২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৫২

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা

মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ল আরো ১০ বছর

অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কারসহ এরই মধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের শুরু হতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক প্রায় এক হাজার পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে এবং বাজার মূলধন ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন এবং বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ ও আস্থা কমছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বাজারে নিম্নমুখিতা অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে গত মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে একটি সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশে বাজারে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ পরবর্তী এক মেয়াদে আরো ১০ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। চলতি আগস্ট মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো একটি সুপারিশে অনুরূপ প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন-১৯৯৩ এর সংশ্লিষ্ট ধারামতে পুঁজিবাজারের সমসাময়িক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পূর্তি হবে এমন ফান্ডগুলোর প্রতিটির মেয়াদ পরবর্তী এক মেয়াদে ১০ বছর বৃদ্ধি করা যায়। পরে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এ মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদকাল বৃদ্ধি করলে বাজারে দু’টি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর একটি কারণ হচ্ছেÑ পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের সময় বাজারকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে ফান্ডগুলো যে ভূমিকা রাখে তা অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মার্কেট মেকার না থাকলেও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সীমিত আকারে হলেও মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করতে পারে। ফলে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায়, আইসিবির প্রস্তাবানুযায়ী এ বিভাগের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিএসইসি কর্তৃক সম্প্রতি আইসিবির ইউনিট ফান্ডের মেয়াদ এর আগে এক বছর করে মোট দুই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজারে নানামুখী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও দেশে শিল্পায়ন অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এ খাতের অবদান পর্যাপ্ত নয়। দেশের পুঁজিবাজার এখনো ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে ইক্যুয়িটি নির্ভর বাজার থেকে বের হয়ে ‘ডেরিভেটিভস’, বন্ড মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়েছে, ‘মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবসায়ন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যার অবসায়ন বা সঙ্কোচন ঘটলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি ন্যায্যমূল্য ফেরত পাবে তার নিশ্চিত নয়। কারণ মেয়াদি ফান্ডগুলো তাদের অবসায়ন প্রক্রিয়ায় বাজারে বিশাল অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করলে সার্বিক পুঁজিবাজারে সূচকে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টির আশঙ্কার সৃষ্টি হবে। এর ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শুধু তাদের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং তাদের সার্বিক পোর্টফলিওতে ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।’
এসব কারণ বিবেচনায় এনে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/343578