২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৪:০৮

আস্থা আস্থাহীনতা ও বিশ্বাসভঙ্গের প্রশ্ন

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

সম্প্রতি রাজধানীতে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে এবং অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সে আন্দোলন প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অবশ্য অনেকটা তড়িঘড়ি করে সরকার শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এতে আশ^স্ত হয়নি। বরং সরকারের বারবার দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা স্বত্ত্বেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল। তারা তাদের দাবির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেছিল। যদিও রাতারাতি তাদের সকল দাবির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা তা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই সরকার দাবি মানার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন বেশ সহজসাধ্য হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। যেমনটি হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে। উভয় ক্ষেত্রে একটা নেপথ্য শক্তি ক্রিয়াশীল আছে বলেই মনে হচ্ছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এমন জিদকে খুব অল্পজনই বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছেন। সরকার শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান ও একগুয়েমীকে বিরোধীদলীয় ভূতের আছর হিসেবে দেখছে। অবশ্য সব কিছুতেই বিরোধী দলকে জড়ানো সরকারের মুদ্রাদোষেই পরিণত হয়েছে। কিন্তু কারো ওপর দোষ চাপিয়ে তো বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। তবে আত্মসচেতন মানুষ বলছেন ভিন্নকথা। তারা দাবি করছেন যে, অতীতে বিশ্বাসভঙ্গের কারণেই শিক্ষার্থীরা সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারেনি। তাদের পরিণতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভাগ্য বরণ করে কি না সে সংশয় তাদের পিছু ছাড়ছে না এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সে ভাগ্যই বরণ করতে হয়েছে।

মাত্র কয়েক দিন আগেই সরকার কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার রীতিমত ডিগবাজী মেরেছে একথা কারো অজানা নয়। ছাত্ররা সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি করলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু তারা তাদের সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিষয়টিকে বারবার সামনে এনে তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছে। ফলে পরিস্থিতি যে প্রান্তিকতায় গিয়ে পৌঁছেছে এতে কেউ সন্দেহ করছেন না। কিন্তু এ জন্য সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। কারণ, ওয়াদা ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে সরকারের পক্ষ থেকেই। ফলে সরকারের প্রতি আস্থার জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
সরকারের এমন ওয়াদা ভঙ্গের মহড়াকে অনেকেই রাষ্ট্রীয় আচার বহির্ভূত হিসেবেই দেখছেন। কারণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নয় বরং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতাও রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সম্প্রতি দুঃখজনক ঘটনারই অবতারণা হয়েছে। ফলে এবারের আন্দোলনে সরকার শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা মোটেই আশ্বস্ত হয়নি। কারণ, কোটা আন্দোলন বিষয়ে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। এমনকি দাবি মানার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার দলন-পীড়ন চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অহেতুক মামলা দিয়ে রিমান্ডের নামে নির্যাতনের অভিযোগও আছে সরকারের বিরুদ্ধে। আর রাষ্ট্রই যদি জনগণর কাছে কৃত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারে তাহলে তারা নাগরিকদের কিভাবে প্রতিশ্রুতি পালনে বাধ্য বা অনুপ্রাণিত করবে এই প্রশ্নের উত্তরটা মোটেই সহজসাধ্য নয়। আর এই মওকাটা শিক্ষার্থীরাও কাজে লাগাচ্ছে বেশ সফলতা ও সার্থকতার সাথেই।

শিক্ষার্থীদের সর্বসাম্প্রতিক আন্দোলনে দেশে যে অচলাস্থার সৃষ্টি হয়েছিল এজন্য সাধারণ মানুষই সরকারকেই দায়ী করছেন। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে যেমন আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করেছে, ঠিক তেমনিভাবে এবারের ছাত্র আন্দোলন প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছে। দাবি মানার ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানকে কেউই বাঁকা চোখে দেখেননি বরং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই আন্দোলনকে একটা যৌক্তিক পরিণতির দিকেই নিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আত্মসচেতন মানুষ আন্দোলনকারীদের আস্থাহীনতার জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন। রাষ্ট্রের পক্ষে এমন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে একেবারে নজীরবিহীন। ফলে আস্থা-অনাস্থার যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা সমধানের দায়িত্ব সরকারের ওপরই পড়েছে। এ দায় সরকার কোন ভাবেই এড়াতে পারে না।

