২৮ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১১:০২

রিপ্লেসমেন্ট ১৫ শতাংশ করার দাবি

নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না ৫ হাজার লোক

সরকার হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আট শতাংশ করার পরও প্রায় পাঁচ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ২৭ জুলাই থেকে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের বহু টিকিট অবিক্রীত রয়েছে। এ সঙ্কট কাটাতে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) ১৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে হজযাত্রীদের কল্যাণে গঠিত তিনটি সংগঠন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রথম দফায় চার শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয় সরকার। এরপর সম্প্রতি আরো অতিরিক্ত চার শতাংশ বাড়িয়ে মোট আট শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল হজযাত্রীদের কল্যাণে গঠিত তিনটি সংগঠন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় এ আট শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হলেও আরো প্রায় পাঁচ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি থেকে যাবে। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ, হাব ওলামা সোসাইটি ও হজ গাইড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি যৌথভাবে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তৃতায় বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, গত বছর সরকার ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দিয়েছিল। চলতি বছরে এখনো প্রায় পাঁচ হাজার হজযাত্রীর সম্পূর্ণ কাজ শেষ করার পরেও হজে যেতে পারছেন না। ২৭ জুলাই থেকে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের বহু টিকিট অবিক্রীত আছে। এ কারণে আমরা গত বছরের মতো ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আগামীকাল রোববারের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
প্রতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়ে ড. নাসের বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীরা প্রায় এক থেকে দেড় বছর আগে নিবন্ধিত হয়। এই দেড় বছরে অনেক হজ গমনে ইচ্ছুক মারা যান, কিংবা অসুস্থ হন অথবা আর্থিকভাবে সঙ্গতি হারিয়ে ফেলেন।

রিপ্লেসমেন্টের আর্থিক অনিয়ম হলে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো হজ এজেন্সি যদি সরকারের সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকার চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে রিপ্লেসমেন্ট করে তাহলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া রিপ্লেসমেন্ট করা হাজী এবং ইনকামিং হাজী উভয়ের কাছ থেকে যদি কোনো হজ এজেন্সি অর্থ গ্রহণ করে তাহলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হার ওলামা সোসাইটির সহসভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ও মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন, অর্থসচিব আলহাজ জাহিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নুর আহম্মদ, বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুল বাতেন, হজ গাইড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি আলহাজ হারুন-উর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো: রাকিব প্রমুখ।

হজে অনিয়মের জন্য সরকারের নীতিমালা লঙ্ঘনকে দায়ী করে ড. নাসের বলেন, ২০১৮ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ১নং প্যাকেজ তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা এবং ২নং প্যাকেজ তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা। একইভাবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালার ৭.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সর্বোচ্চ দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। তবে হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন খরচ কোনো অবস্থাতেই সরকার ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যের কম হবে না। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বৈষম্যের নীতিমালা চালু করে, যা হজ ব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কান হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যের কম টাকা নিতে পারবে না। কিন্তু এটি মানা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের একটি ভাউচার ছিল ২৮ হাজার টাকা। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় আরেকটি ভাউচারে তিন লাখ তিন হাজার ৩৫৯ টাকা ব্যাংকে জমা প্রদান করেছে। এতে প্যাকেজের সব টাকা জমা হয়েছে। অপর দিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথমে একটি ভাউচারে ৩০ হাজার ৭৫২ টাকায় প্রাক-নিবন্ধন হয়েছেন। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় আরেকটি ভাউচারের মাধ্যমে বেসরকারি হজযাত্রীরা মাত্র এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধিত হয়েছেন। এভাবে প্যাকেজের পুরো টাকা জমা না দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা হজযাত্রীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিলেও হজ এজেন্সীকে জমা দেন দুই লাখ ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাকি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে থেকে যায়। পরে হাজীরা সৌদি আরবে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হন। এ কারণে সরকারি ব্যবস্থার মতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া একই রকম করার দাবি জানান তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/336760