পাঠানটুলা জামেয়া ইসলামীয়া মাদরাসা কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ির কর্মী আবদুল মুক্তাদির ফাহাদকে পুলিশ ডান পায়ের হাঁটুর উপড়ে গুলী করে। তাকে মুমুর্ষু অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়
৩১ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:০৭

গাজীপুর-খুলনাকেও হার মানিয়েছে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি

তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট তিন সিটিতেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে ‘নৌকা’ মার্কায় জাল ভোট প্রদান করেছে। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা জাল ভোট ঠেকাতো কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার পরই বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোটবর্জন করেছে বিএনপিসহ ৫টি রাজনৈতিক দল। কারচুপির অভিযোগে ভোট দেননি রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সিলেটে বিএনপি অভিযোগ করেছে, রাতেই সিল মারা ব্যালট ভোটকেন্দ্রে আনা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করছেন, তিন সিটির ভোট গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন এ ভোটকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দাবি করছে এবং এ নির্বাচনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
গতকাল ভোটের পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট প্রশাসনের সহায়তায় কারচুপি করে ক্ষমতাসীনরা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র, বরিশালে ১২৩টি কেন্দ্রের প্রায় সবকটি কারচুপি করে নিয়ে গেছে। এছাড়া সিলেটের ১৩৪টি কেন্দ্রের ৯০-৯৫ ভাগ ভোট ক্ষমতাসীনরা প্রসাশনের সহায়তায় নিজেদের করে নিয়ে গেছে।

তিন সিটির নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে উল্লেখ করে এ নির্বাচনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে নির্বাচন ভালো হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। যেখানে সমস্যা ছিল সেখানে তো আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬টি কেন্দ্র ব্যতীত অন্য দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল সোমবার সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১৩৮টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং সেখানে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে দুটি কেন্দ্র ব্যতীত বাকি কেন্দ্রসমূহে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিইসি আরো বলেন, বরিশালের ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে সকালের দিকে কিছু বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য নিয়েছি। এই বিষয়ে একটি কেন্দ্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে সকালেই। আরো ১৫টি কেন্দ্রে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় ওই কেন্দ্রগুলোর ফলাফল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই ভোট বর্জন করেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এটা তো তাঁদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা ১৫টি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল স্থগিত করেছি। এটা তো বড় ধরনের শঙ্কা। এ ছাড়া অন্যগুলোতে আমরা অনিয়মের ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য পাইনি।
সিইসি নুরুল হুদা আরো বলেন, মোট কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা এখনই বলা মুশকিল। কারণ ভোট গণনা এখনো চলছে।
বরিশালের ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা পুনরায় ভোট গ্রহণের লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এ ব্যাপারে সিইসি বলেন, তাঁরা আবেদন করেছেন আমরা সেটা জেনেছি। কিন্তু পুনরায় ভোট গ্রহণ করার মতো অবস্থা আমরা সেখানে পাইনি।
সিইসি আরো বলেন, একজন মেয়র প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হয়েছে কিনা সেটা আমরা তদন্ত করব। আর তিনি চাইলে কোর্টের আশ্রয় নিতে পারেন।

