৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:২৮

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চলমান ধারায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন : নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চলমান ধারায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন’ মন্তব্য করে ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া আর্ল মিলার বলেছেন, নাজুক জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো অভিযোগে আমরা শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলে আমি বাংলাদেশে জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার কাজকে সমর্থন জোগাব।

সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটিতে এক শুনানিতে মিলার এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী মার্কিন কংগ্রেসের শুনানির সম্মুখীন হন তিনি।
মিলার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার জন্য বাংলাদেশের সামনে একটি সুযোগ। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সব ক’টি রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই অবাধে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য মত প্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া, নাগরিকসমাজ, বিরোধী দল এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের কোনো রকম নিপীড়নের ভয় ছাড়াই অভিমত ব্যক্ত করার সুযোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলে আমি বার্নিকাটের প্রশংসনীয় পদাঙ্ক অনুুসরণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আর্ল মিলার বলেন, বাংলাদেশ যেসব উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তা মোকাবেলায় আমরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে পারি। এর মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি। বার্মার রাখাইন রাজ্য থেকে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। চরম নিপীড়িত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য সীমান্ত ও হৃদয় খুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতাকে আমরা প্রশংসা করি। এই মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সর্বাধিক আর্থিক সহযোগিতা করছে। গত বছর আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার সহযোগিতা দিয়েছে। এই আর্থিক সহায়তা অনুমোদন ও অব্যাহত সমর্থনের জন্য আমরা কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় টেকসই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রোহিঙ্গাদের জরুরি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ, জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। একই সাথে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে বার্মার ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে।
বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ভালো সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে মিলার বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ছয় শতাংশ, যা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সুযোগ। বাংলাদেশের জ্বালানি, অবকাঠামো এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমান হারে উৎসাহজনকভাবে অংশ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলে আমি বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশটিতে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা জোরদার করতে সচেষ্ট থাকব

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/347204