৬ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:৫৯

ফোর-জি থ্রি-জি বন্ধে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনিবার থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। ইন্টারনেট ঠিকমতো কাজ না করায় দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন তারা। তারা বলেন, আন্দোলন থামাতে সরকার ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধ করে দিলো। এটাই কি সরকারের ডিজিটালের নমুনা।

গত শনিবার সন্ধ্যায় ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেয় সরকার। আর এ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরপর ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গ্রাহকেরা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়েন। পরবর্তীতে বিটিআরসি ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে ফোর-জি ও থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোবাইল অপারেটরগুলোর একাধিক কর্মকর্তাও ইন্টারনেটের গতি ১.২৮ কেবিপিএসে নামানোর ‘নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’ বলে জানান। তারা বলেছেন, গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন তারা। তবে এই নির্দেশনা কত দিনের জন্য বা কত ঘণ্টার জন্য এই নির্দেশনা সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি এই কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেটের গতি কমানো হলে এমনটা হতে পারে। নেট থাকবে, দেখাবে লোডিং। নেট পাওয়া গেলে মেইল চেক করা গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও শেয়ার দেওয়া সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক জানান, অনেক সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনেক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হয়। কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কারণে মোবাইল ইন্টারনেট পেতে সমস্যা হতে পারে, সেটা পুরোপুরি বন্ধের মতো না। তবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র থেকে ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামাল দিতে ফোর-জি ও থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সুপারিশ করা হয়। পুলিশের মতে, শিক্ষার্থীরা ফেসবুক ব্যবহার করে আন্দোলনের প্রচার চালাচ্ছে। ফোর-জি হচ্ছে ফোর্থ জেনারেশন বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি। এর আগের প্রজন্মের প্রযুক্তি থ্রি-জি ও টু-জি। টু-জিতে ইন্টারনেটে ডেটা প্রবাহের গতি কম থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১.২৮ কেবিপিএসে ফেইসবুকে ছবি আপলোড করা সম্ভব হবে না। অন্যান্য ওয়েবসাইট দেখতেও গ্রাহকদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়ার অভিযোগ করছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা। তারা বলছেন গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই ইন্টারনেটে ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে আইএসপি সেবার গতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে, মোবাইল ডাটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুজব ছড়ানো ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ঘটার পর সন্ধ্যা থেকেই ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে পোস্ট দিচ্ছেন, গ্রামীণফোনের মোবাইল ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ লিখেছেন ইন্টারনেটের স্পিড খুব স্লো। অনেকেই ধারণা করছেন, এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও দেখা ও শেয়ার করা ঠেকাতে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল ইন্টারনেট কার্যত অচল। শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতি কমতে থাকলেও রাত পৌনে ১১টার পর থেকে মোবাইল ইন্টারনেট নেই বললেই চলে। কখনও কখনও ইন্টারনেট আসছে। এজ (বফমব) লেখা দেখাচ্ছে, যাকে ২জি ইন্টারনেট বলে অভিহিত করা হয়। এই ইন্টারনেট দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সম্ভভ নয়। মেইল চেক করাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এমন অবস্থার কারণে গতকাল রোববার দিনভর ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন অনেক গ্রাহক। একাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বললে তারা জানান, সরকার কিভাবে এ সিদ্ধান্ত নিলো। অন্যকি কোনো পথ ছিলো না। আন্দোলন করলে ইন্টারনেট বন্ধ করতে হবে এটা কোনো যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। এটাই যদি হয় তাহলে কিভাবে দেশ ডিজিটাল হবে। ডিজিটালের নমুনা তো ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধ হতে পারে না।
চালু হয়েছে ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা। ২৪ ঘন্টা পর গতকাল রাত ৮টার পর থেকে ইন্টারনেটে গতি আসতে শুরু করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার নাগাদ মোবাইল ইন্টারনেটে গতি পুরোপুরি ফিরতে পারে। মোবাইলের সেটিংস অপশনে গিয়ে নেটওয়ার্ক টু-জি করে দিলে মোবাইলে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধ করা হয়েছে এমন কোনও কিছু আমি জানি না। আর এটা তো বন্ধ করার বিষয় নয়। কারিগরি কারণেও সমস্যা হতে পারে।

http://www.dailysangram.com/post/340696