৬ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১১:০৪

ভেঙে পড়েছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা

জেলায় জেলায় নষ্ট হচ্ছে সবজি, রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে * দ্রুত স্বাভাবিক না হলে পরিস্থিতি বেসামাল হতে পারে -গোলাম রহমান

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সঙ্গে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে সারা দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কয়েক দিনের টানা এই অচলাবস্থায় চাল, ডাল, আটা ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম না বাড়লেও রাজধানীতে সবজির দাম বেড়েছে। সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি দামেই সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। গাড়ি চলাচল না করায় বিভিন্ন জেলার চাষীরা তাদের সবজি বিক্রি করতে পারছে না। জমি থেকে সবজি তুলে বাজারে নিলেও অনেক কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। চাষীরা এখন লোকসানের মুখে। তাছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু সবজি ক্রয় করে স্থানীয় আড়তে গুদামজাত করে রাখলেও পচনশীল এসব পণ্য নিয়ে তারাও পড়েছেন বিপাকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান রোববার যুগান্তরকে বলেন, পরিবহন খাতের অঘোষিত ধর্মঘট বন্ধ না হলে বাজারে পণ্যের দামে কিছুটা হেরফের হবে এটাই স্বাভাবিক। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ভোক্তারা। যত দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে ততই মঙ্গল। সংকট দীর্ঘায়িত হলে পণ্যমূল্য আরও বাড়তে পারে। ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের। এরই জেরে পরিবহন মালিকরা নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অঘোষিত ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। ভেঙে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা। ৩ দিন ধরে রাজশাহী থেকে সবজি ও মাছ ঢাকাসহ দেশের অন্য কোনো স্থানে পাঠানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আড়তগুলো সবজিতে বোঝাই। স্থানীয় বাজারেও সবজির দাম পড়ে গেছে। মাছের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। কথা হয় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমুইল গ্রামের সবজি চাষী আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার জমি থেকে প্রায় ২০ মণ বেগুন তুলে মৌগাছি বাজারে বিক্রির জন্য পাঠিয়েছিলাম। বেগুন বিক্রি করতে পারিনি। কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী না থাকায় সবজি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। অনেক বেগুন পচেও গেছে। আড়তদার রফিকুল ইসলাম বলেন, চাষীরা আমাদের আড়তে সবজি আনেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি ক্রয় করে থাকেন। বিনিময়ে আমরা কমিশন পাই। ট্রাক বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা আসেননি। সবজি বিক্রি আপাতত বন্ধ।

দিনাজপুরেও একই অবস্থা। দিনাজপুর শহরের বাহাদুরবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. ফারুক জানান, ২৯ জুলাই সকালে কৃষকের কাছ থেকে ৪শ’ টাকা মণ দরে ১০ মণ বেগুন ক্রয় করি। ঢাকার কোনো ব্যবসায়ী না আসায় এবং ট্রাক বন্ধ থাকায় বেগুন আড়তেই পচছে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চকরামপুর গ্রামের সবজি চাষী সিরাজুল ইসলাম জানালেন, ২৬ শতক জমিতে পটল আবাদ করেছি। মাসে ৪-৫ বার পটল সংগ্রহ করতে হয়। কয়েকদিন আগেও ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও এখন কেউ কিনছে না। পরিপক্ব হলে পটল জমিতে রাখাও যাবে না। ফলে এসব সবজি জমিতে নষ্ট হচ্ছে।
নরসিংদীর চাষীরাও সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সবজি বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

এ অবস্থায় রাজধানীতে সব ধরনের সবজি উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সবজির দাম বেশি দেখা গেছে। রোববার প্রতি কেজি ঢেড়স বিক্রি হচ্ছিল ৫০-৫৫ টাকায়, চার দিন আগেও বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকা। চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছিল ৪৫ টাকায়, চার দিন আগে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। পটল ৪৫ টাকায় আগে ছিল ৩০ টাকা। গাজর ৬০ টাকা, আগে ছিল ৫৫ টাকা। বরবটি ৫৫ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। বেগুন আকার ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছিল ৫৫-৬০ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। করলা ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা। কাঁচামরিচ কেজিতে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. খলিল যুগান্তরকে বলেন, পরিবহন সংকটের কারণে রাজধানীতে সবজি আসছে না। তাই দাম বাড়তি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/77573