৩০ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:২১

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেতে ‘ঘুষ’!

চৌগাছায় তালিকা নিয়ে ধূম্রজাল

দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তার পাশে চার শতক জমিতে ঝুপড়ি ঘরে ইয়াকুব আলীর পরিবারের বসবাস। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ইয়াকুব। তার পক্ষে এর চেয়ে ভালো আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভ নয়। আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-খাতের একটি ঘর জুটবে তার কপালে। সে আশায় গুড়েবালি। গ্রামের কয়েক যুবক এসে ইয়াকুবকে জানাল, ঘর মিলতে পারে, তবে তালিকায় নাম উঠাতে ১২ হাজার টাকা ঘুষ লাগবে। দিতে হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। এদিকে বাড়ি বরাদ্দে কারও কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও ইবাদত হোসেন।
শেষতক ঘুষ দিতে পারেননি ইয়াকুব, তাই ঘরও মিলছে না। ইয়াকুব যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের মাধবপুরপাড়ার বাসিন্দা। শুধু ইয়াকুব নন, তার মতো অনেকেই ঘুষ দিতে না পারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেতে তালিকায় নাম উঠাতে পারেননি বলে জানা গেছে। যারা ঘুষ দিয়েছেন তাদেরই বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। রোববার পর্যন্ত উপকারভোগী ৫৫০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘জমি আছে ঘর নেই, তার জমিতে গৃহ নির্মাণ উপ-খাত’-এ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দফায় যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ৫৫১টি গৃহ নির্মাণ বাবদ সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ মে ২৫০টি গৃহ নির্মাণ বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ ও ৪ জুন ৩০০টি গৃহ নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। একেকটি ঘরের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে ১৫ ফুট। টিনের ছাউনি, বেড়া ও মেঝে ইটের গাঁথুনিসহ প্রতিটি ঘর নির্মাণ বাবদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রোববার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপকারভোগী ৫৫০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আর ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত সব গৃহ নির্মাণকাজও শেষ হয়নি। উপকারভোগীর তালিকা তৈরি ও গৃহ নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়ে খোদ চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় অভিযোগ করেন, ‘বাড়ি নির্মাণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নিচ্ছেন। যারা ঘুষ দিয়েছেন তাদেরই বাড়ি দিচ্ছেন।’ এ নিয়ে সভায় বাকবিতণ্ডা হয়েছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে অপর এক প্রতিনিধি জানান, যারা টাকা দিয়েছেন তাদের নামেই বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। বঞ্চিত অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা (জনপ্রতিনিধিরা) তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই তার কিছু লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেই মূলত উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হয়। চৌগাছা উপজেলায় ৫৫১টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। যারা বাড়ি পাননি, তারা পর্যায়ক্রমে পাবেন। যেমন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আড়াইশ’ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৫৭টি বাড়ির। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। কারও কাছে চাইওনি। যদি কেউ আমার নামে টাকা তোলে, তারা বাটপাড়। কেউ টাকা চাইলে আমাকে জানাবেন।’

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/75360/