৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৯

বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত

বারো শত মামলায় আসামি দেড় লাখ

বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্য। বিএনপির তৃণমূল থেকে মধ্যম সারির নেতাকর্মীদের অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বাসাবাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারছেন না। বিএনপি বলছে, কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে গতকাল পর্যন্ত দেড় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই গ্রেফতার চলমান। নতুন করে মামলা হয়েছে ১২ শতাধিক। নাম উল্লেখ করে আসামির সংখ্যা ১১ হাজার এবং অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। গ্রেফতার অভিযানের পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। অনেক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধেও নতুন করে মামলা দেয়া হচ্ছে। সরকার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে রাখার জন্যই বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে দলটির নেতাদের অভিযোগ। তবে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী বলছে, যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পয়লা সেপ্টেম্বর দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভার আয়োজন করে বিএনপি। কিন্তু জনসভাকে ঘিরে আগের দিন রাতেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। জনসভায় ব্যাপক উপস্থিতির পর হঠাৎ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় বেড়ে গেছে। নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ছাত্রদলের সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মফিজুর রহমান আশিক, বায়েজীদ আরেফিনসহ অনেকেই জানান, তারা ঠিকমতো বাসায় থাকতে পারেন না। সব সময় গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মো: মনির হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে নতুন করে গত শনিবার ও বুধবার দুইটি নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ মামলার বিষয়বস্তুর সাথে তার ন্যূনতমও সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মোট মামলা ৩৫টি। এসব কারণে বেশির ভাগ সময় তাকে আদালতে থাকতে হয়। গ্রেফতার আতঙ্কে ঠিকমতো বাড়িতে অবস্থান করতে পারেন না। তার মতো বহু নেতাকর্মী এ ধরনের অভিযোগ করেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র জানায়, এমনিতেই সারা দেশে ১৮ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ৭৮ হাজার মামলা ঝুলছে। নতুন মামলাও হচ্ছে। আবার পুরনো মামলাগুলো সচল করেও কাউকে কাউকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই ৩৫টি মামলা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশের পর ঢাকা মহানগরীর বহু নেতাকর্মীর নামে নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুকে প্রধান আসামি ও ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে ঢাকার লালবাগ থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি নতুন মামলা দায়ের করেছেন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: আনিসুল ইসলাম। সরফত আলী সপু জানান, তাকে যে মামলায় আসামি করা হয়েছে তার সাথে কোনোভাবেই তিনি সম্পৃক্ত নন। এটি একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিকল্পিত মামলা। এভাবে আরো অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দফতর সূত্র জানায়।
হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্য শুভ নয় জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নয়া দিগন্তকে বলেন, মতাসীন ফ্যাসিবাদী ও গণবিরোধী সরকারের ভেতরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মতা হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, সরকার আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি ভোটশূন্য নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তা চায় না। সে জন্যই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সরকার বিএনপিকে টার্গেট করেছে। যাতে বিএনপি আন্দোলন করতে না পারে। ফলে কোনো উসকানি ছাড়াই হামলা-মামলা করছে সরকার। তবে সরকার যতই নির্যাতন করুক, কৌশল গ্রহণ করুক কোনো লাভ হবে না। দেশবাসী এবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ।
বিএনপির দফতর সূত্র জানায়, বুধবার ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানায় বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার, জাবেদ কামাল রুবেল, আবু সাহেদ মিন্টু, আনু ও দেলোয়ারসহ ২০ জনের নামে দু’টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ১০টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মোট ২৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া ঈদ ও শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর থেকে কুষ্টিয়ায় দু’টি মামলায় ৫৫ জন, রাজধানীর কদমতলীতে দু’টি মামলায় ৫৫ জন, শ্যামপুরে ৯৮, ডেমরায় ১০৫, ওয়ারীতে ঢাকা মহানগর দণি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ ২২৫ জন, সূত্রাপুরে ১৩, যাত্রাবাড়ীতে ৯৯, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবসহ ৩০ জন, বগুড়ায় দু’টি মামলায় ৩৫ জন, ময়মনসিংহের ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় ১৪, হালুয়াঘাটে ৪৫, ধোবাউড়া উপজেলায় ৪৩, তারাকান্দা, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, শেরপুর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুরে ৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
এ ছাড়া ময়মনসিংহে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করেছে। নেত্রকোনার আটপাড়ায় মামলা করা হয়েছে বিএনপির ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে, নড়াইলে ৩৫ জন, নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জন, ঝিনাইদহে ১০১ জন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমূর আলম খন্দকারসহ ৫৭, পিরোজপুরে ১০, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ৩৫ জন, এবং সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় বিএনপির ৪৫৬ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশব্যাপী আবারো নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অথবা নিজেরাই নাশকতার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার করছে পুলিশ। কারণ শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার লজ্জাজনক পরাজয় হবে। সে জন্য একতরফা ভোটারশূন্য নির্বাচন করতে তিনি সারা দেশে বিরোধী দলশূন্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঢাকা সহ সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি ও পরিবার ছাড়া পলাতক জীবন বেছে নিতে হয়েছে। প্রতি দিন রাতেই পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারীরা বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের সাথে করা হচ্ছে দুর্ব্যবহার, গ্রেফতার করছে এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো মামলা দিয়ে সারাদেশকে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের বাহিনীগুলো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। দমন-পীড়নের তীব্র মাত্রার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তির ক্ষয় হয়নি। জনগণের নীরব ক্ষোভ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সরকার যত জুলুম করছে ততই সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। জনগণের সাথে প্রতারণার মাশুল সরকারকে দিতেই হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা গেফতারি পরোয়ানা রয়েছে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে, এর বাইরে কোনো গ্রেফতার নেই।
মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিএনপির ১১ ও জামায়াতের ৮ জন স্থানীয় নেতাকর্মী রয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার ভোর রাতে জেলার গাংনী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, বুধবার মধ্যরাতে রাজনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি-জামায়াতের বৈঠক চলাকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের নামে সদর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন অবিলম্বে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ ও গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
সাতীরা সংবাদদাতা জানান, সাতীরা সদর উপজেলার বকচরা আহমাদিয়া দাখিল মাদরাসার ৯ জন শিককে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ১২টায় মাদরাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশের দাবি- মাদরাসায় তারা গোপন মিটিং করছিলেন।
আটককৃতদের মধ্যে সাতীরা সদর পশ্চিম জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা শাহাদাত হোসেন, আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুস সামাদ ছাড়াও রয়েছেন সহকারী শিক গোলাম সরোয়ার, হাফিজুর রহমান, আবুল খায়ের, মোজাম্মেল হক, মোজাফফর হোসেন, আজম ফারুক ও আব্দুল হামিদ।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মহিদুল ইসলাম জানান, জামায়াত সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন শিক বকচরা আহমাদিয়া দাখিল মাদরাসায় চাকরি করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদরাসার একটি কে তারা গোপন মিটিং করার সময় তাদের আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে তিনি জানান।
মাদরাসার সুপার মো: রমজান আলি জানান, তিনি গত ১ এপ্রিল ওই মাদরাসায় যোগদান করেছেন।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১২ জন পুরুষ শিক্ষকের মধ্যে ৯ জনই আটকের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আটকের সময় সুপার রমজান কিছুক্ষণের জন্য মাদরাসার বাইরে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাদরাসা সুপার বলেন, এটা অনাকাক্সিত ঘটনা। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কেউ জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত কি না তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে আটকের সময় সব শিক্ষক কাস নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন বলে জানান।
সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাচাই বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশ বুধবার সন্ধ্যায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও যুবদলের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার পাঁচখুপি গ্রামের বিএনপির সদস্য হুমায়ুন সরদার (৩৩), উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়া পৌর যুবদলের সদস্য হুমায়ুন কবির (২৮) ও বড় চাপড়া গ্রামের থানা যুবদলের সদস্য শামসুল শাহ (৪৯)।
দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রেফতারকৃত তিনজনসহ বিএনপি-জামায়াতের ৩১ জনের নামে বিশেষ মতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত তিনজনকে গতকাল বিকেলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বগুড়া আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নিয়ামতপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মাইনুল ইসলাম মিনুকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। থানা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকাল ৬টায় নিয়ামতপুর থানা পুলিশ নিয়ামতপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের সেফায়েতপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মাদের ছেলে মাইনুল ইসলাম মিনুকে বিশেষ মতা আইনে গ্রেফতার করে। নিয়ামতপুর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে সন্দেহে বিশেষ মতা আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে গত বুধবার রাতে বগুড়ার শেরপুরের ছোনকা বিএনপির আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বৈঠক করাকালে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সেখান থেকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: হুমায়ুন কবীর বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টার প্রস্তুতিমূলক গোপন মিটিং চলাকালে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

