৯ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩২

শূন্যপদ ছাড়াই পদোন্নতির তোড়জোড় কেন?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও সরকার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে কমবেশি সাড়ে চারশ’ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২ আগস্ট যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রশাসনে আবারও তিন স্তরের পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। প্রথম দফায় প্রায় দেড়শ’ যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে আরও প্রায় ৩শ’ কর্মকর্তাকে। এসব পদোন্নতি দিতে ইতিমধ্যে একাধিক সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা এখনও চলমান। চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির আদেশ শিগগিরই জারি হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উল্লিখিত তিন স্তরে নির্ধারিত পদের বিপরীতে এ মুহূর্তে প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছেন। ১ আগস্টের হিসাবে বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত (ডিউটি) ১০০৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৭৫৯ জন। যুগ্ম সচিবের ৪১১টি স্থায়ী পদের বিপরীতে আছেন ৭৮০ জন এবং অতিরিক্ত সচিবের ১২১টি স্থায়ী পদের বিপরীতে আছেন ৪৮২ জন।

কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান এটা সবাই চায়। তবে তা হতে হবে পরীক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত নিয়মাবলি পালনের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা জোটের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। পদোন্নতি প্রদানে প্রতিষ্ঠিত নিয়মাবলির মধ্যে যেগুলো অবশ্য পালনীয় সেগুলো হল- ক. শূন্য ডিউটি পদের প্রাপ্যতা এবং খ. পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তার সন্তোষজনক চাকরি রেকর্ড। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা থেকে পদোন্নতির এসব নিয়ামক আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশের প্রথম দু’দশকে এর ব্যত্যয় খুঁজে পাওয়া কঠিন।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের সহানুভূতি পেতে শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও উল্লিখিত তিন স্তরে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন। অনেকেই এটিকে ‘নির্বাচনী পদোন্নতি’ বলেও অভিহিত করছেন। অবশ্য এর আগেও এ রকম পদোন্নতি প্রদানের নজির রয়েছে। উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতি প্রদানে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার এক বছর পার না হতেই বিএনপি সরকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দলটির প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় তা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব স্তরের পদগুলোয় সাতশ’র বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়। এর আগে এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে একসঙ্গে পদোন্নতি দেয়ার নজির ছিল না। পদায়নের জন্য প্রয়োজনীয় শূন্যপদ না থাকায় এসব পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে, বিশেষ করে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশকে কমবেশি এক বছর পর্যন্ত ওএসডি হিসেবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ফেলে রাখা হয়। ১৯৯২ সালে বিএনপি প্রয়োজনীয় শূন্যপদ ছাড়াই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যে নজির সৃষ্টি করে, ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন লীগ সরকার তা যত্নসহকারে অনুসরণ করে। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রয়োজনীয় শূন্যপদ ছাড়া পদোন্নতি প্রদানের গতিকে আরও জোরদার করে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় সরকার গঠন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৯-১৩ মেয়াদে এবং চলতি মেয়াদে প্রয়োজনীয় শূন্যপদ ছাড়াই অনেকটা দলীয় স্বার্থে দফায় দফায় শত শত কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে, যার ফল উপর্যুক্ত পদ-অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান বহর।
শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি প্রদান বা পদোন্নতি জমিয়ে রেখে একসঙ্গে দল বেঁধে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল- এক. শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি প্রদান প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক ও আর্থিক নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পদের অভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে ফেলে রাখা দক্ষ জনশক্তি ও সরকারি অর্থের অপচয়। কারণ তারা কোনো কাজ না করেই বেতন-ভাতাদি গ্রহণ ও অন্যসব সুবিধা ভোগ করেন। এটি সুশাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দুই. পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি-পূর্ব পদে (ইন-সিটো) বহাল রাখার ফলে বেশ কিছুদিন তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অধীনে কাজ করতে হয়। এতে একদিকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনা কমে যায়, অন্যদিকে আশঙ্কা থাকে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার। এছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে তাকে পদোন্নতি-পূর্ব পদের দায়িত্ব পালন করতে বলা প্রশাসনে প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার পরিপন্থী। প্রশাসনিক নিয়ম ও নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা তার এক বা দুই ধাপ উপরের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। প্রশাসনিক ভাষায় একে বলা হয়, চলতি দায়িত্ব পালন। তিন. একসঙ্গে দল বেঁধে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদোন্নতি দেরি হলে পদোন্নতিপ্রত্যাশী যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়, যা তাদের কাজের উৎসাহ ব্যাহত করে। এছাড়া একসঙ্গে অনেক কর্মকর্তার পদোন্নতি প্রদানকে ক্ষমতাসীন দল বা জোট তাদের কৃতিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এর মধ্যে প্রশাসনকে দলীয়করণের একটি বাসনা লুকানো থাকে।

