৩১ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:২০

ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন প্রকাশ

খেলাপি ঋণের সাড়ে ৬৫ শতাংশই ১০ ব্যাংকে

বেড়েছে ঋণের হার ও পরিমাণ, পুনঃতফসিল বেড়েছে ২৪ শতাংশ

দেশে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ১০ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি ৪৭ ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ১০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৭-তে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। তবে বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ায় বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে গত বছর মোট খেলাপি ঋণের হার ও পরিমাণ দুই-ই বেড়েছে। ২০১৬ সাল শে?ষে ব্যাংকিং খাতে খেলা?পি ছিল ৬২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী খেলাপি ঋণে পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৫টি, বেসরকারি খাতের ৩টি এবং বিশেষায়িত ও বিদেশি খাতের ১টি করে ব্যাংক। আর শতকরা হিসাবে শীর্ষ দশ ব্যাংকের এ তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৫টি, বেসরকারি খাতের ২টি, বিশেষায়িত খাতের ২টি ও বিদেশি খাতের ১টি ব্যাংক। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের ওপরে। এ তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি, বিশেষায়িত ২টি, বেসরকারি ২টি ও বিদেশি ১টি। তবে রিপোর্টে কোনো ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, খাতভিত্তিক হিসেবে মোট খেলাপি ঋণের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ রয়েছে তৈরি পোশাক খাতে। একক শিল্প খাত হিসেবে এ হার সর্বোচ্চ। এ ছাড়া কৃষি খাতে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে ২৩ শতাংশ, টেক্সটাইল খাতে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, শিপ বিল্ডিং ও শিপ ব্রেকিং খাতে ২ দশমিক ৬ শতাংশ ও পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ২ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরও খেলাপি ঋণের বড় একটি অংশ পুনঃতফসিল হয়েছে। ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে পুনঃতফসিল বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। তবে ঠিক কত টাকার খেলাপি ঋণ গত বছরজুড়ে পুনঃতফসিল করা হয়েছে সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে গত বছর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের দিক থেকে শীর্ষে ছিল চলতি মূলধন খাত। ২০১৭ সালে এ খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পরেই ২০ দশমিক ৪ শতাংশ রয়েছে তৈরি পোশাকসহ সামগ্রিক শিল্প খাতে। এ ছাড়া ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে ফরেন ট্রেডে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত বছর শেষে ৯টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল। এ তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৩টি, বেসরকারি খাতের ৫টি ও বিদেশি খাতের ১টি। অন্যদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট রাইট-অফ (মূল হিসাব থেকে আলাদা করা) হয়েছে ৪৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ; যা ২০১৬ সাল শেষে ছিল ৪৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে থাকে। আর্থিক খাতের গতি-প্রকৃতি, স্থিতিশীলতা ও তার প্রভাব এবং তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ, সম্পদের মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তারল্যের নির্দেশকগুলো এখানে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো উঠে আসে এ প্রতিবেদনে। এ বিবেচনায় ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যদি নেয়া না হয় তাহলে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা অর্থহীন ছাড়া আর কিছু নয়- এমনটি মনে করেন, এ সেক্টরের বিশ্লেষকদের অনেকে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/75648