২ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৪১

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমর্থন

কষ্ট আর ভোগান্তি হলেও ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জোগাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে হলেও তারা বলছেন, ‘এই আন্দোলন যৌক্তিক। এভাবে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মানুষ মরার একটি বিহিত হওয়া উচিত।’ ছাত্রদের পাশে অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ তাদেরকে সাহস জোগাচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। এ দিকে, সরকারের মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতারাও ছাত্রদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। তারা দাবি মেনে নেয়ার কথাও বলছেন।

আন্দোলনের মুখে গতকাল রাজধানীতে অনেক পরিবহনের গাড়ি নামেনি। সে কারণে রাজধানী ছিল মূলত গণপরিবহনশূন্য। দু-একটি গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চললেও তাতে জায়গা হয়নি অনেক পথচারীর। ফলে পথচারীদের গতকালও চরম ভোগান্তির মধ্যে চলতে হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে; যারা উত্তরা এবং বাড্ডা থেকে মতিঝিলে হেঁটে এসেছেন। তবে তাতেও যেন তাদের কোনো কান্তি নেই। শাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি উত্তরার জসীম উদ্দীন রোড থেকে মতিঝিলে এসেছেন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে। গতকাল দুপুরের দিকে তার সাথে কথা হয় দিলকুশা এলাকায়। তিনি জানালেন, উত্তরা থেকে কোনো পরিবহন মতিঝিলে আসছে না। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। রিকশা বা অন্য কোনো পরিবহনে মতিঝিলে আসবেন তারও সুযোগ ছিল না। মোটরসাইকেলও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থামিয়ে দিয়েছে। মোটরসাইকেল চালকদেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছে ছাত্ররা। বাধ্য হয়ে তিনি মহাখালী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আসেন। সেখান থেকে ফার্মগেট এসেছিলেন একটি অটোরিকশায়। ফার্মগেটে আবারো আটকে পড়ার পর তিনি সেখান থেকে মতিঝিলে হেঁটে আসেন। শাহাবুদ্দিন জানান, আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে একমত। তিনি বলেন, গাড়িচালকরা আর কত মানুষ এভাবে মেরে ফেলবে। আর কত মায়ের বুক তারা খালি করবে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার কথা শুনছেন, যার বেশির ভাগই ঘটছে চালকদের গাফিলতি ও বেপরোয়া গতির কারণে। শাহাবুদ্দিন বলেন, চালকরা সব সময় মারমুখী। সরকারের উচিত তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা।
মোশাররফ নামে অপর একজন বাড্ডা থেকে হেঁটে এসেছেন সেগুনবাগিচায়। তিনি জানালেন, এই দীর্ঘ পথ হেঁটে আসতে হয়েছে। কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের পক্ষে তিনি। পথে পথে তিনি দেখেছেন ছাত্রছাত্রীরা কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক। এই দাবিতো এ দেশের প্রতিটি মানুষের দাবি। দেশের এমন কোনো ঘর নেই, এমন কোনো পরিবার নেই যাদের কেউ না কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়নি। এর বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে ড্রাইভারদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। মোশাররফ বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা দেশের জন্য কাজ করে। মানুষের সেবা করে। ওটিও একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের আচরণ খুবই বেপরোয়া। তারা কাউকে কেয়ার করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকেও না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তিনি তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়ি বের করতে পারেননি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনেই ছাত্রদের আন্দোলন। একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং মিস করেছেন। কিন্তু তারপরেও কোনো আক্ষেপ নেই তারা। তিনি বলেন, যে দাবি জাতীয় দাবি হিসেবে আগেই বাস্তবায়ন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। তার জন্য এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গাড়িীচালক ও হেলপাররা খুবই বেপরোয়া। তারা রাস্তায় অন্যায় করে, প্রতিবাদ করতে গেলে তারা মানুষের ওপর চড়াও হয়। কোনো নিয়মনীতিই তারা মানে না। ইচ্ছে মতো বেশি ভাড়া আদায় করে। মানুষের ওপর জুলুম করে।

এ দিকে, সরকারের মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতারাও বলছেন, ছাত্রদের এই দাবি যৌক্তিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল এক বৈঠক শেষে বলেছেন, ‘আমরা জোরগলায় বলছি দোষীরা সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে পায় সে জন্য সরকার ব্যবস্থা নিবে। ছাত্রদের যে দাবিগুলো আমাদের কাছে পৌঁছেছে তা সবই মেনে নিয়েছি। সেগুলো সবই যৌক্তিক। পর্যায়ক্রমে আমরা সবগুলোর ব্যবস্থা নিবো।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দ্রুত বিচার করে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে বলেছেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/338112