৪ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৭

পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য এবং পুঞ্জীভূত ক্ষোভ

‘পুলিশ আঙ্কেল আপনার চা-সিগারেটের টাকা আমি আমার টিফিনের টাকা দিয়ে দিচ্ছি, তা-ও আপনি এসব গাড়ি চালাতে দিয়েন না।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন আবেগ মাখানো অনুরোধ সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে একজন শিশুর ছবি দেখে আমার চোখ আটকে গেল। ছবিতে তার পাশে ‘WE WANT JUSTICE’ লেখা আরেকটি প্ল্যাকার্ড হাতে আরও একজন শিশু দাঁড়িয়ে আছে।
কোমলমতি শিশু এ বয়সেই জেনে গেছে, খুশি করতে না পারলে পুলিশ তাদের কর্তব্য কাজটিও করে না। আমরা এ কেমন দেশে বেঁচে আছি, যেখানে একজন শিশু তার টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে সেই অর্থ ঘুষ হিসেবে পুলিশকে দিয়ে খুশি করার চেষ্টা করছে? কী এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হল যার দরুন একদল শিশু প্রতিবাদমুখর হয়ে আজ রাস্তায় নেমে এলো?

২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এ দুর্ঘটনার পর সরকারের এক মন্ত্রীর নির্মম হাসি এবং বরাবরের মতো পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের পক্ষাবলম্বন ও তার কিছু উটকো মন্তব্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। অপরদিকে দু’জন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সবার মনে যে আগুন জ্বলছিল, তাতে আবার ঘি ঢেলে দিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে দিল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা।

সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু নতুন সংযোজন মাত্র।
২০১৭ সালে দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৬২, এতে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫১৩। বেসরকারি একটি সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে বছরে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। ইদানীং গণপরিবহন সেক্টরে নিত্যনৈমিত্তিক এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে, যা শুনলেও গা শিউরে ওঠে। এসব ঘটনা এখন আর সড়ক দুর্ঘটনায় সীমাবদ্ধ নেই; নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত তা গড়িয়েছে।

২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হানিফ পরিবহনের বাস শ্রমিকরা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা অতীতের সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে। মর্মস্পর্শী এ ঘটনা দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়ে গেছে। হানিফ পরিবহনের স্টাফ, সুপারভাইজার সবাই মিলে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে মহাসড়কের পাশে ফুলদী নদীতে আহত পায়েলকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে যে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তা, শিউরে ওঠার মতো।
এ ছাড়া নিকট অতীতে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এক বাসের সঙ্গে অন্য বাসের যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তাতেও অনেক যাত্রীর অঙ্গহানি হচ্ছে। একের পর এক এ রকম ঘটনা ঘটে গেলেও এর প্রতিকারের কোনো লক্ষণ চোখে পড়ে না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব দুর্ঘটনাকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের উগ্র নেতারা দুর্ঘটনার আসল কারণ বের করে, তা সমাধানের পরিবর্তে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
গণপরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এ নেতাদের আশকারায় আজকের এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মিশুক মনির ও তারেক মাসুদ হত্যার পর সাধারণ মানুষ বেশ সোচ্চার হয়েছিল। পরিবহন আইনের কিছু সংস্কারের দাবি ওঠেছিল। কিন্তু সে দাবি ধীরে ধীরে এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। কারণ একটাই, সরকারের ঘাড়ে চেপে বসেছে পরিবহন খাতের কুচক্রী মহল।
এ চক্রের নেতৃত্বে আছেন প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের চোখ উপড়ে ফেলার হুমকিদাতা, এক সময়ের গণবাহিনীর অন্যতম নেতা এবং বর্তমান সরকারের একজন পুরোদস্তুর মন্ত্রী। রাজধানী শহরে চলমান সব গণপরিবহনের মালিক হল বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী সুবিধাভোগী গোষ্ঠী।
সরকারের মন্ত্রী, এমপি, ক্ষমতাসীন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা মনে করে গাড়ি চালাতে হলে গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স প্রয়োজন নেই। শুধু নেতাদের প্রতি অনুগত প্রকাশ করলেই হল।

বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ, থানাকে সন্তুষ্টের কৌশলও সহজ, নির্ধারিত দিবা-রাত্রির, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিকভিত্তিক অর্থকড়ি যথাসময়ে ‘ওনাদের’ পকেটে পৌঁছে দিলেই হয়। অপরদিকে ঘটনা-দুর্ঘটনায় বেগতিক পরিস্থিতিতে জনরোষে পড়লে রাজনৈতিক গডফাদাররা তো আছেনই। তাদের একটি ফোন কলই যথেষ্ট। অর্থের বিনিময়ে নিজস্ব বিবেক বিক্রি করে দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরাই জনগণের রোষানল থেকে তাদের বাঁচাবেন।
কিন্তু সবকিছুর একটা শেষ আছে। তারই পদধ্বনি বুঝি ওই শোনা যায়! আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের সৃষ্টি হয়। শুধু অনুকূল হাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর সেই হাওয়া দেয়ার জন্য সরকারের লোকের অভাব নেই। এ জন্য অতিকথক কিছু মন্ত্রী কিংবা নেতাই যথেষ্ট। কোটা আন্দোলনের সময় একজন সংসদে দাঁড়িয়ে যে হাওয়া দিয়েছিলেন, সে হাওয়ার তীব্রতা এমনই ছিল যে আন্দোলনের দাবানল মুহূর্তে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এবার নিরাপদ সড়কের দাবির মুখে অপর একজন সবে হাওয়া দিয়েছেন। এ হাওয়ার দাবানল কোথায় গিয়ে ঠেকে, কে জানে। বর্তমান আন্দোলনকে ঘিরে সরকার বড় রকমের চাপের মুখে পড়েছে। নেতৃত্বহীন এ আন্দোলনে একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ বের করে আন্দোলনকে প্রশমিত করা হবে, সে পথও খোলা নেই।
দিন দিন আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। চলমান আন্দোলনের দাবিগুলো যৌক্তিক ও জনসমর্থিত হওয়ায় সরকার আগের সংগঠিত আন্দোলন দমনের পথেও পা বাড়াতে পারছে না। এদিকে সরকারের ধারণা আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঢুকে পড়েছে।
এসব দুশ্চিন্তা থেকে গত তিন দিনে সরকারের তিন তিনজন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। তাদের এ আশ্বাসে কাজ হচ্ছে না, বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায়ে শিক্ষার্থীরা আর আস্থা রাখতে পারছে না।

ইতঃপূর্বে কোটা আন্দোলনের সময় সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর সরকার তাদের নিজ অবস্থান থেকে সরে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে বলা হল কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওই মুহূর্তের উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য নাকি উক্ত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এভাবেই শিক্ষার্থীরা সরকার কর্তৃক প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করে। অতঃপর ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল, সে স্মৃতি নিরাপদ সড়ক দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মনে আজও নাড়া দেয় বৈকি।
এ ছাড়া নিরাপদ সড়কের ব্যাপারে সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন আশ্বাসের সবই প্রচলিত আইনে আছে; কিন্তু দীর্ঘদিনের দাবির মুখেও বাস্তবে এসব আইনের সঠিক প্রয়োগ খুব কমই হয়েছে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাজধানীর গণপরিবহনের সব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়াও হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০১৬ সালে নতুন সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত যে খসড়া আইন তৈরি হয়, তার তলবও পড়েছে।

জানা যায়, খসড়াটি এতদিন আইন মন্ত্রণালয়ে পড়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খসড়াটির খোঁজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার মন্ত্রিপরিষদ মিটিংয়ে এ খসড়া আইন আলোচনার জন্য উত্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ খসড়া আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খসড়া আইন বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশ পরামর্শই গ্রহণ করা হয়নি, বিশেষ করে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া আইনটিতে অপরাধের ধরন, আইনের ধারা ও সাজায় নমনীয় মনোভাব আছে।
এখন প্রশ্ন হল, প্রতিবছর যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে, সেখানে ২০১২ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করতে চার বছর লেগে গেল? খসড়া আইন যাচাই-বাছাই করতে আইন মন্ত্রণালয় আরও প্রায় তিন বছর নিয়ে নিল? যদি বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেগবান না হতো, তাহলে এ খসড়া আইনটি আলোর মুখ কবে দেখতে পেত, তা বলাই বাহুল্য!

