২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:২৬

‘চামড়া সিন্ডিকেটে রাজনৈতিক কর্মী, ক্লাব’

চামড়ার দাম নিয়ে ট্যানারি মালিকরা কোনো সিন্ডিকেট করেননি দাবি করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কম হওয়ার জন্য দায়ী স্থানীয় সিন্ডিকেট। এছাড়া স্থানীয় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে চামড়ার দাম কমিয়েছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিটিএ’র অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিটিএ’র সভাপতি শাহিন আহমেদ। এ সময় সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মাজাকাত হারুন, সহ-সভাপতি ইলিয়াসুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ ও কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। শাহিন আহমেদ বলেন, পাড়া-মহল্লাভিত্তিক সিন্ডিকেট হয়। এখানে দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী, সামাজিক ক্লাবভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন এলাকাভিত্তিক চামড়ার দাম তারা নিয়ন্ত্রণ করে।
তারা যদি ২০০-৩০০ টাকা করে চামড়া ক্রয় করে, ট্যানারি মালিকদের এখানে কী করার আছে?

খুচরা ব্যবসায়ী এবং চামড়ার আড়তদারদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এখনো যারা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি, তাদের লোকসানের আশঙ্কা নেই। আপনারা কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। ট্যানারির প্রতিনিধিরা তিন থেকে চারদিনের মধ্যে আড়তদারদের কাছে থেকে নির্ধারিত মূল্যে লবণযুক্ত চামড়া নিয়ে আসবে। তবে লবণ দিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে সেই চামড়া নেয়া যাবে না।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের বলেন, দুশ্চিন্তা করবেন না। চামড়া সংগ্রহে আমাদের এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আমরা ৫৫ থেকে ৫৫ লাখ গরুর চামড়া এবং ৩০ থেকে ৩৫ লাখ ছাগলের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। এরই মধ্যে আমাদের সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে বলে মনে করছি।

শাহিন বলেন, চামড়া শিল্পে ক্রান্তিকাল চলছে। বেশিরভাগ ট্যানারি উৎপাদনে নেই। গত বছরের ৪০-৪৫ শতাংশ চামড়া এখনো অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। চামড়া শিল্পের এমন দশার নেপথ্যে রয়েছে সরকারি সহায়তা না থাকা আর পুঁজির সংকট। তবুও আমরা সব চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিটিএর সভাপতি বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ট্যানারি শিল্প গড়ে না ওঠার দায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখানে যে বিনিয়োগ করেছিল ট্যানারি মালিকরা, তা মাঠে মারা গেছে। বারবার সময় বাড়িয়েও এ পরিকল্পিত শিল্পনগরীর কাজ শেষ না হওয়ার দায় বিসিকের।

সভাপতি বলেন, চামড়ার দাম ও চাহিদা কমার পেছনে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরও একটা বড় কারণ বলে জানান বিটিএর সভাপতি। আমরা পুঁজি সংকটে ভুগছি। আর্থিকভাবে আমরা সরকারি কোনো সাহায্য পাইনি। স্থানান্তরিত ট্যানারিতে আমরা এখনো উপযুক্তভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। যে কারণে এ শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। বিসিক এখনও আমাদের উপযুক্ত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা দিতে পারেনি। যে কারণে এ শিল্প ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এর দায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। বারবার সময় বাড়িয়েও এ পরিকল্পিত শিল্পনগরীর কাজ শেষ না হওয়ার দায় বিসিকের।

গত ৩০ বছরে কাঁচা চামড়ায় ধস নেমেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা বলব, এটা ঠিক নয়। বরং এ ধরনের খরব চাউর হলে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পাচার রোধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এক মাস অন্তত সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হোক, যাতে কঠোরভাবে চামড়া পাচার রোধ করা যায়।

সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে গত দুই বছর চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয়নি। ফলে রপ্তানিও কমেছে। এ ছাড়া নিজস্ব অর্থে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে পুঁজি সংকটে রয়েছে ট্যানারি মালিকরা। এবার মাত্র ৪২ ট্যানারিকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। বাকিরা পায়নি। এ অবস্থায় অনেক ট্যানারি মালিক আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে চাহিদা কম। এসব কারণে কাঁচা চামড়ার দাম কমে গেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানির সুযোগ আগে থেকে কমে গেছে। আর গত বছরের চামড়া এখনো রয়ে গেছে। সেজন্য ব্যবসায়ীদের এবার চামড়া কেনার আগ্রহ কম। আর চাহিদা কম থাকায় দামও কম। এছাড়া চীন বাংলাদেশের চামড়ার প্রধান রপ্তানি বাজার। কিন্তু সেখানে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি মার্কেটেও মন্দা দেখা দিয়েছে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=132239