আইনের শাসন, শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোন অজুহাতেই রাষ্ট্র এই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌম ক্ষমতা এ চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাষ্ট্রে শাসন কাজ পরিচালনার জন্য যারা নিয়োজিত থাকেন তাদের সমষ্টি হচ্ছে সরকার। রাষ্ট্রকে জাহাজের সাথে তুলনা করলে সরকারতে তার ক্যাপ্টেন বা চালকের সাথে তুলনা করা যায়। সরকারের মাধমেই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। মূলত সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার ওপর রাষ্ট্রে সফলতা-ব্যর্থতা পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাই সরকার যদি সফল হয় তাহলে জনজীবনে স্বস্তি থাকে; অন্যথায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সরকার দেশের ক্যান্টেন বা চালক হিসেবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি বরং সরকারের নির্লিপ্ততা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে গণঅসন্তোষ ক্রমেই দানা বেধে উঠছে।

অধ্যাপক গার্নার ( Garner) এর মতে, ‘রাষ্ট্র হল বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক জনসমাজ, যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে, যার প্রতি ঐ জনসমাজ স্বভাবতই অনুগত’। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অনেক দুর্বলতার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আমাদের সরকার অসংগঠিত। এমনকি সরকারের নিয়মতান্ত্রিকতা নিয়ে প্রশ্নটাও বেশ জোরালো। তাই একটি প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের প্রতি জনসমাজ স্বতঃষ্ফূর্তভাবে অনুগত হয় না। আনুগত্যহীন জনসমাজ নিয়ে কোন জাতি সামনের দিকে এগোতে পারে না। জনগণের আনুগত্য ছাড়া রাষ্ট্র বা সরকার কোনটাই সফল হয় না। আর এ ধরনের সরকারের ভিত্তি সব সময়ই দুর্বল। সঙ্গত কারণেই তাদেরকে সব সময় আত্মরক্ষার চিন্তায় তটস্থ থাকতে হয়। যেহেতু সরকারের ওপর জনসমাজের আনুগ্যের বিষয়টি নিরঙ্কুশ নয় তাই সরকার কোন ভাবেই সুসংগঠিত নয় বলেই ধরে নেয়া যায়। কোন অসংগঠিত সরকার হয়তো ক্ষমতায় চর্চা করতে পারে কিন্তু তা কোন ভাবেই গণমুখী হতে পারে না। আমাদের দেশের আর্ত-সামাজিক প্রেক্ষাপট তার বাস্তব প্রমাণ।

একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই কমবেশী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তাই যত কথায় বলা হোক না কেন দেশকে দুর্ঘটনামুক্ত করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্ঘটনার প্রবণতাটা অন্যদেশের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সুশৃঙ্খল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই এর নেতিবাচক প্রভাবটা রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের সাথেই ক্রিয়াশীল। খুব সঙ্গত কারণেই দেশের পরিবহণ সেক্টরও এ থেকে মোটেই আলাদা নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনবহুল আমাদের এই দেশে পরিবহণ সেক্টরে সীমাহীন নৈরাজ্যের কারণেই আমাদের দেশে এখন সবচাইতে বেশী দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের পরিবহণ সেক্টর যে খুবই নৈরাজ্য প্রবণ তা একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে খুবই স্পষ্ট। ফলে আত্মসচেতন মানুষের মধ্যে এ ধারণাও বদ্ধমূল হয়েছে যে, শুধু পরিবহণ সেক্টর নয় বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার ছাড়া কোন ভাবেই দেশকে দুর্ঘটনামুক্ত করা সম্ভব হবে না। আইন ও সাংবিধানিক শাসনও নিশ্চিত করা যাবে না। মূলকে ত্রুটিমুক্ত না গেলে শাখা-প্রশাখা নিয়ে টানাটানি খুব একটা ফলবতী হবে বলে মনে হয় না।
সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েই বেশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। মনে হয় তারা এবার অসাধ্য সাধন করেই ফেলেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবি রাজপথে নেমে আসায় প্রমাণ হয় যে, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় মোটেই সফলতার সাক্ষর রাখতে পারেনি। যদি তারা সফলই হতেন তাহলে দাবি আদায়ের জন্য শিশুদের রাজপথে নেমে আসতে হতো না। কারণ, তাদের এসব বোঝার কথা নয়। এদের এখন খেলাধুলা করার বয়স। কিন্তু সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতায় এসব শিশুদের আত্মসচেতন করে তুলেছে। দেশের পরিবহণ সেক্টরে যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে তা তো শিক্ষার্থীরাই সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রাস্তায় অনুমোদন বিহীন ও মানহীন যানবাহন, লাইসেন্সহীন ড্রাইভাররা পুরো পরিবহণ ব্যবস্থাকে জিম্মি করে রেখেছে। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলারা যে আইন মানেন না তাও এইসব আন্দোলনরত শিশুদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পেরেছি।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে দেশের পরিবহণ সেক্টরের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বলা হয়েছে, দেশের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫.৩৬ ও ২০ লাখ। কিন্তু বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে মাত্র ২৬.৩৯ লাখ। এতে প্রমাণ হয় ৯ লাখ নিবন্ধিত যানবাহনের ড্রাইভারই লাইসেন্সবিহীন। আর অনিবন্ধিত যানবাহনের ড্রাইভারদের লাইসেন্স থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। ফলে আমাদের দেশের পরিবহণ সেক্টরে অনিবন্ধিত যানবহান ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার দৌরাত্ম্যটা রীতিমত চোখে পড়ার মত। আবার ড্রাইভারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে টিন এজার। এদের অধিকাংশের বয়স ১৪-১৫ এর মধ্যে। ফলে পেশাগত ক্ষেত্রে তাদের অদক্ষতার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। আবার এদের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবার মাদকাশক্ত। মূলত এসব কারণেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী ঘটছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। ফলে পুরো পরিবহণ সেক্টর নিয়ন্ত্রণ হয়ে পড়েছে।