তিন সিটি থেকে সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিন সিটিতে দিনভর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। পুলিশের বাধার কারণে অনেকক্ষেত্রে প্রিসাইডিং অফিসার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। কেন্দ্রের ভেতর ও বাহিরে সার্বক্ষণিক সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মহড়া লক্ষ্য করা গেছে।
রাজশাহীতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেছেন, দুপুরের আগেই মেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়েছে। নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্রেই প্রবেশ করতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেন বুলবুল।
বরিশালে কারচুপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল দলের মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। দুপুরের আগেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সকালের দিকে জাল ভোটের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন সিপিবির মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী।
সিলেটে কারচুপির অভিযোগে ভোট বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। রাতেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এছাড়া তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনরা নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ভোটের ফল আগাম প্রত্যাখ্যান করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ফলাফল যাই হোক, সন্ত্রাসী ভোট প্রত্যাখ্যান করলাম। এটা ভোট চুরি না, দিনে-দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আমার পরাজয়টা বড় ব্যাপার না, এ নির্বাচনের ফলে নতুন প্রজন্ম একটি ভুল জিনিস শিখছে।
রাজশাহী
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট দিতে ‘না পারার’ অভিযোগ এনে একটি কেন্দ্রের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একদল ভোটার। গতকাল সোমবার বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর তারা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মথুরাডাঙ্গার আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কিছু দূরে এই বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে মথুরাডাঙ্গার সড়ক অবরোধ করেন এই ভোটাররা।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারেননি। অথচ কেন্দ্রের ভেতরে অনেকটা ফাঁকাই ছিল। আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রের একটিতে ২ হাজার ৪২৩ পুরুষ ভোটার এবং অন্যটিতে ২ হাজার ৬২৮জন নারী ভোটার ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।
আটকোষী বিদ্যালয় থেকে গাড়ির বের হওয়ার একমাত্র পথ বন্ধ করে দেন তারা। এখনও ভোট ‘দিতে চান’ জানিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এই পথ দিয়ে যেতে দিবেন না বলে হুমকি দেন তারা।
ভোটারদের একজন আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে প্রায় সাড়ে ১২টার থেকে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক লম্বা লাইন ছিল। পুলিশ ঢুকতে দেয়নি।
আরেক ভোটার রহিমা খাতুন বলেন, আমি দুপুর ১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক লম্বা লাইন। কিন্তু এক দুইজন করে ভেতরে গেছে। সে কারণে অনেকে ভোট দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে কেন্দ্রের ভেতরে যেতে চাইলে সামনে থাকা পুলিশ সদস্যরা যেতে দেননি। একজন বলেন, এখন উনি ভোট গণনায় ব্যস্ত। সময় দিতে পারবেন না।
বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি নিজের ভোটও দেননি।
সিলেট
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে; এসব ঘটনায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে তিনজন আহত হয়েছেন। আরেক কেন্দ্রে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট।
বিক্ষিপ্ত গোলযোগের কারণে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বিঘিœত হওয়ার খবর এসেছে সোয়া তিন লাখ ভোটারের এই নগরী থেকে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরি জামান জানান, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান বেলা দেড়টার দিকে কুমারপাড়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় তার গাড়িতে ঢিল পড়লে গ্লাস ভেঙে মতিউর আহত হন। একটি ঢিল তার নাকে লাগে। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আহত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান বলেন, কুমারপাড়া পয়েন্টে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আমি মাঝখানে পড়ে যাই। একটি ঢিল আমার গাড়ির কাচে লেগে ভেঙে যায়। কাচের টুকরো এসে আমার গায়ে লেগেছে। একটু কেটে গেছে। আমি আবার মাঠে ফিরেছি।
এর আগে বেলা ১টার দিকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এসএম শওকত আমীন তৌহিদ ও ঘুড়ি প্রতীকের দিনার খান হাসুর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছিল। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুড়লে তিনজন আহত হন। আহতদের কারো নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি আতাউল গনি ওসমানী।

তিনি বলেন, তারা দল বেধে এখানে এসে তিনটি কক্ষে ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করে। পরে পুলিশ গুলি করে। বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ ছিল। আমাকেও বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আটকে দিয়েছিল। ব্যালট পেপার বা কোনোকিছু নিতে পারে নাই।
এদিকে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে বেলা ২টার দিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ গাজী সৈয়দ বোরহান উদ্দিন মাদরাসা (১১৬ নম্বর কেন্দ্র) এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৩৪ নম্বর) কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান জানান, বোরহান উদ্দিন মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ২ ২১ জন। আর হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৫৬৬ জন।
এর আগে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মিরাবাজারের মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রে প্রায় ৪৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। বেলা ১১টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল এবং সাজেদ আহমেদ চৌধুরী বাপনের সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।
ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে উজ্জ্বল বলেন, রেডিও এবং ঘুড়িÑ দুই প্রার্থীর লোকজন সকাল থেকে ব্যালট পেপারে বাক্সে সিল মেরে বাক্সে ভরেছে।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজী আশিকুর রহমান বলেন, বেলা পৌনে ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ আবারও শুরু হয়েছে।

