৩ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৩

বিমানের ফাইট বিপর্যয়

হজযাত্রী সঙ্কটে গত ২৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১০টি ফাইট বাতিল করেছে বিমান। এর ফলে বিমানের ভয়াবহ ফাইট বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত আরো ছয়টি ফাইট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব ফাইটে মোট ছয় হাজার ১০০ হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। সৌদি অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এ বছর নতুন আর স্লট দেবে না বলে বাংলাদেশ বিমান সূত্রে জানা গেছে। ফলে এ বছর বহু হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ দিকে ফাইট বিপর্যয় ঠেকাতে বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের দাবি মেনে নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সৌদি আরবের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৬ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে ছয় হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং এক লাখ ২০ হাজার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ভাগাভাগি করে এসব যাত্রী পরিবহন করছে। গত ১৪ জুলাই থেকে এ বছরের হজ ফাইট শুরু হয়। এরপর প্রথম কয়েক দিন স্বাভাবিকভাবেই চলছিল হজ ফাইট। তবে গত ২৭ জুলাই থেকে যাত্রী সঙ্কটে হজ ফাইট বাতিল হওয়া শুরু হয়। ওই দিন দু’টি ফাইট বাতিল হয় বিমানের। এরপর আজ শুক্রবার পর্যন্ত গত আট দিনে আরো ১০টি ডেডিকেটেড ফাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিমান। বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব ফাইটে মোট চার হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। এ দিকে আগামীকাল থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আরো ছয়টি হজ ফাইট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান। এসব ফাইটে মোট দুই হাজার ৪০০ হজযাত্রী যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যাত্রী সঙ্কট থাকায় ফাইট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ নয়া দিগন্তকে জানান, এখনো বিমানের পাঁচ হাজার ৭০০ টিকিট অবিক্রীত রয়ে গেছে। গত আট দিনে ১০টি ফাইট বাতিলের পর আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত আরো ছয়টি ফাইট বাতিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর ভিসা পাওয়ার আগেই বিমান টিকিট নিশ্চিত করার বিধান হওয়ায় আমরা হজ ফাইট শুরু হওয়ার ৫০ দিন আগে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু করি। এরপর বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের বারবার টিকিট কিনতে তাগাদা দিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা এখনো সব টিকিট কাটেনি। এ কারণে ফাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। শাকিল মেরাজ আরো বলেন, সৌদি অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর তারা আর নতুন কোনো স্লট দেবে না। এ কারণে বহু হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
জানা যায়, গত বছর ভিসা জটিলতায় যাত্রী না পেয়ে ২৪টি হজ ফাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল বিমান। তাতে ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিমান পরিবহন সংস্থা।
রিপ্লেসমেন্ট ১৫ শতাংশ : যাত্রী স্বল্পতায় কয়েকটি হজ ফাইট বাতিলের পর কিছু শর্ত দিয়ে হজযাত্রী প্রতিস্থাপন সাত শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে সরকার। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের দাবি মেনে নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার প্রতিস্থাপনের সীমা বাড়ানোর এই আদেশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, হজ এজেন্সিকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হজযাত্রী প্রতিস্থাপনের জন্য তার নিজস্ব প্যাডে হজ পরিচালকের কাছে ৩ আগস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদন করতে হবে। এই আবেদনটি অনলাইনেও নিশ্চিত করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে প্রতিস্থাপনযোগ্য হজযাত্রীর গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুজনিত কারণে হজ পালন করতে পারবেন না মর্মে উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে সনদ দাখিল করতে হবে। প্রতিস্থাপন প্রাপ্তির জন্য এজেন্সির প থেকে কোনো মিথ্য তথ্য দেয়া হচ্ছে না মর্মে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামাও আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কি না তা হজের পর যাচাই করা হবে। এ সময় মিথ্যা তথ্যে প্রতিস্থাপনের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতি বছর মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার মতো অনিবার্য কারণে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী হজ করতে যেতে না পারলে তার বদলে অন্য কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তিকে হজে পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয় এজেন্সিগুলোকে। সে জন্য চিকিৎসকের সনদ ও অঙ্গীকারনামাসহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হয়।
এ দিকে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট ১৫ শতাংশ করায় ধর্মমন্ত্রী ও সচিবকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/338409/