সিলেটে একটি কেন্দ্রের চিত্র; বরিশালে একটি কেন্দ্রে উদ্ধার হওয়া নৌকা প্রতীকে সিলমারা ব্যালটপেপার
৩১ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:১০

শঙ্কাই হলো সত্য

শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্য হলো। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের নজির স্থাপনের পর বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রহসনের আশঙ্কা করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপি প্রার্থী সমর্থকদের গ্রেফতার, ধরপাকড় আর ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির কারণে এ আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হয়। শেষ পর্যন্ত গতকাল সোমবার এ তিন সিটির মানুষ নির্বাচনের নামে যা দেখল তাকে তামাশা হিসেবেই অভিহিত করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো: মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট কেন্দ্রে এতই অনিয়ম দেখেন যে, তিনি তার নিজের ভোটই দেননি। বরিশালে একমাত্র আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ছাড়া সব মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সিলেটের মেয়রপ্রার্থীও নির্বাচন চলাকালেই অনিয়মের অভিযোগে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানান।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের কেন্দ্র দখল, গণহারে জাল ভোট আর বিরোধী প্রার্থীদের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোট শুরুর পরপরই তিন নগরীতেই বেশির ভাগ কেন্দ্র চলে যায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের দখলে। সরকার সমর্থক লোকজনের বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের সময় আইনশঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা অথবা নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিরোধী দলের লোকজনকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেয় সরকার সমর্থকেরা। অনেক কেন্দ্রে বিরোধী দলের লোকজনকে ভোটের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রবেশই করতে দেয়া হয়নি। প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি অনেক কেন্দ্রে ভোটারদেরও। পুলিশের সামনে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে সরকার পক্ষের লোকজন ইচ্ছামতো সিল দিয়ে বাক্স ভরেছে। দুপুর গড়ানোর আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বরিশালে বিএনপি মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার।

বরিশালে প্রথম কিছুক্ষণ ভালোভাবে ভোট গ্রহণ চললেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট এবং আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ বহিরাগতদের মহড়া চোখে পড়ে। তারা ভোটারদের হাত থেকে স্লিপ ও ভোটার কার্ড ছিনিয়ে নেয় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়। এভাবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে অসংখ্য কেন্দ্র থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে। বেশ কিছু কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ও বাতিল করা হয়। বিএনপি ও বিভিন্ন দলের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে বের করে দেয়ার ফলে বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে বিএনপিসহ অন্যান্য চারটি দলের মেয়রপ্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন।
দুপুর ১২টায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলেও বরিশালে ভোট শুরুই করা হয়নি। ৭০ থেকে ৮০টি কেন্দ্রে ভোট শুরু না হতেই ব্যালটে নৌকার সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে।
পুণ্যভূমি সিলেটের সাধারণ মানুষের ভোট উৎসব শেষ পর্যন্ত চাপা পড়েছে অনিয়ম আর জোল ভোটে। অনিয়মের পাশাপাশি এখানে দুইটি কেন্দ্রে পুলিশ গুলি ব্যবহার করেছে। ধানের শীষের এজেন্টদের পাওয়া যায়নি বহু কেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থীর সমর্থকেরা একতরফা দাপট দেখিয়েছেন। এ সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারধরের শিকার হয়েছেন।
নানা অনিয়ম দেখে ভোট গ্রহণ শুরুর ৫ ঘণ্টা পর ভোট বাতিল করে পুনর্নিবাচন চান বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

রাজশাহীতে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের। পুলিশের সহযোগিতায় তাদের চড় থাপ্পড় মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি অনেক ভোটারকে। সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও প্রকাশ্য সিল দিতে বাধ্য করেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৮টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে।
অনিয়মের কারণে কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিলেন না রাজশাহী সিটিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মো: মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। জাল ভোট ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রয়োগের অভিযোগে নিজ ভোটকেন্দ্র ইসলামিয়া কলেজে দুপুরের পর থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন বুলবুল। ওই কেন্দ্রে দুপুরের আগেই মেয়রপ্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ আসে। এ খবর পেয়ে বুলবুল সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে ব্যালটের হিসাব চান। নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠেই বসে পড়েন তিনি। সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুও তার সাথে অবস্থান নেন।
এ দিকে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে বরিশালের একটি, সিলেটের দুইটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত এবং অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।



 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/337629