২৭ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৫

টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ চরমে

গুলিস্তান থেকে ইত্তেফাক মোড় যেতে বঙ্গভবনসংলগ্ন দক্ষিণ প্রান্তের ফাইওভারের নিচের সড়কটি গত চার দিন ধরেই ডুবে রয়েছে। সড়কের পানি ফুটপাথ উপচে চলে গছে বঙ্গভবনের মধ্যেও। কিন্তু পানি অপসারণে কোনো উদ্যোগ নেই। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ময়লা কাদাপানির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে নিরূপায় পথচারীদের। প্রতিদিন উঁচু-নিচু এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে রিকশা, মোটরসাইকেল থেকে বাস পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ হয়ে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত সড়কটিতে দীর্ঘ দিন থেকে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এজন্য রাস্তার মাঝখানে কিছু অংশ ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তার দুই পাশের লেন সরু হয়ে গেছে। ড্রেনগুলোও বন্ধ প্রায়। এ কারণে বৃষ্টি হলেও সড়কে হাঁটু পানি জমে যাচ্ছে। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ছে সব ধরনের যানবাহন। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে যানজট-জলজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
মওসুমি বায়ুর প্রভাবে গত চার দিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। কখনো মুষলধারে আবার কখনো ঝিরিঝিরি ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। এতে গরমের তীব্রতা কমেছে। তবে অতিমাত্রায় বৃষ্টি নতুন ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। কিন্তু স্কুল-কলেজ, চাকরি-ব্যবসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা নগরীতে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন তারা পড়ছেন বিপাকে। বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হচ্ছে। কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সপ্তাহের শেষ দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসবে। আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মওসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। মওসুমি বায়ুর অ ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এজন্য দেশে চার দিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এত বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ সব সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

বঙ্গভবনসংলগ্ন দক্ষিণ প্রান্তের ফাইওভারের নিচের সড়কটিতে গত বছর বৃষ্টি হলেও কোমর সমান পানি জমে যেত। এ বছর বর্ষার প্রথম দিকের বৃষ্টিপাতে এ সড়কে তেমন পানি জমতে দেখা যায়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ওই সড়কে ইট-বালু ফেলে উঁচু করেছে। এরপর সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলার কারণে উঁচু-নিচু ঢেউয়ের মতো সৃষ্টি হয়। গত চার দিনের বৃষ্টিতে ওই সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যাচ্ছে। ফুটপাথের ওপরও পানি উঠে যাচ্ছে। পানির মধ্য দিয়ে কোনো বাস, প্রাইভেট কার চললেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে বঙ্গভনের দেয়ালে। একেতো হাঁটু সমান পানি তার ওপর উঁচু-নিচু রাস্তা হওয়ায় রিকশা-মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ সব ধরনের গণপরিবহন বিপাকে পড়ছে। গত কয়েক দিনের মতো গতকালও ওই সড়কে রিকশা উল্টে পড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া দুপুরের দিকে গাবতলী থেকে সায়েদাবাদগামী একটি বাস আটকে যাওয়ায় যাত্রীদের পানির মধ্যেই নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। ঠেলে বাসটি ওঠাতে অনেক বেগ পেতে হয় বাসের কর্মীদের। বাস আটকে যাওয়ায় যানজটে ভোগান্তির শিকার হয় হাজার হাজার মানুষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জমান নয়া দিগন্তকে জানান, শুধু সড়ক নয়, বঙ্গভবনেও পানি ঢুকে যাচ্ছে। এজন্য এ সড়কটি নিয়ে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আশা করা যায় আমরা একটি সমাধান করতে পারবো।

মিরপুরে দীর্ঘ দিন থেকে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। বৃষ্টি হলেই ওই সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। গতকালের বৃষ্টিতেও পানি থই থই করতে থাকে। সড়ক থেকে ফুটপাথ সর্বত্রই পানি আর পানি। এর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। তারপরও মানুষকে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। সড়কে কোনো বাস চলাচল করলেও ঢেউ আছড়ে পড়ছে ফুটপাথ থেকে দোকানের মধ্যেও। বাসযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। জনজীবন চরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

ঢাকা-মাওয়া চার লেনে উন্নিতকরণের কাজ চলায় জুরাইন থেকে পোস্তাগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক কাজ চলছে। এ কারণে ওই সড়কে কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। এ ছাড়া সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। বাস-ট্রাকও চলছে অতি সতর্কতায়। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীসহ সড়কটি ব্যবহারকারীদের। দীর্ঘ দিন থেকেই সড়কটির এ অবস্থা হলেও চার লেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হওয়ার আশা নেই এলাকাবাসীর।

এ ছাড়া গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে মতিঝিল, গুলিস্তান, আরামবাগ, কমলাপুর, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার হলেও তাদের তৎপরতা খুব কমই লক্ষ করা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তবে জনগণের চাহিদা অনুসারে সিটি করপোরেশন কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/336474