৫ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:১০

কাভার্ড ভ্যান পিষে মারল আরেক মীমকে

বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-শিক্ষকসহ নিহত আরো ৫

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দেশজুড়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে বেপরোয়া কাভার্ড ভ্যানে পিষ্ট হয়ে এক কলেজছাত্রী, নরসিংদীর রায়পুরায় লেগুনাচাপায় এক কলেজছাত্র, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে অটোরিকশার ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী কলেজশিক্ষক, পঞ্চগড়ে ট্রাক্টরচাপায় ইজি বাইকচালক, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লেগুনার ধাক্কায় এক বৃদ্ধা ও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জিপে পিষ্ট হয়ে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের চাপায় পিষ্ট হয়ে কলেজছাত্রী ফারহানা আক্তার মীম (১৬) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় চালক পালিয়ে গেলেও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী চালকের সহকারীকে ধরে পিটুনি দিয়ে আহত করার পাশাপাশি কাভার্ড ভ্যানটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নিহত মীম গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কদুরিয়া গ্রামের ফখরুল ইসলামের মেয়ে। সে টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্রী ছিল। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছিল বড়। তার বাবা স্থানীয় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। পরিবারের সঙ্গে সে গাজীপুরার জয় বাংলা সড়কের বগারটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত।
গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, কলেজ থেকে ইজি বাইকে এসে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ডে নামে কলেজছাত্রী মীম। মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী কার্ভাড ভ্যানটি তাকে চাপা দিয়ে মাথা পিষ্ট করে চলে যেতে থাকে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাকে টঙ্গী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে রক্তে ভিজে যায় তার কলেজ ব্যাগ, কলম-পেনসিল।
ঘটনার পর উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও জনতা কার্ভাড ভ্যানটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় চালক পালিয়ে গেলেও তারা হেলপার আজাহার উদ্দিনকে (৩৫) আটক করে পিটুনি দেয় তারা। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নেওয়ার পথে সে পালিয়ে গেছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, চালক ও হেলপারকে আটক করতে চেষ্টা চলছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান।
মীমের শোকে পাগলপ্রায় মা সাহিদা বেগম জানান, মীম ছিল তাঁদের একমাত্র মেয়ে। এ বছর গাজীপুরার বাদশা মিয়া অগ্রণী স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়েছিল। নাশতা করে সকাল ১১টার দিকে কলেজে যায়। ছাত্র আন্দোলনের কারণে ক্লাস না হওয়ায় ফিরে আসছে বলে জানিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু মেয়ে লাশ হয়ে বাসায় ফিরবে তিনি চিন্তাও করেননি।
টঙ্গী থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মীমের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরায় বেপরোয়া লেগুনার চাপায় কলেজছাত্র আবদুল্লাহ মিয়া (১৮) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো পাঁচজন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার নীলকুঠি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও জনতা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। নিহত আবদুল্লাহ রায়পুরার মাহমুদাবাদ ঝাড়তলা গ্রামের শাজাহান মিয়ার ছেলে। তিনি এ বছর ভৈরবের হাজী আসমত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রায়পুরা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ইটাখোলা থেকে ভৈরবগামী যাত্রীবাহী একটি লেগুনা নীলকুঠি বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারীদের ওপর উঠে যায়। গুরুতর আহত আবদুল্লাহকে ভৈরব হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুপুর ১২টায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। লেগুনার চালক আলমগীরকে আটক করা হয়েছে।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ধুমপুর গ্রামে অটোরিকশার ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মাদরাসা শিক্ষক জব্বার আলী (৪০) নিহত হন। দুর্ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাচালক ফারাজুল ইসলামকে (২৫) আটক করেছে। নিহত জব্বার আলী হরিপুর উপজেলার বনগাঁও দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক। তাঁর বাড়ি রাণীশংকৈল উপজেলার চেকপোস্ট গ্রামে। রাণীশংকৈল থানার ওসি মো. আব্দুল মান্নান জানান, জব্বার আলী মাদরাসায় যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ধুমপুর গ্রামের বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশার ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার আটোয়ারী-বোদা সড়কের দলুয়াদিঘি এলাকায় ট্রাক্টরচাপায় লতিফ হোসেন শান্ত (২২) নামের এক ইজি বাইকচালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো তিন যাত্রী। ট্রাক্টরচালককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে একটি জিপে পিষ্ট হয়ে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত রুমা খাতুন (২২) গোদাগাড়ীর কাদিপুর গ্রামের বাদশার মেয়ে এবং প্রাণ জুস কম্পানির শ্রমিক ছিলেন। তাঁকে চাপা দেওয়া জিপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সহকারী জেনারেল ম্যানেজারের।
এদিকে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পার হওয়ার সময় কর্ণগোপ এলাকায় লেগুনার ধাক্কায় সন্ধ্যা রানী (৭০) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জের সুত্তনপুর এলাকার মৃত হরেকৃঞ্চ দাসের স্ত্রী।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/08/05/665973