২৭ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৯

পণ্য ছয় মাসের বেশি গুদামে রাখা যাবে না

সরকারি কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ছয় মাসের বেশি সময় গুদামে ফেলে রাখা যাবে না। পণ্য বিক্রিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ নির্দেশ দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোনো সরকারি কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বন্ধ কারখানা চালু করা হবে। এসব কারখানা মুনাফায় আনতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ চিঠিতে।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ সামনে রেখে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি সরকারি কারাখানা লোকসান থেকে বের করে মুনাফায় আনতে সুপারিশ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কাছে জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে সরকারি কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ন্যাশনাল প্রডাকটিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণে, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে এবং বিএসটিআইয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি কারখানায় বাধ্যতামূলক কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বয়লার নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাঁচামালের সংকট দূর করতে উপযুক্ত মৌসুমে পর্যাপ্ত কাঁচামাল কিনে গুদামে রেখে বছরের অন্যান্য সময়ে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহারে জোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য মৌসুমের আগেই প্রস্তুতি গ্রহণে সুপারিশ করা হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাঁচামালের সংকট দূর করতে আখের পাশাপাশি চিনি আমদানিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিনিকলে আখ বিক্রিতে চাষিদের উৎসাহ দিতে এবং চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের বরাদ্দ অর্থ নিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কারখানার অব্যবহৃত জমিতে নতুন শিল্প গড়ে তুলতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। এসব জমিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অটোমোবাইল শিল্প নির্মাণে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বিসিকের অব্যবহৃত প্লটে শিল্প নির্মাণ এবং কাঁচমালের সহজপ্রাপ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে উদ্যোগের কথা উল্লেখ আছে। বান্দরবানে ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও হিমাগার স্থাপন, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীতে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণের পক্ষে প্রতিবেদনে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রংপুর জেলায় কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। শিল্পসচিব মো. আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুরনো শিল্প এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন ধারার শিল্প স্থাপনে সরকার কাজ করছে।’

________________________________________
বান্দরবানে ফল ও সবজি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ও হিমাগার স্থাপন, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীতে
আম প্রক্রিয়াকরণ কারখানা নির্মাণের নির্দেশ
________________________________________
প্রতিবেদনে ক্রেতা সংগ্রহে কারখানার নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে পণ্য প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। কারখানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না দিতে, ব্যবস্থাপনা কৌশলের উন্নয়নে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পরিবেশবান্ধব কারখানায় পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো সরকারি কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। অতীতে অনেক সরকারি কারখানা বেসরকারি খাতে পানির দরে বিক্রি করা হয়েছে। এসব কারখানার বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেকার হয়ে কষ্টে থেকেছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি কারখানার লোকসানের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে কারখানাগুলো মুনাফায় আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি কারখানার লোকসান কাটিয়ে ওঠার জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধারা চলমান থাকবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতের শিল্পায়নের ধারা গতিশীল করতে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এ জন্য পরিকল্পনা করে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, এতে সরকারি কারখানার লোকসানের ধারা থেকে বের হয়ে মুনাফায় আসা সম্ভব হবে।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2018/07/27/662563