৫ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:৩০

দ্বিতীয় দিনের মতো অচল সারা দেশ

দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়েছে। সরাসরি ধর্মঘটের ঘোষণা না দিলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যখন তারা নিরাপদ মনে করবেন তখনই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন। এদিকে পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তির মধ্যে। রাজধানীতেও গণপরিবহন চলাচল না করায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। বাস চলাচল না করায় অনেকেই গতকাল কর্মস্থলে যেতে পারেননি। জরুরি প্রয়োজন থাকলেও মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছে না। এদিকে বাস না থাকায় চাপ পড়েছে ট্রেন ও লঞ্চের ওপর। গতকাল লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।

গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু গাড়ি ছাড়ছে না। সকালে সায়েদাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিছু কিছু কাউন্টার খোলা থাকলেও গাড়ি ছাড়ছে না। কুমিল্লার যাত্রী শফিকুল নামে এক ব্যক্তি জানালেন, কয়েকটি কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে গাড়ি ছেড়ে যাবে না। তারপরও দাঁড়িয়ে আছে যদি কোনোভাবে যেতে পারেন। তিনি বলেন, বাড়িতে বাবা অসুস্থ। যেকোনোভাবে বাড়ি যেতেই হবে। কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। একাধিক কাউন্টার থেকে জানানো হয়, মালিক সমিতির নির্দেশ রয়েছে গাড়ি না ছাড়ার জন্য। ওই কাউন্টারগুলো থেকে বলা হয় ছাত্র আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নিরাপত্তা নেই। যে কারণে তারা গাড়ি ছাড়ছেন না। বেলাল নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, রাস্তায় গাড়িরও কোনো নিরাপত্তা নেই, চালক, হেলপার বা যাত্রী কারো নিরাপত্তা নেই। যে কারণে তারা গাড়ি ছাড়বেন না। কমলাপুর স্টারলাইন কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় কাউন্টারের সামনে কয়েক শ’ মানুষ অপেক্ষা করছেন। কয়েকজন আছেন রোগী। যারা ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। আবুল হোসেন নামে এরূপ এক ব্যক্তি বলেন, বাড়ি যেতে হবে। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। সাথে আর টাকাপয়সাও নেই। বাড়ি যেতেই হবে। কিন্তু কোনো উপায় নেই। সাগর নামে অপর এক যাত্রী বলেন, ব্যবসার কাজে ঢাকায় এসে এখন আটকা পড়েছেন।
ফুলবাড়িয়া, মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনাল থেকেও কোনো পরিবহন গতকাল ছেড়ে যায়নি। ওই সব টার্মিনালের পরিবহন কাউন্টার থেকে জানানো হয়, তাদের গাড়ি প্রস্তুত। যে সময় মালিক সমিতি বলবে সাথে সাথে গাড়ি ছেড়ে দেয়া হবে। কাউন্টারগুলো থেকে নিরাপত্তার বিষয়টিই বলা হলো।
নাইটকোচও বন্ধ : এদিকে শুক্রবার রাতেও কিছু নাইটকোচ ছেড়ে গেছে। ওই রাতে রাজধানীর টার্মিনালগুলো ও বিভিন্ন কাউন্টার থেকে এই কোচগুলো ছেড়ে যায়। এতে অনেক মানুষ জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে যেতে পারেন। কিন্তু গত রাতে নাইটকোচও বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকেরা।
ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় : এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভিড় পড়েছে ট্রেন ও লঞ্চের ওপর। গতকাল কমলাপুর টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঈদের সময়ের মতো মানুষ ট্রেনের ভেতরে স্থান না পেয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ছে। একই অবস্থা লঞ্চ টার্মিনালেও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ মানুষ বিকেলে ভিড় জমায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
রাজধানীতে গণপরিবহন নেই : অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকালও রাজধানীতে গণপরিবহন দেখা যায়নি। যে কারণে মানুষ পড়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে। অনেক মানুষ গতকাল তাদের কর্মস্থলে যেতে পারেনি। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে সিএনজি, অটোরিকশা ও রিকশা ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। কিসমত নামে এক পথচারী বলেন, সেগুন বাগিচা থেকে ইত্তেফাক মোড়ের ভাড়া ৫০ টাকা। অথচ গতকাল আদায় করা হয়েছে ১০০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশায়ও ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন ভাঙচুর বন্ধ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বাস মালিক-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এবং রয়্যালের মোড় ও শিববাড়ির মোড় থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অপর দিকে ডুমুরিয়াসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে ইজিবাইক ও নসিমন-করিমন চলাচলেও বাধা দেয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে মানুষ চরম দুর্বিপাকে পড়েছেন। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষ বিকল্প হিসেবে ট্রেনে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন। এতে রেলস্টেশনে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় হচ্ছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা সিলেট থেকে দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রমিকেরা শনিবারও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
পরিবহন মালিকেরা বলছেন, সড়কে বাস ভাঙচুর ও চালকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাস চলাচল দিনে বন্ধ রাখা হয়েছে। ছাত্ররা দিনে যত দিন আন্দোলন করবে তত দিন নিরাপত্তার জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রাতে বাস চলাচল করবে।
সকালে পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে নগরীতে যান চলাচলে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর চড়াও হন শ্রমিকেরা। এ সময় কয়েকজন যাত্রীকে তারা মারধরও করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে দিনাজপুরের বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। আগাম ঘোষণা ছাড়াই গত শুক্রবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দিন-ভোর জেলার কোথাও কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।
দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ রিয়াজ চৌধুরী জানান, তারা গত শুক্রবার সকালে বাস চলাচল চালু রেখেছিলেন, কিন্তু আশপাশের জেলাগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার অভাবে দিনাজপুরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দারুণ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনে কেউ কোথাও যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রীকে রিকশা-অটো রিকশায় করে এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় যেতে দেখা গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাস্তায় গাড়ি নামানোর সিদ্ধান্ত নেননি।
মিরসরাই সংবাদদাতা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দুই-এক দিনের টানা বিক্ষোভের কারণে ‘নিরাপত্তার’ নামে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে নগরে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অঞ্চলের মানুষকে।
শনিবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন সঙ্কটে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। সড়কে গণপরিবহন রাস্তায় চলাচল করছে না। শুক্রবারও একই চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবারও ছিল পরিবহন ধর্মঘট। চট্টগ্রাম থেকে দেশের ৬৪ জেলায় কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম। বিষয়টি অনেক যাত্রী জানতেন না। তাই যাত্রীরা মহাসড়কে এসে গন্তব্যে যেতে না পেরে ফিরে গেছেন।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিন দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে নওগাঁ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী যাত্রীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগের মুখে। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জাানান, নিরাপত্তার কারণে বাস শ্রমিকেরা বাস চালাতে চাইছেন না। শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের ওপর চাপ বেড়েছে বলে জানালেন সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সিট না পেয়ে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন যাতায়াত করছেন। ফলে ট্রেনের টিকিট বিক্রয় বেড়েছে কয়েক গুণ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এর আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে শুক্রবার সকাল থেকে সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম আনার জানান, সড়কে নিরাপত্তা না থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কারণে গত দু’দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ঢাকা বাসটার্মিনাল, কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে রাতে বাস চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, বরিশালের মালিক সমিতির সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ঝালকাঠি থেকে চার দিন ধরে বরিশাল, খুলনা, পিরোজপুর, বামনা, পাথরঘাটাসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে চলছে না ঢাকাগামী পরিবহনগুলোও। সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, টানা দ্বিতীয় দিনও চলছে লক্ষ্মীপুরে পরিবহন ধর্মঘট। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেই কোনো কর্মসূচি, কেন্দ্র থেকেও ধর্মঘট কিংবা কর্মবিরতির কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবু লক্ষ্মীপুর থেকে শনিবারও ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো যানবাহন।
নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। এতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গতকাল পরিবহনসঙ্কটের কারণে বাসযাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। সকাল থেকে মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন গাবতলী থেকে সাভার হয়ে দক্ষিণ বঙ্গের দিকে যেতে দেখা যায়নি। তবে খুব সকালে দূরপাল্লার পরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। আর স্থানীয় কিছু লোকাল বাসই মাঝে মধ্যে হেমায়েতপুর পর্যন্ত চলতে দেখা যায়। যাত্রীরা বাস না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে। কয়েক দিন থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে মহাসড়কে পরিবহনসঙ্কট দুর্ভোগে রয়েছে যাত্রীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, বিক্ষোভের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবারও নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বাস ও চালকদের নিরপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল, পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড ও মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অভিমুখে শনিবার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডের তিতাস ট্রান্সপোর্ট, উত্তরা পরিবহন, রয়েল কোচ, তিশা ও সোহাগ পরিবহনের বাস কাউন্টার সকাল থেকেই বন্ধ পাওয়া যায়।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকালে অভ্যন্তরীণ রুটে দু-একটি মিনিবাস চলতে দেখা গেলেও দুপুরের পর আর কোনো বাস চলেনি। হঠাৎ করে আহূত এই অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। অভ্যন্তরীণ রুটে ও আশপাশের জেলায় যেতে অনেকে দ্বিগুণ বা তারও বেশি টাকা ব্যয় করে অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীগামী সব নৈশকোচ ছেড়ে গেলেও গতকাল সকালে দিবাকালীন কোচগুলো ছেড়ে যায়নি।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল থেকে নোয়াখালী-ঢাকা, ঢাকা-নোয়াখালী, চট্টগ্রাম-নোয়াখালী, নোয়াখালী-চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী কুমিল্লার উপকূল সার্ভিসসহ দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। জেলার অভ্যন্তরীণ যানবাহন এবং সিএনজি ও ইজিবাইক চলাচল করেছে। এ দিকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জেলার ৯টি উপজেলার হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগের অন্যতম পাইকারি ব্যবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু চায়ের রাজধানী খ্যাত ও পর্যটকের শহর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। শনিবার সকাল থেকেই শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকাগামী হানিফ, শ্যামলী, এনা পরিহনসহ দূরপাল্লার সব যানবাহন বন্ধ থাকে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন রুটেও ছোট বড় সব যানবাহন চলাচল করেনি। পরিবহন শ্রমিকেরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ।
ময়মনসিংহ অফিস জানান, নিরাপত্তার অজুহাতে টানা তৃতীয় দিন শনিবারেও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতি। একই কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজধানীসহ গন্তব্যে পৌঁছতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। অবশ্য প্রতিরাতেই ঢাকাসহ বিভিন্ন সড়কে কিছুসংখ্যক বাস চলাচল করছে। গত বুধবার রাতে জেলা মোটর মালিক সমিতির এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে বাস চলাচল বন্ধ রেখে রাতে চলাচল করছে বলে জানা যায়।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন ও মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো। শনিবার ভোর ৬টা থেকে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে কোনো বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। ফলে যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় নিকটবর্তী গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন। ধর্মঘটের কারণে জেলার পাঁচটি রুটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এত সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/338890/