৫ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:১৪

মেয়েটি বললো আমি উঠবো না আমাকে মারেন

কতোই বা হবে মেয়েটির বয়স? দেখে মনে হয় সেভেন-এইটে পড়ে। চেহারায় ভয়ের কোনো ছাপ নেই। ভয়ের কথা কেন আসলো তার জন্য কিছুটা ব্যাখ্যার দরকার আছে। ঘড়িতে তখন ১টা বেজে ৪০ মিনিট। ফার্মগেটের দৃশ্যপট গত কয়েক দিনের মতোই। গণপরিবহন নেই।

ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য। সড়কের নিয়ন্ত্রণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গাড়িগুলোকে লেন ধরে চলাচলে উৎসাহিত করছিল তারা।

হঠাৎই রাস্তায় আবির্ভাব একদল লোকের। বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। একটু পর জানা গেল ওরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। স্থানীয় বড় ভাইয়েরাও রয়েছে তাদের সঙ্গে। রীতিমতো দৌড়াচ্ছে ওরা। আর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বারবার ইশারা করছে রাস্তা ছেড়ে দিতে। ওরা উচ্চ স্বরে বলছিল- তোমাদের দাবিতো মেনে নেয়া হয়েছে। তোমরা রাস্তায় কেন? বাসায় যাও। ওদের ধাওয়ায় আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই ভীত-সন্ত্রস্ত। রাস্তা ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ওই ছাত্রী ছিল ব্যতিক্রম। পাশে ছিল তার আরো দুই বান্ধবী। মেয়েটি বলছিল, আমরা রাস্তা ছাড়বো না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে নানাভাবে বোঝাচ্ছিলেন। ভয়ের পরিবেশ তৈরিরও চেষ্টা করছিলেন। আশপাশে আমজনতা কাউকেই দাঁড়াতে দিচ্ছিলেন না। ওভারব্রিজ থেকে যেন কেউ ছবি তুলতে না পারে সেদিকেও ছিল তাদের সজাগ দৃষ্টি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শত চাপের মুখেও মেয়েটি ছিল অনড়। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রাস্তায় বসে পড়ে সে। উচ্চ স্বরে বলে, আমি উঠবো না। আমাকে মারেন। আরো বেশ কিছু শিক্ষার্থী যোগ দেয় মেয়েটির সঙ্গে। এর পরও দীর্ঘক্ষণ চলে বচসা। ছাত্রলীগের এক কর্মীকে অভিনব এক প্রস্তাব দেন আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী। বলেন, আন্দোলনের পক্ষে এবং বিপক্ষে যারা আছে তারা ভাগ হয়ে বসবে। যদি আন্দোলনের বিপক্ষে বেশি লোক থাকে আমরা রাস্তা ছেড়ে দেবো।

দিনটি অবশ্য শুরু হয়েছিল গত কয়েকদিনের মতোই। বেলা ১১টার কাছাকাছি সময়ে মিরপুর-১০ নম্বরের আশেপাশে দেখা গেল কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। তারা রিকশা, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন সারিবদ্ধভাবে চলতে সাহায্য করছে। কেউ কেউ গাড়ির লাইসেন্সও পরীক্ষা করছে। ঘন্টাখানেক পর মিরপুরে চিড়িয়াখানার কাছাকাছি পৌঁছাতে দেখা গেল অন্যরকম দৃশ্য। সেখানে সারি সারি বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত কয়েকদিনে এসব বাস রাস্তায় নামাননি মালিক-শ্রমিকরা। রাস্তাজুড়ে অবস্থান নিয়ে ছিলেন বেশ কিছু শ্রমিক। তারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। মূল রাস্তায় আসতে চাইছিলেন। কিন্তু নেতারা তাদের নিবৃত্ত করেন।

নিরাপদ সড়ক চাই। শিক্ষার্থীদের অভিনব এই আন্দোলনের সপ্তম দিনে গতকাল নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। পুলিশ অবশ্য কোথাও বড় কোনো অ্যাকশনে যায়নি। আন্দোলনকারীদের বিপরীতে বিভিন্ন পয়েন্টে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বড় ধরনের হামলা আর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ঝিগাতলায়। হামলার চেষ্টাও হয়েছে রামপুরায়। শ্রমিকদের সঙ্গে ছাত্রদের বিবাদ হয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। কয়েকটি স্থানে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। এসব হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যথারীতি দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীর লাখ লাখ মানুষ। ভালো-মন্দ নানা ঘটনার মধ্যে গতকালের রাজধানী ছিল গুজবের নগরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে নানা গুজব। কেন এতো গুজব? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় বোধ হয় এসে গেছে

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=129273