৩ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪০

লক্ষাধিক বাস-ট্রাকের নেই ফিটনেস সনদ

লাইসেন্সধারী চালক নেই ১৬ লাখ গাড়িতে * পুলিশ ও সমিতি ম্যানেজ করেই চলছে এসব গাড়ি

দেশের এক লাখের বেশি যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের ফিটনেস সনদ নেই। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৬৬৩টি বাস ও ৬৬ হাজার ২৯০টি পণ্যবাহী ট্রাক রয়েছে। এসব গাড়ি নিয়মিত সরকারি কোষাগারে বার্ষিক ফি ও ট্যাক্স জমা দেয় না। এছাড়া সারা দেশে চলাচলকারী ১৬ লাখ গাড়িতে নেই বৈধ লাইসেন্সধারী চালক। দেশে মোট যানবাহনের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসাবেই এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ নেই এমন অসংখ্য গাড়িও রয়েছে। এসব গাড়ির প্রকৃত হিসাব বিআরটিএ ও মালিকদের কাছে নেই। আইন অনুযায়ী, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্সধারী ড্রাইভার না থাকলে তা রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। এসব গাড়ি চলাচল বন্ধে বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়ার বিধান রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু পুলিশ ও পরিবহন সমিতিগুলো ম্যানেজ করেই চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রায়শ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী জাবালে নূর বাস দুটির একটির ফিটনেস নেই দু’বছর ধরে। আরেকটি বাসের রুট পারমিট নেই।
এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাস্তায় কিছু ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে সত্য। আমরা এসব গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। জেলা প্রশাসকদের ব্যবস্থা নিতে আগেই চিঠি দিয়েছি। পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৪৩ হাজার ৮৫৫টি বাস ও ২৭ হাজার ৬২৬টি মিনিবাস রয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ৬৮৮টি বাস ও ১২ হাজার ৯৭৫ মিনিবাসের ফিটনেস নেই। অর্থাৎ ৭১ হাজার ৪৮১টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে ৩৫ হাজার ৬৬৩টির ফিটনেস নেই। পরিবহন মালিকদের মতে, সারা দেশে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। শুধু ঢাকায় ৫ হাজারের বেশি বাস চলাচল করছে। এ হিসাবেই বিপুলসংখ্যক গাড়ি নিবন্ধন ছাড়াই চলাচল করছে। তারা যাত্রীও পরিবহন করছে।
এ বিষয়ে বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লা যুগান্তরকে বলেন, নিবন্ধন ছাড়া কী পরিমাণ গাড়ি চলছে তার সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে আমরা সব সময় অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে আসছি। অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি না।
অপরদিকে সারা দেশে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৩টি ট্রাক ও ২৯ হাজার ৬৮৩টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পণ্যবাহী গাড়িরও ফিটনেস নেই। বিআরটিএর তথ্যমতে, ৬০ হাজার ৭০৯টি ট্রাক ও ৫ হাজার ৫৮১টি কাভার্ড ভ্যানের ফিটনেস নেই। তবুও এসব গাড়ি মালামাল পরিবহন করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান বলেন, শুধু ফিটনেস নেই এমন নয়, আয়ুষ্কাল নেই এমন গাড়িও চলাচল করে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মহানগর এলাকায় ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক চলতে পারবে না। তবে মহানগরীর বাইরে জেলায় চলতে পারবে। অথচ ঢাকায় নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে ব্যবহৃত অনেক ট্রাকের ফিটনেসও নেই, আয়ুষ্কালও নেই। তিনি বলেন, এসব গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিআরটিএকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি ১৩ লাখ ৮ হাজার ৯৩০টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলের প্রতিবছর ফিটনেস পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করে সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। সংস্থাটির হিসাবে, বর্তমানে সারা দেশে মোট ৫ লাখ ২ হাজার ১৩টি ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে। বাস-মিনিবাস ও ট্রাক বাদে ১৩ হাজার ১৩৪টি হিউম্যান হলার, অ্যাম্বুলেন্স ১ হাজার ৬০৪টি, প্রাইভেট কার ৫২ হাজার ৪৪৮টি, ট্যাক্সিক্যাব ২০ হাজার, সিএনজি অটোরিকশা ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৪৯টি রয়েছে।
অর্ধেকের বেশি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই : বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৮১ জনের। সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মোট পেশাদার চালকের সংখ্যা ১২ লাখ ১৫ হাজার ৪৭০ জন। অপেশাদার চালক আছেন ১৪ লাখ ২৪ হাজার ১৮৮ জন।
সব মিলিয়ে ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৮ পেশাদার ও অপেশাদার চালক রয়েছেন। এর মধ্যে একই চালকের একাধিক লাইসেন্সের হিসাব বাদ দিলে বর্তমানে মোট ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৮১টি। পেশাদার লাইসেন্সধারীর মধ্যে ভারি লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৭টি, মাঝারি লাইসেন্স ৬০ হাজার ২৩৮, হালকা ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৯ এবং থ্রি-হুইলার চালানোর লাইসেন্স রয়েছে ৫৪ হাজার ৪৮৪টি। অপেশাদার লাইসেন্সের মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৩৫ এবং হালকা যানের জন্য লাইসেন্স রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৫৩টি।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/76563/