৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৮

ইবিতে র্যাগিং: এবার মধ্যরাত পর্যন্ত ছাত্রকে অমানুষিক নির্যাতন

ছাত্রী নির্যাতনের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নবীন ছাত্রকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার মো. আল-আমিন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়েন।
কুষ্টিয়ার শাহিন ম্যানশন নামে একটি মেসে তাকে নির্র্যাতন করা হয়। শনিবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে এসে এ রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন ওই ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিত ছাত্রের ভাষ্যমতে, ৩১ জানুয়ারি নিজ বাড়ি যশোরের কেশবপুর থেকে কুষ্টিয়ার মেসের উদ্দেশে রওনা দেন আল-আমিন। এলাকার এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার কাস্টমস মোড়ে শাহীন ম্যানশন নামে একটি ছাত্রাবাসে ওঠেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মেসের দায়িত্বে থাকা কামরুজ্জামান নামে এক শিক্ষার্থী তাকে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে অন্যদের সঙ্গে পরিচিত হতে বলেন। মেসে ওঠার ঠিক ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মেসের ‘বড় ভাই’রা প্রথমে তাকে পরিচিত হওয়ার জন্য ডাকেন। এরপর একে একে তাকে দিয়ে তিন তলা মেসের ২০-২১টি কক্ষের প্রতিটিতে নিজের পরিচয় দিয়ে আসতে বলা হয়। এ সময় কোনো কক্ষে আল-আমিনকে চেয়ার না দিয়ে চেয়ারে বসার মতো বসিয়ে রাখা হয় ১০-১৫ মিনিট। কোনো কক্ষে এক পায়ে দাঁড়িয়ে দুই কান ধরে ১৫ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। কখনও তার কাছে ছেলে-মেয়ের পার্থক্য জানতে চান তারা। এ সময় আল-আমিনের বলা পার্থক্য পছন্দ না হওয়ায় বিস্তারিত বলতে চাপ দেয়া হয়। তাদের পছন্দ অনুযায়ী উত্তর দিলেও পেছনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য কয়েকজন তাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। এখানেই থেমে ছিল না নির্যাতনকারীরা। অন্য একটি কক্ষে ঢুকে পরিচয় দিতেই চেয়ারের ওপর একটি কোলবালিশ দিয়ে আল-আমিনকে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করতে বলা হয়। আল-আমিনের উদ্দেশে তারা বলেন, আজ মনে কর তোর বাসররাত, আর এটা তোর বউ, এখন অভিনয় করে দেখা।
আল-আমিন আরও জানান, কেউ একজন কলমের ক্যাপ দিয়ে দরজার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে ক্ষেত্রফল বের করতে বলেন। আরেকজন এসে বলেন, তিন তলা ভবনের সিঁড়িতে কয়টি সিড়ি আছে, পাঁচবার গুণে আসবি। এভাবে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলে আল-আমিন কেঁদে কেঁদে ‘বড় ভাইদের’ কাছে মুক্তি চান; জানান, তার শারীরিক অসুস্থতার কথাও। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামেনি তাদের নির্যাতন। এভাবে রাত আড়াইটা পর্যন্ত নির্যাতনের পর ছাড়া হয় আল-আমিনকে। এ সময় বলা হয়, আজ তো আর হল না, আগামীকাল তৃতীয় তলার ভাইদের সঙ্গে পরিচিত হবি।
এরপর সারা রাত আল-আমিন আর ঘুমোতে পারেননি। এমনকি তার জ্বর চলে আসে। ভয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরেই আতংকিত আল-আমিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি বাতিল করে চলে যাওয়ার জন্য এলাকার অন্য এক বড় ভাইকে মোবাইল ফোনে জানান। ওই বড় ভাই আল-আমিনকে অভয় দিয়ে ওই মেস থেকে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে আল-আমিন বলেন, ‘আমি বারবার বড় ভাইদের বলেছি, আমি জার্নি করে এসেছি। তাছাড়া শারীরিকভাবেও আমি অসুস্থ। তবুও তারা নির্যাতন বন্ধ করেননি।’
এ ব্যাপারে শাহীন ম্যানশনের দায়িত্বে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফর্মেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে কাল আল-আমিন এসেছিল। ওর সঙ্গে সবাই কথা বলে থাকার জন্য বললেও আল-আমিন চলে যায়।’
এদিকে র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভিসি।
ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখনও জানি না। তবে ঘটনা সত্য হলে অভিযুক্তদের শোকজ করা হবে।
http://www.jugantor.com/last-page/2017/02/05/98574/%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF