২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৩:৪১

খানাখন্দে ভরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে অগণন খানাখন্দে ভরা সড়কে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়েই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করতে নগর ছেড়েছিল। বেহাল সড়ক পাড়ি দিতে দুর্ভোগের অন্তঃ ছিল না। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা দণি চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ভোগ হবে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এমন আশ্বাসের সুফল পায়নি জনগণ। ফিরতি পথেও একই অবস্থা। ফলে বিস্তীর্ণ সড়কজুড়ে হাজারো গর্ত আর ন্যাড়া সড়ক দিয়েই গন্তব্যে ছুটে চলা কক্সবাজার গমনাগমনকারী স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সড়কসংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে দণি চট্টগ্রামের রাস্তাগুলো দোহাজারি সড়ক বিভাগ রণাবেণ করে থাকে। আর উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগ। দোহাজারী সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা ৩০৯ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগই সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে ব্যাপক তিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পটিয়া শান্তিরহাট থেকে লোহাগাড়ার আধুনগর পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এই অংশটি বৃষ্টিপাতে ব্যাপক তিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কক্সবাজারগামী মহাসড়কটি এখন উন্নয়ন কাজের কারণে অনেকটা চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শাহ আমানত সেতুর অপর প্রান্তেও কক্সবাজারমুখী এবং আনোয়ারা-বাঁশখালীমুখী সড়ক বিভাজনকারী ওয়াই জংশন পর্যন্ত সড়কেরও একই চিত্র। সড়কের এই বেহাল অংশজুড়ে অসংখ্য গর্ত ও বেশির ভাগ স্থানে বিটুমিনবিহীন নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। এতে গাড়ি চলাচল বিঘিœত হয়ে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টদের দাবি। বিশেষ করে ব্যক্তিগত যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে দীর্ঘ সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।

এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, লোহাগাড়ার আধুনগর থেকে আমিরাবাদ, পুরাতন বিওসি মোড়, পদুয়া, সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকান থেকে সাঙ্গু ব্রিজের কাছাকাছি পর্যন্ত, দোহাজারি, পটিয়া বাইপাস সড়কের শিকলবাহা সেতু পর্যন্ত কোথাও কোথাও অসংখ্য ছোট বড় গর্ত, কোথাও কার্পেটিং উঠে গেছে, কোথাও আবার গ্রামের কাঁচা সড়কের মতো অবস্থা। সড়কের আমিরাবাদ, দোহাজারি এবং পটিয়া অংশে অবস্থা এমন যে পুরো রাস্তাই যেন কঙ্কালশার হয়ে গেছে। এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী ব্রিজের বেহাল অবস্থা তো আছেই। কোরবানির ঈদের আগে সড়কের এমন বেহাল অবস্থা হলেও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সড়ক বিভাগের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। ফলে ভাঙাচোরা রাস্তায় যেমনি ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল, তেমনি যানবাহনের গতি কমে যাওয়াতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

বেশির ভাগ সড়কেরই বিটুমিনের প্রলেপ উঠে পুরো সড়ক ন্যাড়া হওয়ার পেছনে নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহারকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রকৌশলী জানান, একসময় সড়কের জন্য ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ছিল মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত। কিন্তু দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই গ্রেডের বিটুমিনের ব্যবহার কার্যকারিতা হারাচ্ছে। প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যেসব সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব সড়ক গড়ে ৭ থেকে ১০ বছরও টিকেছে। কিন্তু এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। গুণগত মানে পাতলা ও বন্ডিং (বিটুমিনের কংক্রিট ধারণমতা) কম হওয়ার কারণে গরমের সময় এ ধরনের নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহারে তৈরি সড়কগুলো গলে কাদার আকার ধারণ করে। পুরো সড়কজুড়ে ঢেউয়ের মতো গলে যাওয়া বিটুমিন সৃষ্টি হয় অসংখ্য ছোট বড় গর্ত। আর বৃষ্টির সময় বিটুমিন নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়কের এসব অংশে পানি ঢুকে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343302