৩১ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:২৪

এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?

মেট্রোরেল প্রকল্প নয়, মিরপুরবাসীর ভোগান্তির প্রধান কারণ এখন ভাঙা সড়ক। চলতি শ্রাবণের বৃষ্টি যে দুর্ভোগকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। বড় বড় গর্তে ভরা সরু সড়ক, সার্বক্ষণিক যানজট ও জলজটের কারণে জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
মিরপুরের বাসিন্দা, যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা বলেছেন, রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর সড়ক সরু হয়ে এলেও প্রথম দিকে দুর্ভোগের এমন বাড়াবাড়ি ছিল না। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার পর দুই পাশের সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য কোনো সংস্থাই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়নি। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকা এই এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা অ্যাপভিত্তিক যানবাহন চালকেরা আসতে আগ্রহী হন না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও।

এই মুহূর্তে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে রোকেয়া সরণির শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটসংলগ্ন এলাকা থেকে মিরপুর ১২ নম্বরের সিরামিক মোড় পর্যন্ত। গত দুই দিনে সড়কের এই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ অংশই বেহাল। বড় বড় গর্তের কারণে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে পড়ছে। আর বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল হয়ে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ। গর্তে আটকে যাচ্ছে বাস, প্রাইভেট কার ও অটোরিকশার চাকা। রিকশা ও মোটরসাইকেল উল্টে পড়তেও দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট থেকে তালতলা বাসস্ট্যান্ড ও বাটার মোড় থেকে কাজীপাড়া পদচারী-সেতু পেরিয়ে ১০ নম্বর গোলচত্বরের খানিকটা আগ পর্যন্ত। এ ছাড়া ১০ নম্বর গোলচত্বর পার হয়ে ৭ নম্বর সেকশনের ডেল্টা হেলথ কেয়ারের সামনের অংশ থেকে ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিক মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ফিরতি পথে সিরামিক মোড় থেকে ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দশাও একই রকম। কোথাও পিচের সামান্য আস্তর নেই। গোটা সড়ক কর্দমাক্ত, এবড়োখেবড়ো। কোথাও কোথাও গর্তের গভীরতা দেড় থেকে দুই হাতের মতো। এরপর আবার ১০ নম্বর গোলচত্বর পার হয়ে পূর্ব মণিপুর থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত সড়কের চিত্র একই। এই অংশে ইট দিয়ে বিপজ্জনক গর্তগুলো ভরাট করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যেই দেখা গেল একটি বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মাঝে।
শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রাজীব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের জন্য মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হবে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই ভোগান্তি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার অবহেলায়। এখন এই এলাকায় যানজটের মূল কারণ ভাঙাচোরা সড়ক ও বড় বড় গর্ত। রাস্তা মেরামত হলেই ভোগান্তি, ঝুঁকি দুটোই কমে আসবে। কিন্তু এই ভোগান্তি কমাতে কর্তৃপক্ষের কোনো আন্তরিকতা আছে বলে মনে হয় না।

আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বরের সিরামিক মোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশই বেহাল।
বেহাল সড়ক, যানজট ও জলাবদ্ধতা মিলিয়ে মিরপুর একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে—এমন মন্তব্য করে পল্লবীর বাসিন্দা শাহীনা খানম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েও পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে এখন দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সেখান থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আরও এক দেড় ঘণ্টা। বৃষ্টি হলে তো মিরপুর নদী। পরশু অফিস থেকে বাসায় পৌঁছাতে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।’
মিরপুরবাসীর এই দুর্ভোগ নিয়ে অনলাইনেও চলছে আলোচনা। একটি রম্য ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ডাইনোসরের ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আমি একবার মিরপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম, পৌঁছানোর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছি।’
‘যে ১০টি কারণে মিরপুরবাসীকে শ্রদ্ধা করবেন’ শীর্ষক ওই পোস্টে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ও জনপ্রিয় উপস্থাপক বিয়ার গ্রিলসের ছবি ব্যবহার করে তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, ‘না না মিরপুর গিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যেতে চাই না।’
কামরুল হাসান নামের কাজীপাড়ার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘মেট্রোরেলের কাজের জন্য যে দুর্ভোগ, তা মানা যায়। কিন্তু বেহাল সড়ক ও বড় গর্তের জন্য এই দুর্ভোগ আমরা মানব কেন?’
দায় নেবে কে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অনুমোদন নিয়েই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মিরপুর এলাকার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানালে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে যে অংশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে সেই অংশগুলো চলাচলের উপযোগী রাখার দায়িত্ব এখন পুরোপুরি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের।’ কর্তৃপক্ষ সে দায়িত্ব পালন করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাঁদের এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে ডিএনসিসি থেকে একটা চিঠিও দেওয়ার কথা। তবে তা দেওয়া হয়েছে কি না, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
পরে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা ম্যাস র্যাাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএমআরটিডিপি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকের সঙ্গে। তবে একটি সভায় থাকায় তিনি ফোন ধরতে পারেননি।

উপ-প্রকল্প পরিচালক (জনসংযোগ) খান মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ এই রাস্তাটি সড়ক ও জনপথের।’ আর প্রকল্প এলাকার দুই পাশের সড়ক সংস্কারের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা হার্ড ব্যারিয়ার দিয়ে সড়কের মাঝের অংশে কাজ করছি। দুই পাশের সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব আমাদের না।’

 

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1543646