৯ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৯

পুঁজিবাজার থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার বিদেশিদের

পুঁজিবাজারে বিদেশিদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে তাদের নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন। গত ৪ মাসে বিদেশিরা তাদের পোর্টফোলিও থেকে ৫৪৬ কোটি ৪৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা প্রত্যাহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দরপতনে পুঁজি হারানোর ভয়, দেশের সার্বিক অবস্থার পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ে আস্থার সংকট আরো প্রকট হয়েছে। তাতে বাজার ছাড়ছেন বিদেশিরা। ফলে গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কমেছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা।
প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমেছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে বিদেশিদের দেখাদেখি দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।
সূত্র মতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ৩২ কোটি ৭১ লাখ টাকার নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন বিদেশিরা। গত জুলাই মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে শেয়ার বিক্রয় করা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। এর বিপরীতে শেয়ার কেনা হয়েছে ৪১২ কোটি ৪ লাখ টাকার। সেই হিসাবে আলোচ্য মাসে নিট বিনিয়োগ কমেছে ৩২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আলোচ্য মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮৫৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার। এর আগের মাসে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১১০০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়। এ কারণে পাল্লা দিয়ে কমে লেনদেন ও প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ। জুলাই মাসেও কমে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ।

চলতি বছরের মার্চ মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে নিট বিনিয়োগ বেড়েছিল ১৫৭ কোটি টাকা। তবে এরপর ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমার ঘোষণা থেকে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমতে থাকে। আর্থিক খাতের নানা চ্যালেঞ্জ ও কিছু ঘটনার কারণে এই নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার অব্যাহত থাকে। এতে এপ্রিল মাসে ২৫ কোটি, মে মাসে ২৮২ কোটি, জুন মাসে ২০৭ কোটি এবং জুলাই মাসে ৩৩ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে বিদেশিরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, জুলাইয়ে প্রবাসী ও বিদেশিদের মোট লেনদেন হয়েছে ৮৫৬ কোটি ৭৯ লাখ ২ হাজার ২৬৪ টাকা। এর আগের মাস জুনে লেনদেন হয়েছিলো ১ হাজার ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১ টাকা। সে হিসাবে জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে লেনদেন কমেছে ২৪৩ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ২৮৭ টাকা। এর আগের মে ও এপ্রিল মাসেও কমেছে। এছাড়া ২০১৭ সালের জুলাই মাসের চেয়ে লেনদেন কমেছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। ডিএসই’র তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে লেনদেন হয়েছিলো ১ হাজার ৪৯ কোটি ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৩ টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে লেনদেন কমেছে ১৯২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯ টাকা।

বিদায়ী মাসে বিদেশিরা শেয়ার কিনেছেন ৪১২ কোটি ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৫১ টাকার। এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৪৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৮১৩ টাকার। এর আগের মাস জুনে ৪৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৮ টাকার শেয়ার বিক্রির বিপরীতে ৬৫৩ কোটি ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৬০ টাকার শেয়ার কিনেছিলেন তারা।

শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি বেড়ে ?যাওয়ায় চলতি বছরের জুনের চেয়ে জুলাই মাসে বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ ১৭৪ কোটি ৭১ হাজার ১৩ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬২ টাকা। এর আগের মাস জুনে নিট বিনিয়োগ হয়েছিলো ২০৬ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আস্থা কমেছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করছেন। কেউ কেউ বাজার থেকে চলে যাচ্ছেন। তবে নতুন সরকার আসলে বাজার আবার প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা করছেন তিনি।

ডিএসই’র এক পরিচালক বলেন, বাজারের অস্থিরতার কারণে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে দরপতনও হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশিদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা রেখে দিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ যখন আসে বাজারে তখন তারল্য বৃদ্ধি পায় এবং শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে লেনদেনও বেশি হয়। আবার বিদেশিরা যখন শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ উঠিয়ে নেন, তখন বাজারে তারল্য হ্রাস পায়। এ কারণে শেয়ারের চাহিদা কমে, দাম কমে এবং লেনদেন হ্রাস পায়।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=129925