২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৪৫

ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন মহাসড়কে

ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে সড়ক-মহাসড়ক ছেয়ে গেছে। এর বেশির ভাগ যানবাহনই লক্কড়ঝক্কড়। জোরাতালি দিয়ে এসব পরিবহন রাস্তায় নামানো হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এসব যানবাহনই যাত্রী বহন করছে দূরপাল্লার। ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহনের কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ দিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা বলেছেন, পরিবহন সঙ্কটের কারণে এসব যানবাহন তারা রাস্তায় নামাতে বাধ্য হয়েছেন। দূরপাল্লার যে যানবাহন আছে তার চেয়ে ঈদ মওসুমে চাহিদা অনেক বেশি। একাধিক মালিক বলেছেন, সাধারণ সময়ের তুলনায় ঈদের সময় দ্বিগুণেরও বেশি পরিবহন দরকার। ফলে এই সময় বাধ্য হয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনও রাস্তায় নামাতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদ মওসুমে গাড়ির ড্রাইভাররাও থাকেন বেপরোয়া। আর যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের কারণে এই সময়ে দুর্ঘটনা বেড়ে যায় আশঙ্কাজনকহারে। প্রতি ঈদে দেখা যায় গড়ে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসব মানুষ নাড়ির টানে ছুটে গেলেও দুর্ঘটনার কারণে সবকিছু নিরানন্দ হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গতকালও ফেনীতে দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যেসব বাস রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে সেসব যানবাহন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এমনকি, যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসেও দেখা যায় যাত্রীরা চেপে বসেছেন ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য। এই বাসের যাত্রীরা বলেন, তারা বাসটি রিজার্ভ করেছেন। টিকিট না পেয়ে একই এলাকার বাসিন্দারা মিলে মানিকগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাসটি ভাড়া করেছেন। যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, ঝুঁকি তারাও বুঝতে পারছেন, কিন্তু কিছুই করার নেই। এভাবেই যেতে হবে।

সূত্র জানায়, ঈদের সময় পরিবহন শ্রমিকদেরও বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিশেষ করে ড্রাইভারদের এক নাগারে দুই-তিন দিন গাড়ি চালাতে হয়। তারা বিশ্রামেরও সময় পান না। এ কারণে তারা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েন। একাধিক শ্রমিক নেতা বলেছেন, তাদের যে পরিমাণ দক্ষ ড্রাইভার দরকার তা নেই। ফলে ড্রাইভারদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়।
পরিবহন সূত্র জানায়, প্রায় তিন হাজার বাস সারা বছর মহাসড়কে চলাচল করে। এরমধ্যে গাবতলী থেকে প্রায় ১৮০০। সায়েদাবাদ থেকে প্রায় ২০০০ এবং মহাখালী থেকে প্রায় ৮০০ বাস চলাচল করে। এ ছাড়া জেলা শহরগুলো থেকে দুই হাজার গাড়ি চলাচল করে। সারা বছরের জন্য এটা পর্যাপ্ত বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। তবে ঈদের সময় এটা পর্যাপ্ত নয়।
যে সংখ্যক লাইসেন্সধারী চালক রয়েছে তাও ঈদের সময় পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছে পরিবহন সেক্টর। ফলে এই সময় লাইসেন্সবিহীন অনেক চালক রাস্তায় নেমে যায়। লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি আর অদক্ষ চালকদের কারণেই ঈদ মওসুমে সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল নামে। নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। যাদের দায়িত্ব শ্রমিক তৈরি করা তারা তা করছে না। সরকারের দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। এই সুযোগে অদক্ষ শ্রমিকেরা গাড়ি চালাচ্ছে। আর দুর্ঘটনা ঘটছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেন, রাস্তায় ৩২ লাখ গাড়ি রয়েছে। চালক রয়েছে ২১ লাখ। বাকি গাড়ি চালানোর কোনো লোক নেই। যে কারণে লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ শ্রমিকেরা গাড়ি চালাচ্ছে। দক্ষ চালক তৈরি না করে একের পর এক গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343082