সরকারের উচিত হবে খসড়া এ আইনটি এতদিন কেন উত্থাপিত হল না তার কারণ খুঁজে বের করা। দেশের একটি বার্নিং ইস্যু নিয়ে তৈরি খসড়া আইনের নথিপত্র কী উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ে এতদিন পড়ে রইল এবং এর পেছনে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কোনো হাত আছে কিনা, তার খোঁজখবরও নেয়া উচিত।
সরকার ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এখনও প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বেশ ভালো লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে। একটা কথা মনে রাখা ভালো, আমাদের দেশে এমন কিছু অরাজনৈতিক ইস্যু আছে, যার সঙ্গে দেশের সব স্তরের মানুষের স্বার্থ জড়িত।

গণপরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগণের স্বার্থে সরাসরি আঘাত করে চলেছে। এ অন্যায় আঘাতে জর্জরিত মানুষের পিঠ একেবারে দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিগত কিছুদিন ধরে সংগঠিত গণপরিবহনের এ নৈরাজ্যের ঘটনাগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় বেশ ফলাও করে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সরকার সেদিকে গুরুত্বসহকারে কর্ণপাত করেছে বলে মনে হয়নি।
কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্রলীগ দিয়ে যেভাবে মোকাবেলা করে আপাতত প্রশমিত করেছে, তাতে সরকারের ভেতর এক রকম কৃত্রিম আস্থা তৈরি হয়েছে। কোটা আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সরকারের অমানবিক আচরণ সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এ কারণে বর্তমান আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে সবার ভেতর এখনও যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে।
সরকারকে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, কোটা আন্দোলন এবং বর্তমানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনের মধ্য একটি বেসিক পার্থক্য আছে। কোটা আন্দোলন ছিল সরকারি চাকরিপ্রাপ্তির পথ সুগম করার জন্য সংস্কার আন্দোলন, যাতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী অর্থাৎ চাকরি প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষা হয়।

কিন্তু পরিবহন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন হল দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা অর্থাৎ সব শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন। কাজেই সরকার যদি মনে করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পিক আওয়ারে কিছুদিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তারপর দেখবে, তাহলে ভুল করবে।
মনে রাখতে হবে, আন্দোলনে জড়িত এ শিশুতোষ মানুষগুলোর পেছনে তাদের মা-বাবাও আছেন। কোমলমতি এ সন্তানদের কিছু হলে দেশের সাধারণ মানুষ তখন একযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাদের সন্তানদের পাশে এসে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে ক্রীড়া, চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের অনেক তারকা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করেছে।
সাধারণ মানুষ রোদ-বৃষ্টিতে যানবাহন ছাড়া কষ্ট স্বীকার করে চলাচল করলেও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে নীরব সমর্থন ব্যক্ত করে চলেছে। অল্প বয়সী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এতটাই আবেগতাড়িত যে আন্দোলনের ফসল ঘরে না তুলে হয়তো ঘরে ফিরে যাবে না।
শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাকার্ডের স্লোগান দেখলেই তা বোঝা যায়। প্ল্যাকার্ডের স্লোগানটি ছিল এমন, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ’।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মনে এমন রেখাপাত করেছে যে ফেসবুকে এক মা তার এক আত্মীয়কে লিখছেন,- ‘দুপুরে রাস্তায় বের হওয়ার পর কিছু ছাত্র এসে গাড়ির সামনে দাঁড়াল, ড্রাইভারের কাছে গাড়ির লাইসেন্স চাইল! দু’জন ছেলে ড্রাইভারের লাইসেন্স যাচাই করে হাসি মুখে ড্রাইভারকে আবার লাইসেন্স ফিরিয়ে দিয়ে বলল- ‘আন্টি, সাতচল্লিশ বছরের পুরনো রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্যে দুঃখিত।’
-বিশ্বাস করো রাশেদ কথাটি শুনে পেছনের শিড়দাঁড়ায় অন্যরকম এক অনুভূতি ছুঁয়ে গেল! যতক্ষণ পর্যন্ত চোখের সীমানা ছিল, ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত ছেলেগুলোকে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখেছি!
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন দেখে চে গুয়েভারার সেই বিখ্যাত উক্তির কথা বারবার মনে পড়ে যায় ‘অন্যায় যখন নিয়মে পরিণত হয়, প্রতিবাদ তখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।’

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/window/76855