৩ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৫

অপকর্ম ঢাকতে চাচ্ছেন মালিক-শ্রমিকেরা

মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে চাচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ছাত্র আন্দোলনকে দমাতে তারা আগের কৌশলেই হাঁটছেন। অতীতে অসংখ্যবার নিজেদের দোষ চাপা দিতে তারা ধর্মঘট বা অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েছেন। এবার ছাত্র আন্দোলনকে পিছু হটাতে ঘোষণা ছাড়াই তারা পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তির মধ্যে। এই ভোগান্তিকেই পুঁজি করতে চাচ্ছেন মালিক-শ্রমিকেরা।

কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল রাজধানী সব টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। তারা তাদের নিরাপত্তার অজুহাত তুলেছেন। একাধিক মালিক ও শ্রমিক বলেছেন, গাড়ি ভাঙচুরের ফলে তাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। যে কারণে তারা বাধ্য হয়ে গাড়ি বন্ধ রেখেছেন।
গতকাল সকালে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে দেখা যায় শত শত মানুষ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু গাড়ি নেই। আবুল হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, সকালে গাড়ির জন্য দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু কোনো গাড়ি পাননি। এভাবে শত শত মানুষ গতকাল নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারেননি। রাজধানীতে গতকাল হাতেগোনা কিছু গাড়ি দেখা গেছে। বেশির ভাগ গাড়িই টার্মিনাল থেকে বের হয়নি। সরকারি সংস্থা বিআরটিসির কিছু বাস চলাচল করেছে। তবে তাতে জায়গা হয়নি অনেক পথচারীর। যারা ঝুঁকি নিয়ে তাতে উঠতে পেরেছেন তারাই স্থান পেয়েছেন।
গতকাল সকালে গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে অনেকেই ফিরে এসেছেন। যারা অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেননি। শামসুদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, তার বগুড়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে গিয়ে দেখেন গাড়ি বন্ধ। বাধ্য হয়ে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। সকালে শত শত মানুষ গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে জড়ো হন। কিন্তু কোনো গাড়ি ছাড়েনি।
মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সামনের রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। সব গাড়ি টার্মিনালের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। দু-একটি কাউন্টার খোলা থাকলেও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে গাড়ি ছাড়বে না। কেন ছাড়বে না তা জানতে চাইলে একাধিক কাউন্টার থেকে বলা হয়, নিরাপত্তার অভাবে গাড়ি ছাড়া হবে না। তাদের আশঙ্কা, রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর হবে এবং শ্রমিকদের মারধর করা হবে।
সায়েদাবাদেও ওই একই অবস্থা। কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। একাধিক শ্রমিক জানালেন, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গাড়ি না ছাড়ার জন্য।
বিপ্লবী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। যে কারণে গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে। যে কারণে শ্রমিকেরা ভয়ের মধ্যে আছেন। মালিকেরা ভয় পাচ্ছেন তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের।
তবে একাধিক সূত্র বলেছে, এটা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কৌশলমাত্র। অতীতেও যখন পরিবহন সেক্টরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে, তখন তারা ধর্মঘট ডেকেছে। পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হলে হঠাৎ করেই দেখা গেছে রাজধানীর গণপরিবহন উধাও হয়ে গেছে। আর মানুষ চরম বিপদে পড়েছেন। মানুষের কথা চিন্তা করে মোবাইল কোর্ট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আর অমনি গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে গেছে।
একাধিক সূত্র বলেছে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করাই হলো পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাজ। সুযোগ পেলেই তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ইচ্ছে হলে গাড়ি চালায়, ইচ্ছে না হলে বন্ধ করে রাখেন। এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে গেলে উল্টো ঝামেলায় পড়তে হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/338415/