২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১১:২৫

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ১০ পশ্চিমা দূতের বৈঠক

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বেশ কয়েকজন পশ্চিমা কূটনীতিক দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। গতকাল দিনের শুরুতে ১০ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের একটি দল পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। ওই দলে ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের ঢাকাস্থ কার্যালয়ের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সসহ ওই জোটের সদস্য ৮ দেশের আবাসিক মিশনের প্রধান এবং ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- পশ্চিমা দূতরা নিজে থেকেই সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।

সচিবের দপ্তর সংলগ্ন সভাকক্ষে তারা বৈঠকে মিলিত হন। এক ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সন্দেহভাজনদের আটক-রিমান্ড, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র মতে, এই মুহূর্তে পশ্চিমা বেশির ভাগ রাষ্ট্রদূতই ঢাকায় নেই।


মূলত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরাই সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। তারা মোটা দাগে সরকারের প্রতি যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেন তা হলো- রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যেভাবে তার সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে কোনো একটি ঘটনা বা কঠিন পরিস্থিতি যেন সেই অর্জনকে ম্লান করে না দেয়।

পশ্চিমা কূটনীতিকরা ‘ডিফিক্যাল্ট চ্যালেঞ্জ’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন জানিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ঢাকার এক কূটনীতিক মানবজমিনকে বলেন- আসলে তারা সম-সাময়িক ঘটনাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আরো স্পষ্ট করে বললে- নিরাপদ সড়কের দাবিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই বুঝিয়েছেন তারা।

ভিন দেশি জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিকরা বরাবরের মতো গতকালের বৈঠকেও সব পক্ষের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূিচ পালনের অধিকারসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। সচিব ও পশ্চিমা দূতদের আলোচনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আটক দেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী শহীদুল আলমের বিষয়টি স্থান পায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সচিব ও দূতদের বৈঠককে ‘অনানুষ্ঠানিক এবং নিয়মিত’ বৈঠক হিসাবেই দেখছেন। এক কর্মকর্তা বলেন- এমন বৈঠক প্রায়ই হয়। তবে এবার সংখ্যায় একটু বেশী এবং তারা একসঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের পশ্চিমা বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা সরকারকে জানিয়েছেন শহীদুল আটকের বিষয়ে তাদের নিজ নিজ দেশের সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যম খুবই উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে চলেছেন। দূতাবাসের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের কাছেও তারা তার মামলার বিষয়ে প্রায়শই জানতে চান।

তারা এ নিয়ে তাদের হেড কোয়ার্টারের বেশ চাপে আছেন বলেও জানান বিদেশি কোনো কোনো কূটনীতিক। তবে প্রায় সব কূটনীতিকই আন্দোলন চলাকালে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর হেলমেটধারী বাহিনীর আক্রমণের নিন্দা জানান। তারা এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের অনুরোধ জানান। যদিও সরকারের তরফে ছাত্রদের ব্যাগ থেকে চাপাতি নিয়ে আক্রমণের সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয়। কূটনীতিকরা আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তার না করে সাধারণ ছাত্র এবং যারা শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল তাদের হয়রানির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এদিকে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়ি বহরে হামলার বিষয়েও জানতে চান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে এ ঘটনা পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ বিষয়েই জানার আগ্রহ ছিল তাদের। এ নিয়ে এক কূটনীতিক বলেন- আলোচনায় বিষয়টি তুলেন ইউরোপের এক কূটনীতিক।

সম-সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিষয়টি আসে। এ নিয়ে আলাদা কোনো কথা হয়নি। পররাষ্ট্র সচিব কূটনীতিকদের বলেছেন- হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক। বিশ্বব্যাপী ‘বিদেশী বান্ধব বাংলাদেশ’ এর যে ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে, এ হামলা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

সচিব প্রশ্ন রাখেন মোহাম্মদপুর এলাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নৈশভোজে যাওয়ার বিষয়টি কেন আগে থেকে পুলিশকে অবহিত করা হয়নি? যদিও পুলিশের ত্বরিত পদক্ষেপেই রাষ্ট্রদূত এবং তার সহযাত্রীরা নিরাপদে অক্ষত অবস্থায় প্রস্থান করতে পেরেছেন। সচিব এ-ও বলেন, একজন কূটনীতিকের গাড়িতে হামলা বরাবরই নিন্দনীয়। সরকার আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে তদন্ত করছেন। খানিক অগ্রগতিও আছে। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে সচিব কূটনীতিকদের বলেন, এ হামলার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কেউই দায়মুক্তি পাবে না। উল্লেখ্য, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়েছিল স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

সেখানে তিনিও পুলিশের তদন্ত চলছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে অবহিত করেছেন। রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের এক কূটনীতিক এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তিনি বলেন- আমরা সব সময় স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি।

বৈঠকে অংশ নেয়া ইতালি, স্পেন ও ডেনমার্কের কূটনীতিকরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে সচিব বলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা রাখাইন ঘুরে এসেছেন। তারা মিয়ানমারের তরফে নেয়া প্রস্তুতির অগ্রগতিও দেখেছেন। তবে এটি দ্রুত বাস্তবায়নে এবং রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক চাপ ধরে রাখতে হবে

http://mzamin.com/article.php?mzamin=131744