকছে দিনভর। রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তার ওপর বসছে বাজার। কোনো কোনো এলাকায় হকারদের জন্য অলিখিতভাবে রাস্তা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচল আটকে দিয়ে সেসব রাস্তায় দোকান বসিয়ে ব্যবসায় করছে হকারেরা।
সাধারণ পথচারীদের সচেতন করার চেষ্টা চালানো হলেও তাদের মধ্যেও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতাই বেশি দেখা গেছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেখা যায় পথচারীদের বেশির ভাগ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না। তারা ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন। সেখানে কথা হয় আলমগীর, সাবু, তরিক ও খালিদসহ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, ফুটওভার ব্রিজ দিয়েই রাস্তা পার হওয়া উচিত। কিন্তু দ্রুত রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজ তারা ব্যবহার করেননি। দুই-একজন বলেছেন, ওভারব্রিজে উঠতে কষ্ট। তারা নিচ দিয়ে পার হয়েছেন। যে দুই-একজন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে মানিক নামে একজন জানালেন, সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। গতকাল রাজধানীর বেশ দেখে তাৎক্ষণিক আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই (নি:) মাসুদ, এএসআই (নি:) ইলিয়াস ও কং/৪০৪ তানিম আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে। অপর মোটরসাইকেলসহ আরওহীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় একটি বিদেশী ৭.৬৫ পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, ১১টি তাজা ককটেল, দুইটি ছোরা, একটি রেজি:বিহীন কালো পালসার (রেঞ্জার) মোটরসাইকেল। গোলাগুলির সময় পুলিশ পাঁচ রাউন্ড চাইনিজ গুলি, পিস্তলের ১৬ রাউন্ড গুলি, শটগানের ৩৭ রাউন্ড গুলি ব্যয় করেছে।
পরে গতকাল বেলা ১১টায় মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তারও উত্তর দেন তিনি। ওই উগ্রদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো এ সময় প্রদর্শন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রীনগর-লৌহজং সার্কেল কাজী মাকসুদা লিমা, গজারিয়া-সদর সার্কেল খন্দকার আশফাকুজ্জামান, ডিআই ওয়ান নজরুল ইসলাম, শ্রীনগর থানার ওসি মো: ইউনুচ আলী প্রমুখ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সিরাজদিখান থানায় পুলিশের সাথে গুলিবিনিময়ে নিহত উগ্রবাদী মো: আব্দুর রহমানের দেয়া বর্ণনা এবং ক্রাইম রেকর্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় নিহতদের মধ্যে একজন মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার আসামি মো: শামীম। সে মুক্তমনা ব্লগার শাহজাহান বাচ্চুর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো হত্যাকাণ্ডটি পরিচালনা করে। তার বিরুদ্ধে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুর হত্যা মামলাসহ পাঁচটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। নিহত অপরজনের নাম এখলাছুর রহমান। সে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলায় জড়িত ছিল। সে বালুরচরে নিজেই বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেছে এবং সব আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। হত্যাকাণ্ডের পরে সে নিজেই অস্ত্রগুলো গাজীপুরে নিহত রহমানের কাছে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুন সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের পূর্ব কাকালদী গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শাহজাহান বাচ্চু (৬০)। দুইটি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করার পর দ্রুত পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি বিশাখা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এ দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাবের সাথে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে আবুল হোসেন বাবু (৩৫) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। নিহত আবুল হোসেন বাবু গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের আলমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গোমস্তাপুর থানায় আটটি মাদক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় দুই র্যাব সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক।

র্যাব জানায়, গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী এলাকার একটি আমবাগানে চার-পাঁচজন মাদক কারবারি মাদক বিক্রি করছে এমন খবরের ভিত্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পের একটি দল বৃহস্পতিবার রাত ১টায় সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবকে লক্ষ্য করে মাদক কারবারিরা গুলি করলে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত দুই র্যাব সদস্যকে ওই হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও ১৭৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব। গোমস্তাপুর থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/347184