৬ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১১:১৪

বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় কী ঘটেছিল

নৈশভোজের নিমন্ত্রণ ছিল। নিছক ফেয়ারওয়েল ডিনার। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বর্নিকাট। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে শিগগিরই ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তার সম্মানেই এই আয়োজন। ঘরোয়া এই আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন সপরিবারে ড. কামাল হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দীন আহমদসহ আরো অনেকে।
আয়োজনটি ছিল সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায়।

রাত ১১টায় নৈশভোজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় একদল দুর্বৃত্ত অতর্কিতে ঢিল-পাটকেল ছুড়ে বার্নিকাটের গাড়ি লক্ষ্য করে। এ সময় তার গাড়িচালক আক্রান্ত হন। দুর্বৃত্তরা এরপর বদিউল আলম মজুমদারের বাসা লক্ষ্য করেও ঢিল ছোড়ে।

অতিথিদের বিদায় দিতে বাড়ির গেটে দাঁড়ানো বদিউল আলম মজুমদারের পরিবার এ সময় নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। দুর্বৃত্তরা বার্নিকাটের গাড়ি চলে গেলে মজুমদারের বাড়িতেও একই কায়দায় ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। ৪০-৪৫ জনের দুর্বৃত্তদল এ সময় ড. মজুমদারের বাসায় হামলা চালায়। হামলায় মজুমদার পুত্র ড. মাহবুব মজুমদার আহত হন। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্বৃত্তরা ওই বাসার জানালার কাচ ভেঙে ফেলে। দরোজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে জানান, অকস্মাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৪০-৪৫ জনের একটি দল রাত ১১টায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর বার্নিকাটের গাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। তারা বার্নিকাটের গাড়ির পিছু পিছু ধাওয়া করে। হামলায় বার্নিকাটের গাড়ি চালক আহত হয়েছেন। পরে এরাই আমার বাসায় হামলা চালায়।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ১১টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যখন উনি গাড়িতে উঠছিলেন তখন এই হামলা চালায়। হামলাকারীরা রাষ্ট্রদূতের গাড়ির পেছনেও ধাওয়া করে, ঢিল ছোড়ে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়ি চলে যাওয়ার পর দুর্বৃত্তরা আমার বাসায় হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে তারা ইট-পাটকেল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙে।

হামলার পরপর জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তা চান মি. মজুমদার। তিনি জানান, ঘটনার শুরু হওয়ার পরপর পুলিশের সহায়তা চাইলেও তারা আসে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পর। ততক্ষণে হামলাকারীরা তাণ্ডব চালিয়ে চলে গেছে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদের আক্রোশে পরিবারের সবাই ভীত হয়ে পড়ে। গেট ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারলে হয়তো প্রাণনাশও ঘটাতে পারতো।

সরজমিনে দেখা যায়, লোহার গেটে আঘাতের চিহ্ন। ভারী লোহার তৈরি গেট আঘাতের তীব্রতায় দেবে গেছে। বাড়িটির দোতলায় উঠে দেখা যায়, সামনের দিকের পূর্বপাশের কক্ষটি বদিউল আলম তার লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করেন। এ কক্ষের জানালার গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়েছে। হামলাকারীরা ইট ও পাথর ছুড়ে মেরেছে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বার্নিকাট হামলার শিকার হওয়া মাত্রই দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু হামলাকারীরা তার পিছু ধাওয়া করে। এ সময় হামলাকারীদের কাউকে কাউকে তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা বলতেও শোনা যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী নারী দাবি করেন, হামলায় অংশ নেয়া একজনকে এলাকার লোকজন চেনে।

মোহাম্মদপুর থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. রাজিব মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইকবাল রোডের একটি বাসায় দুর্বৃত্তরা ইট-পাটকেল ছুড়েছে, ৯৯৯ থেকে এমন খবর পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার টহল দলকে সেখানে পাঠানো হয়। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।

এ ব্যাপারে সুজন সম্পাদক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এটি মামলা হবে কিনা পুলিশ দেখছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি জানিয়েছেন থানার ডিউটি অফিসার। তিনি বলেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার জিডি করেছেন। মামলা করেননি। মামলার বিষয়টি তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=129437