২৯ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:৩৮

মন্ত্রিপাড়া-ধানমন্ডিতে মশার উপদ্রব বেশি


বাড়িতেই ডেঙ্গুর চাষ!

রাজধানীতে আবারো মশার উপদ্রব বেড়েছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা কোনো কাজে আসছে না। দিনে রাতে সমানতালে মশার উপদ্রব চলছে। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ সিটির ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা ও মন্ত্রীপাড়া এলাকার ৪৫ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। আর পুরো দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বাহিত এডিস মশার লার্ভা রয়েছে প্রায় সাড়ে আট শতাংশ বাড়িতে।
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। বাসাবাড়ি থেকে অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার অত্যাচার চলছে। মশারি, কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট, ¯েপ্র কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সুযোগ পেলেই কামড় বসিয়ে দিচ্ছে মশা। দিনে রাতে সব সময়ই মশার যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বর্তমানে বর্ষা মওসুম চলায় মশার উপদ্রবের মাত্রা বেড়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছরই বাজেট বাড়াচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। প্রতি বছরই মশার যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। শুধু মশার কামড় নয়, এর সাথে নানা রোগব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। গত বছর ডেঙ্গুর সাথে চিকুনগুনিয়া নামে মারাত্মক একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষকে ভুগতে হয়েছে। অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এ বছরও আবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ইতোমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এ কারণে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে জানা যায়, সিটি করপোরেশন ড্রেনে ও উড়ে যাওয়া মশা মারতে ওষুধ প্রয়োগ করলেও এডিস নামক যে মশার কারণে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সমাধান দিতে পারছে না তারা। কারণ নগরবাসীর নিজেদের বাড়িতেই এ মশার জন্ম হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মশক কর্মীরা এ মশা মারতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নিয়ে থাকে। আর এ পানি জমে থাকে বাড়ির পানির ড্রাম, ফুলের টব, মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, পরিত্যক্ত কলসি, বালতি, বোতল, কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা ও পুকুরে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি।
নগরীতে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জরিপ চালিয়েছে। গত ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সংস্থাটির পাঁচটি অঞ্চলের ৫৭টি ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে প্রায় সাড়ে আট শতাংশ বাড়িতে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ নম্বর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৩৬ শতাংশ বাড়িতে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, জরিপকালে ১৯ হাজার ৫৪২টি বাড়ির মধ্যে এক হাজার ৬৭০টি বাড়ির এক হাজার ৭৫৪টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অঞ্চল-১ এর সাতটি ওয়ার্ডের দুই হাজার ৫৯৯টি বাড়ির মধ্যে ৯৩৮টি বাড়ির ৯৬১টি স্থানে লার্ভা পাওয়া গেছে যা জরিপ পরিচালিত বাড়ির ৩৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। অঞ্চল-২ এর ১২টি ওয়ার্ডের চার হাজার ৩৪৪টি বাড়ি পরিদর্শন করে ১৭৮টি বাড়ির ১৭৮টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে যা পরিদর্শিত বাড়ির ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।

অঞ্চল-৩ এর ১২টি ওয়ার্ডের চার হাজার ৬৯৩টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২৭৫টি বাড়ির ৩২৩টি স্থানে লার্ভা পাওয়া যায় যা মোট পরিদর্শিত বাড়ির ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অঞ্চল-৪ এর ১১টি ওয়ার্ডের তিন হাজার ৪০৬টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৬৯টি বাড়ির ৮২টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় যা পরিদর্শিত বাড়ির ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অঞ্চল-৫ এর ১৫টি ওয়ার্ডের চার হাজার ৫০০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২১০টি বাড়ির ২১০টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে যা পরিদর্শিত বাড়ির ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

অভিযানকালে দেখা গেছে, লার্ভা প্রাপ্ত বাড়ির পানির ড্রাম, ফুলের টব, ঘরের আশপাশে পড়ে থাকা মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, পরিত্যক্ত কলসি, বালতি, বোতল, কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা ও পুকুরে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা রয়েছে।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপ থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সম্প্রতি স্থানীয় কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিন বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনকালে এসব মশার লার্ভা পায় এবং সেগুলো ধ্বংসের ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাশাপাশি নগরবাসীকে সচেতন করতে এক লাখ সাড়ে ২৫ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়।

এদিকে মশার লার্ভা শনাক্তকরণ ও ধ্বংসে গতকাল থেকে আবারো নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ডিএসসিসি। রাজধানীর বীর উত্তম সিআর দত্ত সড়কের কাঁঠালবাগান ঢালে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি বলেন, ডিএসসিসির অঞ্চল -১ এর ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা ও মন্ত্রীপাড়া এলাকার ৪৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকার প্রায় প্রতি তিন বাড়ির একটিতে আমরা মশার লার্ভা পেয়েছি যা খুবই উদ্বেগজনক। এ কারণে আমরা এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসকরণে আবারও কর্মসূচি নিয়েছি। এতে অঞ্চল-১ কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে অঞ্চল ২, ৩, ৪ ও ৫ এলাকার অবস্থা ভালো আছে। হিসাব অনুযায়ী এই এলাকার বাড়িগুলোর অবস্থা অতটা উদ্বেগজনক নয়। এ সময় মেয়র তার সংস্থার মতো ঢাকার আশপাশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও এক সাথে এ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/337052