১ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ১১:১২

ছাত্র বিক্ষোভে অচল রাজধানী

বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী। দিনভর অচল ঢাকা। ফুটপাথে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসচালকের ফাঁসি দাবি এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এতে কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষুব্ধদের দমাতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। তাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভে ঢাকার প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র মতিঝিল, ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, কাকরাইল, তেজগাঁও, নাবিস্কো, বাড্ডা, রামপুরা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, খিলক্ষেত, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শান্তিনগরজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল, কাকরাইল ও বাড্ডায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কে র্যা ব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এনা পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া এখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে র্যা ব ও পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় লোকজনকে ভয়ে দিগি¦দিক ছুটতে দেখা যায়।

অবরোধের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মোড় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাতে পুরো রাজধানীই কার্যত অচল হয়ে যায়। দুপুরের আগেই পুরো রাজধানী থেকে সব ধরনের বাস উধাও হয়ে যায়। একপর্যায়ে গণপরিবহন সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীবাসী।
এদিকে, ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। জড়িত দোষীদের বিচার হবে, শাস্তিও হবে।
বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে এ অবরোধ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর একে একে বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর সড়ক, ফার্মগেট, মতিঝিল, কাকরাইল, রামপুরা এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা যতই বাড়ে, শিক্ষার্থীদের অবরোধের স্থানও ততই বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভে প্রথমে উত্তাল এবং পরে অচল হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী।

ধানমন্ডি
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজসহ ধানমন্ডি ও আশপাশের কয়েকটি কলেজের শত শত শিক্ষার্থী রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে। এতে আশপাশের সব এলাকায় যানচলাচল পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। এ সময় হিমাচল পরিবহনের একটি বাস সামনে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেটিতে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আন্দোলনকারী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা তালুকদার বলেন, প্রতিদিনই গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে অথচ চালকদের কোনো বিচার হচ্ছে না। আমরা অভিযুক্ত চালকদের যথাযথ শাস্তিসহ নিহত দুইজনের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
ডিএমপির রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরির রাস্তাটি রাজধানীর একটি সেন্ট্রাল রাস্তা। এটি বন্ধ করে দিলে আশপাশের সব সড়ক অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে মেনে নেয়নি। পরে বেলা আড়াইটার দিকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।

রামপুরা
রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা হাতিরঝিল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া রামপুরা ব্রিজে রাজারবাগ এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং শান্তিনগর মোড়ে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু হেনা বলেন, প্রতিদিনই চাকার নিচে পিষ্ট করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। অথচ এর কোনো বিচার হয় না। আমরা ঘাতক চালকদের ফাঁসি দাবি করছি।
মতিঝিল
দুপুর ১২টার দিকে নটরডেম কলেজের প্রায় পাঁচ শাতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের সামনের সড়ক ও শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় যাত্রাবাড়ী, পল্টন, বিজয়নগর এবং শাহবাগ থেকে মতিঝিলে আসা ও যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘বিচার চাই’‘বিচার চাই’ বলে সেøাগান দেয়। এ সময় একটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, নটরডেম কলেজের সামনের সড়কে ও শাপলা চত্বর মোড়ে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় পুরো এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় একটি বাস ব্রেক ফেল করে মধুমিতা সিনেমা হলের বারান্দায় উঠে গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন আহত হয়।

মিরপুর
সকাল ১০টা থেকে মিরপুর কমার্স কলেজসহ আশপাশের বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টা থেকে তারা ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু বাস যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের তাড়ার মুখে তারা গতিপথ পরিবর্তন করে ভিন্ন রাস্তায় চলে যায়। তবে স্কুলগামী বাস ও শিক্ষার্থী বহনকারী প্রাইভেটকারগুলোকে যেতে দেয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে মিরপুর-১, ২, ১০ নম্বর গোল চত্বর, কাজীপাড়া ও ১১ নম্বর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পুরো এলাকা স্থবির হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই’, ‘আমার বোন মরল কেন, সরকার জবাব চাই’ এ জাতীয় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আরো শিক্ষার্থী এসে এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে তারা দৌড়ে গিয়ে আশপাশের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়।

মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির জানান, শিক্ষার্থীরা সনি সিনেমা হলের সামনে ও আশপাশের কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তবে কোনো ধরনের ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
তেজগাঁও
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফার্মগেট সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশপাশের সবগুলো সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র আলী আহসান বলেন, রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও সরকারের টনক নড়ছে না। আমরা অন্য কিছু চাই না, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হোক।

বিক্ষোভকালে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি জানায়। এর মধ্যে রয়েছে- শাজাহান খানকে সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সকল প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা। এদিকে, তেজগাঁও নাবিস্কোর সামনে মানববন্ধন করেন সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
উত্তরা
সকালের দিকে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর হোটেল র্যাকডিসনের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যারা শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে উত্তরাগামী বিভিন্ন বাসে তুলে দেয়। কিন্তু সাড়ে ১০টা বাজতে না বাজতেই রমিজ উদ্দিন কলেজসহ আশপাশের অন্তত ১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্রোতের মতো আসতে থাকে। পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে এক দফা ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সকাল থেকেই উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, টঙ্গী সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করতে চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। দুপুরের দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ঢল নামলে তাদের আর দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জসিমউদ্দিন রোড থেকে র্যাাব-১ কার্যালয় পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে বিক্ষোভ করে ও প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বুশরা ও এনা পরিবহনের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। বেলা সাড়ে ৩টায় উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বাস এবং একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাসেল সিকদার জানান, জসীম উদ্দীন রোডে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে শিক্ষার্থীদের আগুন দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।
যাত্রাবাড়ী
দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানবন্ধন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি ফেরার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে তিন-চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তি
এদিকে, বিক্ষোভের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। নিত্য কাজে বেরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেই কেউ কেউ পথ ধরেন নিজ গন্তব্যের। গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, কুড়িল, বিশ্বরোড, মিরপুর, মতিঝিল, উত্তরা ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনভোগান্তির এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সকাল থেকেই গণপরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কে বিভিন্ন স্টপেজে গণপরিবহনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোগান্তির অন্ত নেই। সকালে অফিস সময়ে যানবাহন সঙ্কট দাঁড়ায় চরমে। অনেকে গন্তব্যে যেতে হেঁটে কিংবা উচ্চ ভাড়ায় রিকশায় চড়ে রওনা দেন। তবে মাঝে মধ্যে দুয়েকটা বাস এলেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এর মধ্যে কেউ কেউ উঠতে পারলেও বেশির ভাগই ‘গাড়ি ওঠার প্রতিযোগিতা’য় রীতিমতো হিমশিম খান, যা দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
জানা গেছে, রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাননি। ভোগান্তি এবং রাস্তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি উত্তরা থেকে রামপুরা যাবো। কিন্তু এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করে শেষে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ বলেন, হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে কুর্মিটোলার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সড়ক ফাঁকা হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। আহত হয় আরো ১০/১২ জন। নিহতরা হলো- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা টানা তিন দিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/145125