মিরাবাজারের মডেল স্কুল কেন্দ্রে গোলযোগ চলার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দীন আহম্মদ আহমেদ কামরানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে সাদিপুরের সৈয়দ হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম।
ততক্ষণ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষে ১৩৪, ২ নম্বর কেন্দ্রে ৮৯, ৩ নম্বর কেন্দ্রে ১২২ ভোট, ৪ নম্বর কেন্দ্রে ১৩৪ ভোট এবং ৫ নম্বর কেন্দ্রে ১৭২টি ভোট পড়ার তথ্য দেন দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তা। এসব কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্টকে দেখা যায়নি।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের নবীন চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল দশটার পর থেকেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
২১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেন, ভোট দিতে গেলে তাদের বলা হয়েছে ‘ভোট দেওয়া হয়ে গেছে’। মেয়র পদের ব্যালট পেপার দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এ কেন্দ্রের ভোটারদের কেউ কেউ।

বেলা সোয়া ২টার দিকে উপশহর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে কোনো ভোটার পাওয়া যায়নি। বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্টও সেখানে ছিলেন না। পরে কেন্দ্রের ভেতরে একটি টেবিলের ওপর ব্যালট পেপারের একটি বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। বান্ডিলের সব ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারা। দু’একটা ব্যালটে ধানের শীষেও সিল মারা দেখা যায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রে কর্মরত পোলিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দুর রহমানের কক্ষে গিয়ে তার টেবিলেও সিলমারা ব্যালট পেপারের বান্ডিল দেখা যায়। তিনি বলেন, সকাল থেকে ভালোই ভোট হচ্ছিল। ১২টার দিকে হঠাৎ করে একদল লোক আছে অতর্কিতে হামলা করে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পর আবার দিয়ে গেছে।
বরিশাল
নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপিসহ চারটি দলের মেয়র প্রার্থী। তাঁরা হলেন বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ার, ইসলামী আন্দোলনের ওবাইদুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মনীষা চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ।

গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার। তিনি বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলেও বরিশালে ভোট শুরুই করা হয়নি। ৭০ থেকে ৮০টি কেন্দ্রে ভোট শুরু না হতেই ব্যালটে নৌকার সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপি ও অন্য দলের কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা ন্যক্কারজনক এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমি চারবার সাংসদ ও একবার মেয়র ছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সরকারের আমলেই এমন নজিরবিহীন ভোট আমরা দেখিনি। এমন প্রহসনের নির্বাচন না করে এমনিতেই ঘোষণা দিয়ে নিয়ে যেতে পারত সরকার।
সরওয়ার বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, এখানে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় প্রার্থী, তাই সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আগের আশঙ্কাই আজ ঠিক হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে সরওয়ার নৌকা প্রতীকে সিল মারা ১০ থেকে ১২টি ব্যালট সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন, সদর গার্লস স্কুল কেন্দ্রে এভাবে ব্যালটে নৌকার সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে।
সরওয়ার ভোট প্রত্যাখ্যান করে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি দেন। এরপর মিছিল নিয়ে তিনি নির্বাচন কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন।

অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলনের ওবাইদুর রহমান এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের মনীষা চক্রবর্তী সমর্থকদের নিয়ে ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না মানব না’, ‘ভোট চুরির নির্বাচন মানি না মানব না’এমন বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বরিশাল সদর রোডে পৃথকভাবে মিছিল করেন। এ সময় মনীষা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি সদর গার্লস স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। অভিযোগ জানানোর পরও এই কেন্দ্রে নির্বাচন এখনো চলছে। এই কেন্দ্রের মতো সব কেন্দ্রেই নৌকায় সিল মারা হচ্ছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বেলা দেড়টার দিকে বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন ১২৩টি কেন্দ্রর সবগুলোতে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট স্থগিত করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

http://www.dailysangram.com/post/339931