৭ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ২:০২

বিআরটিএতে পুলিশের ও সরকারি গাড়ির দীর্ঘ সারি

সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কার্যক্রম চলছে, শনিবারও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিবহন খাতের নৈরাজ্য কমাতে কিছুটা হলেও যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেটির প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ’র কার্যালয়ে গেলেই। গতকাল সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রায় দিনভর সরেজমিনে দেখা গেল, গাড়ি চালানোর অনুমতি (ড্রাইভিং লাইসেন্স) পেতে এবং যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন করতে উপচে পড়া ভিড়। লক্ষ্যণীয় ছিল, কাগজপত্র হালনাগাদ করতে পুলিশের ও সরকারি যানবাহনেরও দীর্ঘ সারি। বিআরটিএ কার্যালয়ের ভেতরে ও সামনের সড়কে ভোর থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত ছিল সারি সারি যানবাহন। এমনকি সড়কের উল্টোদিকেও শত শত যানবাহন চোখে পড়েছে।

নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, ট্যাক্স, মালিকানা পরিবর্তন ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে অন্তত ছয়টি দীর্ঘ সারি দেখা গেছে মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তারা ফি জমা দিতে পারছেন। ফি জমা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংকের লোকজনদেরও। এরমধ্যে বিপত্তি ঘটে বিদ্যুত্ চলে যাওয়ার ঘটনায়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত টানা বিদ্যুত্ না থাকায় ব্যাংক ফি জমা নিতে পারেনি। এরপর আবার ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্তও বিদ্যুত্ ছিল না। এতে ফি জমা দিতে যারা গেছেন এবং যারা ফি জমা নিচ্ছিলেন সবাইকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সবমিলিয়ে গতকাল গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর যারা দুপুরের পর গেছেন, কাজ সেরে তাদের ফিরতে প্রায় দশটা বেজেছে।

বিদ্যুত্ বিভ্রাটের প্রভাব পড়ে বিআরটিএ কার্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা ফটোকপি ও লেমেনেটিংয়ের দোকানগুলোতেও। ফি জমা দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি করাতে এই দোকানগুলোতেও ভিড় লেগে যায়। বাড়তি চাপের সুযোগ নিয়েছেন দোকানদাররা। প্রতি কপি ফটোকপি করতে দুই টাকার স্থলে হাতিয়েছেন পাঁচ টাকা করে।

বাড়তি চাপ সামাল দিতে এখন থেকে বিআরটিএ কার্যালয় অফিস শনি থেকে বৃহস্পতিবার ছয়দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী জানান, বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় বেড়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় যানবাহনের ফিটনেট সার্টিফিকেট দেওয়া ও নবায়ন, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম সারা দেশে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলছে। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে গতকাল মাইকিং করে জানানো হচ্ছিল। এতে কাগজপত্র ঠিক করতে আসা লোকজনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।
মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে অবস্থিত ব্র্যাংক ব্যাংক বুথের এক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, এত বাড়তি চাপ যে-তারা নিজেরাও বিরতি নিতে পারছেন না। সরেজমিনে দেখা যায়, যানবাহনের ফিটনেসের মূল সনদের কাগজও ফুরিয়ে গেছে। যার কারণে বিআরটিএ কার্যালয় থেকে একটু মোটা ধরনের সাদা কাগজে ফিটনেস সনদ প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে, এটির ওপর সিল দেওয়া হচ্ছে; যেখানে মূল সনদের কাগজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথাটি লেখা থাকছে।

ট্যাক্স টোকেন সংগ্রহ করতে আসা একটি বাস কোম্পানির কর্মকর্তা জানান, মিরপুরে ফি জমা দিতে দীর্ঘ লাইনের কথা শুনে তিনি প্রথমে গিয়েছিলেন মতিঝিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় টাকা জমা দিতে। কিন্তু সেই ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, টাকার রশীদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক তার টাকা জমা নিতে পারছে না। তিনি আরও জানান, তিনি তার কোম্পানির একটি বাসের ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করতে এসেছেন, তবে বাস বিআরটিএ কার্যালয়ে আনা হয়নি। যার কারণে তিনি নতুন ট্যাক্স টোকেন সংগ্রহ করতে পারেননি। আবুল কালাম জানান, আগে বাস না এনেও সংশ্লিষ্টদের উেকাচ দিয়ে কাগজপত্র ঠিক করে নিতে পারতেন, কিন্তু এখন কয়েকগুন উেকাচের প্রস্তাব দিয়েও কাজ সারতে পারেননি।
সজল নামে একজন ব্যাংকের বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। আলাপকালে তিনি ইত্তেফাককে জানান, তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। তাদের কোম্পানির ছয়টি গাড়ির কাগজপত্রের মেয়াদ অনকে আগেই শেষ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তিনি এসেছেন সেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ফিটনেস সনদ দেয়ার আগে গাড়ি ভালোভাবে দেখে নিচ্ছেন। ভাঙ্গাচোরা গাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। উেকাচের প্রস্তাবেও সায় দিচ্ছেন না। তবে দালালদের দৌরাত্ম্য চলছে আগের মতোই। সেবাগ্রহীতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেবা পেতে তারা কিছু ক্ষেত্রে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ দালালদের দিয়ে দ্রুত কাজ সারছেন কেউ কেউ।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2018/08/07/293772.html