দেশের পরিবহণ সেক্টরের যে এমন বেহাল অবস্থা তা আমরা জেনেছি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরুর পর। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা রাস্তায় নামলে যে ভুতের পিটে সওয়ার হই এ অনুভূতি ছাত্ররাই আমাদের মধ্যে জাগ্রত করেছে। ২৯ জুলাইয়ের ঘটনার পর পরিবহণ সেক্টরের আরও ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এমনকি সেদিনের দুর্ঘটনা কবলিত বাসেও রুট পারমিট ছিল না এবং ড্রাইভাররাও লাইসেন্সবিহীন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতিবছর সকল দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সংস্থার মতে গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। দুর্ঘটনা প্রায় ৫ হাজার। বিআরটিএর সূত্রমতে দেশে ভাড়ী যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। সংস্থাটি ডাইভারদের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করেছে ১.৩৮ লাখ। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রায় ৭০ হাজার ভারী যানবাহন লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভাররাই চালিয়ে থাকেন। ফলে দেশের পরিবহণ সেক্টর মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই বাড়ছে। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামীতে এদের দৌড়াত্ম্য যে আরও বৃদ্ধি পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার ও পরিবহণের জন্য একাধিক মন্ত্রণালয় থাকার পরও পরও গণপরিবহণের এই দৈন্যদশা ও সীমাহীন নৈরাজ্য সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার দিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করে। সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। অবশ্য এই উদ্যোগ সরকারকে আগেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করা উচিত ছিল। এটা সরকারের ব্যর্থতার একটা দলিল। যাহোক সরকারের এই বিলম্বিত ও দায়ে পরা উপলব্ধি প্রশংসা করার আগে একথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে, সুশাসনের জন্য আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয় বরং এ জন্য সরকারকে ন্যায়বান হওয়াও জরুরি। দার্শনিক প্লোটোর ভাষায়. ‘When the prince is virtuous, laws are unnecessary; when prince is not virtuous useless..’ অর্থাৎ যখন শাসক হবেন ন্যায়বান, তখন আইন নিষ্প্রয়োজন। আবার যখন শাসক দুর্নীতিপরায়ণ হন আইন তখন হবে নিরর্থক।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসায় তাদের ৯ দফা সরকার মেনে নিয়েছে। কিন্তু বিষয়টির সমধান হচ্ছে না। একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, অন্য দিকে অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট ও সরকারের বলদর্পিতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান একেবারেই অসাধ্য নয়। এখানে শুধুই আস্থা-অনাস্থার সংকটটাই সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এই সংকটা তৈরি হয়েছে অতীতে অঙ্গীকার পুরুণের ব্যর্থতা থেকে। তাই ছাত্র আন্দোলন সহ সকল ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারেরই। আর এ ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। অন্যথায় আমাদের মু্িক্ত সহজসাধ্য হবে না। মনীষী থমাস পেইনের ভাষায়, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ঠ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। জনগণ সরকারের কাছে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণই আশা করে।

http://www.dailysangram.com/post/342789