৩০ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:২২

বাড়ছে নৃশংসতা

আল মামুন। বয়স ১৫ বছর। বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার শালিকাদহ গ্রামে। যে বয়সে তার স্কুলে লেখাপড়া করার কথা সেই সময়ে পেটের দায়ে সাভারে এসে রিকশার প্যাডেল ধরেছিল ছেলেটি। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকেই নিখোঁজ ছিল সে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈরের এক জঙ্গলে মিলল তার লাশ। দুর্বৃত্তরা তাকে মেরে অটোরিকশাটি নিয়ে গেছে। নৃশংস এ ঘটনায় হতবাক সবাই। এভাবেই একের পর এক ঘটছে নৃশংস ঘটনা। ছোট শিশুরও রেহাই মিলছে না দুর্বৃত্তদের লালসা থেকে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তাকে অনেকেই বলেছেন ‘চরম নৃশংসতা’। একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রের ওপর এভাবে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দিতে পারে তা ভাবাই যায় না। অথচ এখন কথায় কথায় এমন ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি কয়েকজন ছাত্রকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, চোখের সামনে এমন নৃশংস ঘটনা আগে দেখেননি তারা।
গত ২৬ জুলাই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চলন্ত বাসে শিউলি আক্তার (২৬) নামের এক গার্মেন্টকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। নিহত শিউলির পরিবার ও সহকর্মীরা বলেছেন, ওই দিন সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিউলি আক্তারের স্বামীর নাম মো: শরিফ মিয়া। বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পুষ্টকামুরী চরপাড়া গ্রামে। শিউলির চাচাতো ভাই মো: মালেক মিয়া জানান, শিউলি গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কম্পিট কম্পোজিট গার্মেন্টে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যাওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চরপাড়ায় গেলে তাদের গার্মেন্টের বাস আসে। কিন্তু ভুলে আইডি কার্ড বাড়িতে রেখে আসায় তিনি ওই বাসে না উঠে বাড়ি চলে যান। পরে অন্য বাসে যাওয়ার সময় বাসের চালক-হেলপার ও তাদের সহযোগীরা শিউলিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশটি বাওয়ার কুমারজানি এলাকায় ফেলে যায়।
গত ২১ জুলাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকায় আসছিলেন। বাসটি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে যানজটে পড়ে। বাসযাত্রী পায়েল বাস থেকে নিচে নামেন। জট ছাড়তেই বাস দ্রুত টান দিলে পায়েল বাসের দরজার সাথে জোরে ধাক্কা খান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার পায়েল মারা গেছেন ভেবে পায়েলকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঘটনার ব্যাপারে ওই বাসের চালক ও হেলপার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
গত ২৪ জুলাই রাজধানীতে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে। সুমাইয়া আক্তার মালিহা নামের ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী শাজাহানপুরের একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। স্কুলের এক শিক্ষিকার মানসিক চাপের কারণে ওই কিশোরী আত্মহননের পথ বেছে নেয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এভাবেই একের পর এক ঘটছে নৃশংস ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মানবাধিকার কর্মী-সবাইকেই এ বিষয়গুলো ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকেই বলেছেন, আগে এরূপ ঘটনা ঘটেনি এখন যা ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে মানুষের মমত্ববোধের অভাব। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, সহনশীলতা, মমত্ববোধ কমছে। যে কারণে এরূপ ঘটনা ঘটছে। মানুষ নৃশংস অপরাধ করার আগে ভাবছে না। এ বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারলে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/337335/