২৮ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১১:১২

ঢাকায় ডেঙ্গু আতঙ্ক

রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে সাতজনের মৃত্যু হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত এই বছর মারা গেছেন আটজন। মৃতের তালিকায় দুই বছরের কম বয়সের ছোট শিশু, তরুণ-তরুণী, গৃহবধূ এমনকি চিকিৎসকও রয়েছেন। জুলাই ও জুন মাসে সাড়ে ৮শ’ নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২ জন রোগী।
সবমিলিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের ৫৭ জন রোগী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৬শে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট ৯৫৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশি রোগী। এই হাসপাতালে সাত জন চিকিৎসাধীন। অন্য হাসপাতালের মধ্যে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তিন জন, পপুলারে দুই জন রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, এ বছর জুলাই মাসে বৃষ্টি একটু বেশি হয়েছে। এ কারণে মশার উপদ্রুবও বেশি। মূলত জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই চার মাস ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি নয়। তবে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও গত বছরের চেয়ে বেশি। মানুষকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, পানি যাতে কোথাও জমে না থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাননি। যখন তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তখন অনেক বিলম্ব হয়েছে।

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা করিয়েও তাদের মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। শুধু তাই নয়, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মৃতদের অনেকেই এর আগেও এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসক কিংবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। জ্বর হলে নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না, তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বের করতে পারবেন। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয় তা প্রায় সবার জানা। ডেঙ্গু জ্বর হলে তীব্র জ্বর, মাংসপেশী ও হাড়ে ব্যথা হয়। এছাড়া কোথায় কোথায় ডেঙ্গু মশার জন্ম হয়, তা-ও সবার জানা বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।

কিন্তু সব জেনেও অনেকেই অসচেতন। অনেকে নিজ বাড়ির আঙিনায়, ফুলের টব, ফ্রিজ ও এসিতে জমে থাকা পানি না ফেলে জমিয়ে রাখেন। তাই সেখানে এডিস মশা জন্মে। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৫শে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট ৯৫৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে জানুয়ারিতে ২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে সাত জন, মার্চে পাঁচ জন, এপ্রিলে ১৪, মে মাসে ৩৫, জুনে ২৫৭ ও ২৬শে জুলাই পর্যন্ত ৫৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে মোট আট জন মারা গেছেন। মৃতরা হলেন- নার্গিস বেগম (৪৩), ফারজানা আক্তার (৩৪), রোজলিন বৈদ্য (৩১), সেজুতি (২৬), আরইয়ান (১ বছর ৭ মাস), হিমু (৮), তাহমিদ (৯) ও ডা. ফয়সাল বিল্লাহ (২৭)। গত বছর মারা গেছেন ছয় জন।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=127910