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে দলীয় সরকার কর্তৃক প্রশাসনকে ব্যবহার অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে বিরাজ করলেও এবং তাদের বিজয় সম্পর্কে কোনো সন্দেহ না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশন, যানবাহনসহ পুরো প্রশাসন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে। ওই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৯৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দু’জন সামরিক শাসক সামরিক ও বেসামরিক লেবাস পরে প্রায় ১৫ বছর দেশ শাসন করেন। বেসামরিক পোশাকে অর্থাৎ রাজনৈতিক দল গঠন করে তারা যে তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন সেগুলোর ফলাফল ছিল পূর্বনির্ধারিত। একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকারের মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী দু’দশকে সাধারণ নির্বাচনে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের কারণে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের একটা দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। এর ফলে নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই ছকে বাঁধা থাকায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তা কোনোরূপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। আর এ ধরনের পূর্বনির্ধারিত প্রহসনের নির্বাচনগুলোর ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।
শুধু দলীয় সরকারের আমলে নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে নির্বাচিত সরকারও প্রশাসনকে ব্যবহার করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নবম সংসদ নির্বাচনে নিজেদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিএনপি সরকার প্রশাসন সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে প্রশাসনের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের পছন্দসই লোক পদায়নের পরিকল্পনা করা হয়। নির্বাচন পরিচালনাকারী মাঠ প্রশাসন সাজানোর বিষয়টি পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পায়। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের পছন্দসই লোক রাখতে প্রতিটি পদের বিপরীতে একাধিক বিকল্প কর্মকর্তার তালিকা প্রণয়ন করা হয়, যাতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হলেও তাদের নিজেদের লোক এসব পদে থাকে। তবে বহুল আলোচিত ১/১১-এর কারণে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

নবম সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে তৎকালীন বিএনপি সরকার যেভাবে প্রশাসনকে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল, দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার সেভাবে প্রশাসনকে, বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনকে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৩-৯৫ সময়কালে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে বিএনপি সরকার কর্তৃক ১৯৯৬ সালের মার্চে প্রবর্তিত সংসদ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বাতিল করলে এবং তা পুনর্বহালে সরকারকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সহযোগী ১৮টি দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে ওই নির্বাচন অনেকটা একদলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সে কারণে দশম সংসদ নির্বাচনে সরকারের সাজানো প্রশাসন ব্যবহার করার তেমন প্রয়োজন হয়নি।
এটা একরকম জোর দিয়ে বলা যায় যে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তার দলের সংসদ সদস্য ও নেতাদের একাধিকবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একাদশের নির্বাচন পার হওয়া সহজ হবে না। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হবে প্রশাসনকে, বিশেষ করে নির্বাচন পরিচালনাকারী মাঠ প্রশাসনকে পুরোপুরি কবজায় নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগের জন্য এ কাজটা মোটেই কঠিন হবে না। কারণ, দলটির দীর্ঘ প্রায় দশ বছরের একটানা শাসনামলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বেসামরিক প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি বিপুল অংশ সরকারের আনুকূল্যে অপ্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দলটির অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন। যারা শিগগির উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতি পাবেন তাদের ও ক্ষমতাসীন দলের অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন এমন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইত্যাদি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী যারা কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, তারা মনেপ্রাণে চাইবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করুক। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে এসব কর্মকর্তা মাঠ প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ওপর যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন, তা অনেকটা জোর দিয়ে বলা যায়। বাস্তবতার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের এসব ক্ষমতাবান কর্মকর্তার প্রভাবমুক্ত হয়ে মাঠ প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত, ক্ষতাসীন দলের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে সরকারই তাদের রক্ষা করাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। তাই নির্বাচন কমিশন কোনো শাস্তি দিলেও শেষমেশ তা কার্যকর হবে না।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটি উপায় হতে পারে কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতি দেয়া এবং কোনো রাজনৈতিক দলের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী নন এমন কর্মকর্তাদের আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, তাদেরকে তা স্মরণ করতে এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হতে হবে। তাছাড়া, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথে কোনো দলবাজ কর্মকর্তা বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে হুশিয়ারি দিয়েছেন তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক
latifm43@gmail.com

https://www.jugantor.com/todays-paper/window/78538