৩১ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:১৩

রাজধানীতে কোরবানির পশুহাট নিয়ে অপতৎপরতা

দরপত্র জমা দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা

আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় কোরবানির পশুহাট বসানো নিয়ে অপতৎপরতা চলছে। ডিএসসিসি দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও হাট ইজারা দিতে পারছে না। রহস্যজনক কারণে দরপত্রই জমা দিচ্ছে না কেউ। টেন্ডার কিনলেও রাজনৈতিক চাপে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দরপত্র জমা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত ডিএসসিসিকে কৌশলে টেন্ডারের পরিবর্তে খাস আদায় পদ্ধতিতে যেতে বাধ্য করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেই এ তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এ বছর মোট ১৩টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য গত ২৭ জুন প্রথম দফা দরপত্র আহ্বান করে। হাটগুলো হলোÑ মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সঙ্ঘের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের আশপাশের খালি জায়গা।

গত ১০ জুলাই প্রথম দফা দরপত্র খোলা হয়। দেখা যায়, ১৩টি হাটের মধ্যে মাত্র ছয়টি হাটের বিপরীতে দরপত্র জমা পড়েছে। অন্য সাতটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। দরপত্র জমা না পড়া হাটগুলো হলোÑ মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠের আশপাশের খালি জায়গা। এ ছাড়া অন্য হাটগুলোর বিপরীতে দরপত্র জমা পড়লেও কামরাঙ্গীরচর এবং শ্যামপুর হাটের বিপরীতে মাত্র একটি করে দরপত্র জমা পড়ে। প্রথম দফায় সাতটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্র জমা না পড়লেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই হাটগুলোর বিপরীতে মোট ২০টি দরপত্র কেনা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একটি দরপত্রও জমা দেয়া হয়নি। পরে এ সাতটি হাটের বিপরীতে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর দেখা যায় হাটগুলোতে কোনো দরপত্র বিক্রিই হয়নি। ফলে নিয়মানুযায়ী তৃতীয় ও শেষ দফায় দরপত্র আহ্বান করে ডিএসসিসি। আগামীকাল ৩১ জুলাই দরপত্র কেনার শেষ সময় রয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত দেখা গেছে, এ সাতটি হাটের বিপরীতে মাত্র দু’টি হাটের জন্য তিনটি দরপত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মেরাদিয়া হাটের জন্য একটি এবং দনিয়া হাটের জন্য দু’টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে। অন্য পাঁচটি হাটের বিপরীতে এখনো কোনো দরপত্র বিক্রি হয়নি বলে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, গত বছর মোট ৯টি হাটের ইজারা টেন্ডারের মাধ্যমে দিয়েছিল ডিএসসিসি। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো সাতটি হাট কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই খাস আদায়ের জন্য দেয়া হয়। যদিও এর মধ্যে একটি হাট হাইকোর্টের রিটের কারণে বাতিল করতে বাধ্য হয় ডিএসসিসি।
জানা যায়, কোট হাট দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী খাস আদায় করা হয়ে থাকে। এ জন্য ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি খাস আদায় কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীদের হাট নেয়ার জন্য আহ্বান করলে যিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হবেন তাকে খাস আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ বছর ডিএসসিসির কোরবানির পশুর হাট নামমাত্র মূল্যে বাগিয়ে নিতে অশুভ তৎপরতা চলছে বলে জানা যায়। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা দরপত্রে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে টার্গেট করেই এ অপতৎরতা চালানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের নিষেধ করে দেয়া হচ্ছে ইজারায় অংশ না নেয়ার জন্য। কোরবানির পশুর হাট থেকে নির্বাচনী খরচ উঠাতে সিটি করপোরেশনকে নামমাত্রমূল্যে খাস আদায়ে যেতে বাধ্য করতে চায় তারা। এসব ব্যক্তিরা ভালো করেই জানে সিটি করপোরেশনের নিজেদের এত জনবল নেই যে এতগুলো হাট পরিচালনা করতে পারে। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের বাইরে সিটি করপোরেশন কাউকে হাটের দায়িত্ব দিতে পারবে না। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির কোরবানির হাট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো: আবদুল মালেক নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রথম দফায় দরপত্র পাওয়া ছয়টি হাট ইজারা দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি দু-এক দিনের মধ্যে ইজারাদারদের হাতে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া অন্য সাতটি হাটে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র বিক্রি ও জমা না পড়লেও তৃতীয় দফায় তিনটি দরপত্র বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩১ জুলাই দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় রয়েছে। এ জন্য এখনো বলা যাচ্ছে না এগুলো ইজারা হবে না। তিনি বলেন, আমরা নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে দরপত্র জমা দেয়ার সুযোগ রেখেছি। এখন কেউ অংশ না নিলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। যদি কোনো হাটে দরপত্র জমা না পড়ে সে ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী খাস আদায়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/337608