৪ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৭

চাপ কমছে না বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর

অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ

অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও চাপ কমছে না বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দৃশ্যমান বিনিয়োগ না হলেও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পণ্য আমদানি। এর মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতিই বেশি হারে আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুন শেষে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য আমদানির ঋণপত্র স্থাপন বা এলসি খোলার হার বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ। নির্বাচনের বছরে এ অস্বাভাবিক হারে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির হার বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় ১১ মাসে (জুলাই-মে) বেড়েছে সাড়ে ২৫ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ছে না। যেমন-গত অর্থবছরের জুন শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, আর রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় মিলেও আমদানির প্রবৃদ্ধির সমান হয়নি। অর্থাৎ ১১ মাসে সাড়ে ২৫ শতাংশ আমদানির বিপরীতে ১২ মাসে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ৩ শতাংশ ঘাটতিই থেকে যাচ্ছে। আর এ ঘাটতি সমন্বয় করা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাঙিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাত-আট মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে প্রায় আড়াই শ’ কোটি ডলার সরবরাহ করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে।

সরবরাহের সাথে চাহিদার সমন্বয় না হওয়ায় কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১ আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২১২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ দিকে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় টাকার বিপরীতে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। গত ১ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় হয়েছে ৮৩ টাকা ৭৯ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮০ টাকা ৬৭ পয়সা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলত ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। চলতি মাস শেষেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। তবে সামনে এ হার কমে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, ডলারের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের চাপ কমবে না; বরং বেড়ে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। এতে দুই ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। প্রথমত. ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়ে গেলে স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতির ওপর। দ্বিতীয়ত. পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এতে রফতানি আয়ের ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমদানির নামে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, তা তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/338652