যশোর অফিস জানায়, যশোর জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপি নেতারা। তারা নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি ও মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রবাসী ও হজ পালনে মক্কায় অবস্থানকারীও পুলিশের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না।

এক সপ্তাহে যশোরের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা পাঁচটি মামলায় বিএনপির দুই শ’ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়ালেও পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে ভীতি সৃষ্টি করছে। এতে পরিবারের মহিলা ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট ঝিকরগাছা থানা পুলিশের দায়ের করা নাশকতার দু’টি মামলায় সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃবৃন্দসহ আসামি করা হয়েছে ৬৮ জনকে। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৪ জনকে। এসব মামলা থেকে বাদ পড়েনি পবিত্র হজ পালনে সৌদি অবস্থানকারী বাবলু ও দীর্ঘ দিন মালয়েশিয়া প্রবাসী মুজিবুল এলাহী মিঠু।

ঝিকরগাছা থানার এসআই কামরুজ্জামান জিয়া বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক এমপি জামায়াত নেতা মোহাম্মদ আবু সাঈদ, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুন অর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা এলাহী টিপু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমসহ বিএনপি-জামায়াতর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। এ মামলায় ৯ জন জেলহাজতে রয়েছেন। মামলার ১২ নম্বর আসামি মোবারকপুর গ্রামের মুজিবুল এলাহী মিঠু গত ৪ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা এলাহী টিপু।

গত ১ সেপ্টেম্বর থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম বাদি হয়ে ৩০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে ১৫ জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার ২৪ নম্বর আসামি উপজেলার নাভারন ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের হাজী নিজাম উদ্দিনের ছেলে বাবলুর রহমান। তার পরিবার জানায়, এক মাস আগে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বাবলু সৌদি আরবে রয়েছেন।

ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা এলাহী টিপু জানিয়েছেন, পুলিশ গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছা থানায় দু’টি কথিত নাশকতামূলক মিথ্যা মামলায় ৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৪ জন জেলহাজতে রয়েছেন। অন্য আসামিরা পালিয়ে বেড়ালেও পুলিশ বাড়িবাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে ভীতির সৃষ্টি করছে। ফলে পরিবারের মহিলা ও শিশুরা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিএনপি নেতারা জানান, গত ৩১ আগস্ট শার্শা উপজেলায় বিএনপির আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৩৮নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। জেলার মনিরামপুর উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও নতুন করে মামলা করেছে পুলিশ।

বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ মামলা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি এসব মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ ও জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি ও মিথ্যা মামলা দায়েরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন যশোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন।
তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপে আচরণ করার আহবান জানান।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার বলেন, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সঠিক নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক করছে না। যাদের নামে মামলা আছে তাদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রবাসীর নামে মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। যদি তিনি প্রবাসী হন তাহলে তার নামে মামলা হবে না।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তিনি উপজেলার দামগাড়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে এসআই চাঁন মিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে নিজ এলাকা থেকে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে।

পুঠিয়া (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, পুঠিয়ায় পৌর বিএনপি নেতা শাহ আলম ও ঊপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আহমাদ উল্লাহসহ শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। গত কয়েক দিনে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই কাউকে-না-কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে শত শত নেতাকর্মী ঘরছাড়া রয়েছেন।
এলাকার প্রবীণ বিএনপি নেতা আব্দুস সোবহান সরকার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চলছে। সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার তাদের মাঠছাড়া করার অংশ হিসেবে গ্রেফতার ও মামলা দেয়া শুরু করেছে। পুঠিয়া থানার ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি এএসপি (হেড কোয়ার্টার) আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এএসপি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/346913