৭ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩২

ব্যয় এক লাফেই আড়াই হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি

কোটি টাকা বাড়ল প্রতি একর জমির মূল্য; নতুন করে ৫ শ’ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব

প্রকল্প সংশোধন মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। অনুমোদিত ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম ঠিক থাকছে না। তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বছর না যেতেই এক লাফে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৩১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা দুই হাজার ৪৩৪ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবনায় প্রতি একর জমির মূল্য অনুমোদিত ব্যয় থেকে প্রায় এক কোটি টাকা বেশি বলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও মিরসরাই এলাকায় তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বেজা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ৭৬১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ভূমি অধিগ্রহণের এ প্রকল্পটি এক বছরে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু অনুমোদনের পরই বাড়তি অর্থ বরাদ্দের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কাছে গত অর্থবছর চিঠি দেয়া হয়। শুধু বিদায়ী অর্থবছরের জন্য অতিরিক্ত ৬৮১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয় ওই চিঠিতে। কিন্তু এখন প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক ৫ মাস আগে ব্যয় ৩১৯.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। সেখানে প্রকল্প ব্যয় ৭৬১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার ১৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে সরকার এই টাকা ঋণ হিসেবে দেবে, যার জন্য সুদ দিতে হবে ১ শতাংশ হারে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, জিটুজি ভিত্তিতে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নিমিত্তে আড়াইহাজার এবং মিরসরাই এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন প্রকৃতির শিল্প স্থাপনের সুবিধা সম্প্রসারণ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফর এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। পরে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেজার বোর্ড সভায় জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য আড়াইহাজার ও মিরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ একনেক থেকে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।

বলা হচ্ছে, জাপানি বিনিয়োগকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আড়াইহাজারে অতিরিক্ত পাঁচ শ’ একর জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন ব্যয়, জরিপ ও নকশাসহ বেশ কিছু খাত নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। আর এ কারণে ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ ছিল ৯৯১ একরের বেশি। যেখানে ব্যয় ধরা হয় ৬০৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরে এটা বেড়ে এক হাজার ৪৯১ দশমিক ৪৮ একরে, যার জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ফলে প্রথমে একর প্রতি দর ছিল ৬১ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পের সমাপ্তিকাল আগামী ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বেজা সূত্র বলছে, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন বাবদ কোনো বরাদ্দ ছিল না। পরে জাইকা কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তারোপ করায় আড়াইহাজারের অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি অধিগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান বা আরএপি’র ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন মোট ৫৫টি অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর বেসরকারি খাতে ১১টি। চলতি অর্থবছরের গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, ফেনী, নেত্রকোনা, শেরপুর ও বগুড়াতে এসব অর্থনৈতিক জোন করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। এই পাঁচ প্রকল্পের মাধ্যমে ছয় জেলায় অর্থনৈতিক জোন তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/339432